"চাঁদামুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, নিরাপদ যাত্রী বান্ধব ও সুশৃঙ্খল সড়ক ব্যবস্থাপনা শীর্ষক মুক্ত আলোচনা ও মতবিনিময় সভায়” অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৩রা সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এই আলোচনা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির আহবায়ক কমিটির আহবায়ক মোঃ সাইফুল আলম বলেন, ২০০৮ পরবর্তী ২০২৪, ৫ই আগষ্ট পর্যন্ত সড়ক পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি, দখল, সন্ত্রাস, নিয়ম বহির্ভূত এক নৈরাজ্যকর অবস্থা বিরাজমান ছিল। ঢাকা থেকে শুরু করে সারাদেশে মালিক সমিতি, বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানী, বাস টার্মিনাল এবং শ্রমিক ইউনিয়ন দখল করে এককভাবে আওয়ামী দলীয় নেতৃত্ব কায়েম করে চাঁদাবাজির স্বর্গরাজ্য কায়েম করে। সরকার বিরোধী আন্দোলন দমনে দলীয় কর্মকান্ডে মালিক-শ্রমিকদেরকে দলীয় কর্মীর মত ব্যবহার করেন।
তিনি বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র জনতার নেতৃত্বে এক দফার মধ্য দিয়ে স্বৈর-শাসক শেখ হাসিনার যেমন পতন হয়েছে একই সময়ে পরিবহন সেক্টরে দীর্ঘদিনের মালিক/শ্রমিক স্বার্থ পরিপন্থি কর্মকান্ডে চাঁদাবাজির সাথে যারা জড়িত ছিল, তারা পরিবহন সেক্টর পরিত্যক্ত রেখে, দেশের বাহিরে পালিয়ে যায় এবং বাকিরা আত্মগোপনে চলে যায়। এতে সাধারন জনগন দূর্ভোগে পরে এবং সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় মালিক, চালক ও শ্রমিকদের সমন্বয়ে পরিবহন খাত সুশৃংখল ও সচল রাখার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। কার্যক্রম গতিশীল ও চলমান রাখার জন্য ঢাকা সড়কের সাধারন মালিক ও কাউন্সিলরবৃন্দ গঠনতন্ত্র মোতাবেক গত ১৪/৮/২০২৪ইং তারিখে "তলবী সভা" আহবান করে সাধারন মালিকগন প্রায় দেড় যুগ নিগৃহীত- নিপীড়নের অবসান ঘটিয়ে মোঃ সাইফুল আলম-কে আহবায়ক করে ৩৫ (পঁয়ত্রিশ) সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করে পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্য্যক্রম পরিচালনা করার দায়িত্ব অর্পন করা হয়।
সাইফুল আলম বলেন, পরবর্তীতে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নব-গঠিত আহবায়ক কমিটি সড়ক পরিবহনে শৃংখলা আনার লক্ষ্যে নিম্নলিখিত কর্মসূচী গ্রহন করি।
১। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতৃত্বে যানবাহনে চাঁদাবাজি বন্ধ ও যাত্রীবান্ধব পরিবহন সেবা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
২। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও নিরাপদ সড়ক গড়ার লক্ষ্যে কাজ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিশেষ করে মহিলা যাত্রীদের, শিশু ও প্রতিবন্ধি ও বয়জ্যেষ্ঠ যাত্রীদের প্রতি বিশেষ যত্নশীল হওয়ার উদ্যোগ গ্রহন করা হইবে বলিয়া সিদ্ধান্ত হয়।
৩। সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার জন্য মালিক/শ্রমিক ও প্রশাসনের সহযোগিতায় চেষ্টা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
৪। মালিক-শ্রমিক-পুলিশ প্রশাসন সর্বোপরি ছাত্র-জনতাকে সম্পৃক্ত করে যাত্রী জনকল্যানমূখী নিরাপদ সড়ক গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সকল টার্মিনালে চালক-শ্রমিকদের নিয়মিত কাউন্সিলিং/মোটিভেশন সভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
৫। ট্রাফিক বিভাগের সাথে সমন্বয় করে কমিউনিটি ট্রাফিক নিয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন টার্মিনাল সম্মুখসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যানজট নিরসনে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
৬। সকল প্রকার চাঁদা সম্পূর্ণরূপে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বন্ধ ঘোষনা করা হইয়াছে।
সকলে মিলে বিগত দিনের বিরাজমান অনিয়ম দূর করে জনবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে চাই। সর্বোপরি আধুনিক নিরাপদ জন কল্যানমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারের সাথে একীভূত হয়ে দেশ গড়ায় অংশীদার হতে চাই। ভবিষ্যতে যাত্রীবান্ধব, নিরাপদ ও চাঁদামুক্ত সড়ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিয়ে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর তিনি বলেন, সরকারি নির্ধারিত ভাড়াই ঠিক আছে। এর বেশি কেউ নিলেই তা অপরাধ বলে গণ্য হবে। আপাতত আমাদের সমিতির সকল সদস্যদের চাঁদা নেওয়া বন্ধ রয়েছে। সরকারি সকল নির্দেশনা মেনে আমরা মালিক সমিতি কাজ করব। তেলের দাম ভাড়লেই যে গাড়ি ভাড়া বাড়বে বিষয়টি এরও কম না, গাড়ির টায়ার সহ অন্যান্য যন্ত্রাংশের উপরও নির্ভর করে।
ছাত্রদের এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, ফিটনেস বিহীন গাড়ি চলাচল, ভাড়া নিয়ে দ্বন্দ্ব, আগে যাওয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতা সহ একাধিক সমস্যা রয়েছে এ কথাটি সত্য, এই বিষয়ে আমরা কাজ করব। তাছাড়া এই বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব রয়েছে, তাদের তা মানতে হবে, ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব ঠিক মত পালন করতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এই সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব।
অবৈধ সকল গাড়ি বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়ে তারা বলেন, এই গাড়ি গুলো বন্ধ হলে সড়কে অনেক শৃঙ্খলা চলে আসবে, যানজট নিরসন হবে। ব্যাটারী চালিত সকল গাড়ি মূল সড়কে চলাচল বন্ধ করতে হবে। লাইসেন্সের বিষয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। অবৈধ লাইসেন্স ধারীদের চিহ্নিত করে, লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। এতে অনেক দূর্ঘটনা রোধ হবে।
সভায় ট্রাফিক বিভাগের এডিশনাল ডিআইজি মইনুল বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে যারা আইন ভঙ্গ করবে তাদের শাস্তি দেওয়া। নির্ধারিত রুটের বাইরে কেউ গাড়ি চালাবেন না, লেন মেনে গাড়ি চালাতে হবে। কোন কাউন্টারের সামনে গাড়ি দার করিয়ে রাখবেন না। ফিটনেস বিহীন গাড়ি রাস্তায় নামাবেন না। ট্রাফিক সভ্যতা একটি জাতির প্রতিক, তাই আমাদের সকল নিয়ম কানুন মানতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
এ সময় জয়েন্ট কনভেনার এম এ বাতেন, রফিকুল হোসেন কাজল, আক্তারুজ্জামান বাবুল, এ এম এ আহমেদ খোকন, আলমগীর কবির, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, রিপন মোল্লা সহ কনভেনিং কমিটির সকল সদস্য এবং ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির অনেক বাস মালিক উপস্থিত ছিলেন।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :