বাঙালি ঐতিহ্যের সমুজ্জ্বল এক নাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাঙালিকে এই ঐতিহাসিক স্থান থেকেই স্বাধীনতার মন্ত্র শুনিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই এখানেই স্থাপিত হয়েছে স্বাধীনতা জাদুঘর।
২০১৬ সালের ২৬ মার্চ জাদুঘরটি যাত্রা শুরু করে। ১৯৯৭ সালে পাবলিক ওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট (পিডব্লিউডি) স্বাধীনতা জাদুঘর ও স্বাধীনতাস্তম্ভ কমপ্লেক্স তৈরির একটি নকশা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় মেরিনা তাবাসসুম এবং কাশেফ মাহবুব চৌধুরী দম্পতির নকশা। সে মোতাবেকই এই দুই স্থপতির ডিজাইনে ১৯৯৮ সালে শুরু হয় স্বাধীনতা জাদুঘর ও স্বাধীনতা কমপ্লেক্সের কাজ।

স্বাধীনতা কমপ্লেক্সের কাজ শেষ করতে সময় লেগেছে ১৬ বছর। স্বাধীনতা জাদুঘরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এর স্থাপত্যশৈলী। পাতালে অবস্থিত জাদুঘরটির বিশাল এলাকাজুড়ে ফাঁকা জায়গা। প্লাজা চত্বরে টেরাকোটা ম্যুরালের নিচের অংশে এ জাদুঘরের অবস্থান। ওপর থেকে নিচে প্রসারিত হয়েছে জাদুঘরের প্রবেশপথ। প্রবেশের সময় রঙিন কাচের ভেতর থেকে আসা হালকা সবুজ আলো দেখে মনে হবে যেন কোনো গহিন সুড়ঙ্গ পথে যাওয়া হচ্ছে। পুরো জায়গায় স্থানে স্থানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন সময়ের ছবি। জাদুঘরের মাঝখানে রয়েছে একটি ফোয়ারা। এটি নেমে এসেছে মাটির উপরিভাগ থেকে।

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রায় সম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই টেরাকোটা ম্যুরালের মধ্য দিয়ে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্লাজা চত্বরের পূর্ব পাশের দেয়ালে তৈরি করা হয়েছে এ ম্যুরাল। ম্যুরালের প্রথম অংশে দৃশ্যমান হবে বাঙালির চিরচেনা সেই লাইন :
ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা।
এ যেন গ্রামবাংলার সেই চিরায়ত রূপ।
পর্যায়ক্রমে এ ম্যুরালে স্থান পেয়েছে তেভাগা আন্দোলনের চিত্র।
এ ম্যুরালের রূপকার পাঁচ বিখ্যাত শিল্পী- মোহাম্মদ ইউনুস, মুকুল মকসুউদ্দীন, শিশির ভট্টাচার্য, ইফতেখারউদ্দিন আহমেদ এবং শ্যামল চৌধুরী।
এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্লাজা চত্বরে বসানো হয়েছে গ্যাস টাওয়ার। ইস্পাতের কাঠামোর ওপর ১৫০ ফুট উচ্চতা আর ১৬ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৬ ফুট প্রস্থের এ টাওয়ারটির আলোকছটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। টাওয়ারের উপরিভাগে রয়েছে স্বচ্ছ কাচ। দিনের বেলায় এতে সূর্যের আলোর প্রতিসরণ ও প্রতিফলন হয়। রাতে আলোকছটা তৈরির জন্য রয়েছে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা।
স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের অংশ হিসাবে গাছ কাটার পরিকল্পনা করা হয়। তবে এসব গাছ কাটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশও হয়েছে। তাদের দাবি, ঢাকা শহরে সবুজ স্থান প্রয়োজনের তুলনায় কম, এসব গাছ কেটে ঢাকার সবুজ প্রকৃতি নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নতুন রূপ দিতে কাজ করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। উদ্যানের ভেতর অনেক জায়গায় বর্ষার সময় জমে থাকে পানি। অনেক বছর হয়ে গেছে গাছের গোড়ায় মাটি দেওয়া হয় না, তাই দেওয়া হচ্ছে নতুন মাটি। অন্যদিকে ছোট-বড় লেকগুলোকে সাজানো হচ্ছে নানান রকম সাজে। লাল রংয়ের ইট দিয়ে তৈরি হচ্ছে লেকের ঢাল। এতে যেমন লেরে পরিবেশ সুন্দর হচ্ছে, দর্শনার্থীরাও বেড়াতে এসে উদ্যানের রূপ দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংস্কারকাজে কর্মরত শ্রমিক মিজান বলেন, রমজানের ঈদের পর থেকে আমরা এখানে নিয়মিত কাজ করছি। কাজ শেষ করতে আর বেশ কিছুদিন লাগবে। কাজ পুরোপুরি শেষ হলে দর্শনার্থীরা এখানে এসে আনন্দ উপভোগ করবেন।
উদ্যানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী রনি-পিয়ালা দম্পতি বলেন, ‘এর আগেও আমরা উদ্যানে এসেছি কিন্তু তখন উদ্যানের বাজে পরিবেশ ছিল। পরিবার নিয়ে হাঁটার উপায় ছিল না। বর্তমানে পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে। আগে এখানে বাজে লোকের আনাগোনা বেশি ছিল। বর্তমানে উদ্যানের পরিবেশ অনেক সুন্দর হয়েছে। তবে এর পরিবেশ আরো উন্নত করতে হবে।’
বর্তমানে উদ্যানের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তেমন একটা খারাপ নয়, তারপরেও দর্শনার্থীদের কথা চিন্তা করে এ উদ্যানের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো বাড়াতে হবে। তাহলে দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসে আরো ভালো কিছু উপভোগ করবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :