খালে ময়লা ফেললে আইনের আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম।বুধবার (১৫ মে ২০২৪) দুপুরে রাজধানীর গুলশান-২ ডিএনসিসির নগর ভবনের সামনে সপ্তাহব্যাপী চলমান বর্জ্য প্রদর্শনী পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন তিনি।
জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন খালে, ড্রেনে ও যত্রতত্র ফেলে দেওয়া বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য সংগ্রহ করে সপ্তাহব্যাপী বর্জ্য প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ডিএনসিসি। গুলশান-২ ডিএনসিসি`র নগর ভবনের সামনের রাস্তায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। ১১ মে থেকে শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী ১৭ মে পর্যন্ত চলবে।
এসময় বর্জ্যের প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন তথ্য ও সম্প্রচার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
প্রদর্শনী পরিদর্শন শেষে ডিএনসিসি মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, `এই শহরে আমরা থাকি, এই শহরেই আমরা উপার্জন করি। এই শহরে আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা করে। অথচ কিভাবে আমরা এই শহরের খালে ফ্রিজ, লেপ, তোশক, সোফা ফেলে দেই। আমাদের এই মানসিকতা চেঞ্জ করতে হবে। ড্রেনে প্লাস্টিকের বোতলে ভর্তি। এসবের ফলে একটু বৃষ্টি হলে রাস্তায় পানি জমে যাচ্ছে। কিন্তু পানি কেন জমে যাচ্ছে এটা কেউ চিন্তা করছি না। সিটি কর্পোরেশনের এসটিএস (সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন) রয়েছে। এই ধরনের কঠিন বর্জ্য এসটিএসে রেখে গেলে আমাদের কর্মীরা সেগুলো ল্যান্ডফিলে নিয়ে যাবে। আসলে ইচ্ছাটা থাকতে হবে।`
তিনি বলেন, `বর্জ্য-প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে, যাতে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতার সৃষ্টি হয়। জনগণ যেন বুঝতে পারে কি ধরনের বর্জ্য ড্রেনে ও খালে ফেলে পরিবেশ দূষণ করছে এই জন্যই এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছি। এই উদ্যোগ বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করছে।`
তিনি আরও বলেন, `জনগণ নির্বিচারে ময়লা ফেলা বন্ধ না করলে শুধু সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে খালগুলো পরিষ্কার রাখা সম্ভব না। আমাদেরও কিন্তু নিজ নিজ দায়িত্ব আছে। দায়িত্বটা কি? নির্দিষ্ট ময়লা নির্দিষ্ট জায়গা যেন ফেলি। নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলা, নিজের শহরকে পরিষ্কার রাখা এই নাগরিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। না হলে কিন্তু অল্প বৃষ্টিতেই আমাদের ড্রেনগুলো আটকে যাচ্ছে, খালগুলো আটকে যাচ্ছে। একটা হলো মানুষের পয়ঃবর্জ্য। আরেকটি হলো কঠিন বর্জ্য। তরল ও কঠিন দুই ধরনের ময়লা ফেলে মানুষ খাল ও ড্রেন দূষণ করছে৷ অনেক ভবনের পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ সরাসরি সারফেস ড্রেনে ও খালে দিয়ে রেখেছে। কঠিন বর্জ্যগুলো রাতের অন্ধকারে খালে ফেলে দিচ্ছে। এই ধরনের অপরাধ ছাড় দেওয়া হবে না। খালে ময়লা ফেললে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।`
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, `ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা সারা বছরই কাজ করছি। এ বছর বর্ষার আগেই ৫৪টি ওয়ার্ডে মাসব্যাপী জনসচেতনতামূলক প্রচার অভিযান পরিচালনা করছি। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রত্যেক ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। যেহেতু এডিস মশা জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে জন্মায় তাই জনগণকে সচেতন হতে হবে। নিয়মিত লার্ভা ধ্বংস করা, সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং এডিসের লার্ভা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।`
এসময় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, `ঢাকায় অল্প বৃষ্টি হলে অনেক সময় পানি জমে যায়। এসব এলাকায় ড্রেনেজ লাইনে বিভিন্ন ধরণের বোতল, চিপস এর প্যাকেটসহ অন্যান্য বর্জ্য পড়ে থাকে। খালের মধ্যে জাজিম, সোফা, ফ্রিজ, পানি পরিশোধকসহ বড় বড় পরিত্যক্ত জিনিসপত্র পড়ে থাকে। তার কারণে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এসব বর্জ্য যাতে যত্রতত্র ফেলা না হয়, সে জন্য ব্যাপকভাবে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।`
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, `সরকার তার কাজ করবে কিন্তু নাগরিককে তার দায়িত্বের জায়গা থেকে ভূমিকা রাখতে হবে। নাগরিক অধিকার যেমন সংরক্ষণের বিষয় আছে, তার দায়িত্ব পালনেরও বিষয় আছে। নাগরিক তার দায়িত্বের জায়গা থেকে নিজ দায়িত্ব পালন করলে সরকার আর নাগরিকের মধ্যে একটা অংশীদারিত্ব তৈরি হয়। তখন সমস্যাগুলো অনেক সহজে দূর হয়।
বর্জ্য প্রদর্শনীতে অন্যান্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগে. জেনা. মোঃ মঈন উদ্দিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগে. জেনা. ইমরুল কায়েস চৌধুরী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান, ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ মফিজুর রহমান, সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর আমেনা বেগম এবং নিলুফার ইয়াসমিন ইতি প্রমুখ।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :