রাজধানীর পুরান ঢাকার সিক্কাটুলী লেন এলাকা। ওই এলাকার বাংলাদেশ মাঠের ( সাবেক পাকিস্তান মাঠ) পাশে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ আউয়াল হোসেনের কার্যালয়। বাংলাদেশ মাঠের একটি রাস্তা ধরে কাউন্সিলর কার্যালয়ে যেতে হয়। কিন্তু ওই রাস্তায় রয়েছে পানি, রাস্তায় রয়েছে বেশ কিছু গর্ত। এ কারণে কার্যালয়টিতে যেতে কষ্ট হচ্ছে।
রোববার কার্যালয়টির ফটকে তালা ঝুলতে দেখা যায়। স্থানীয় মুরব্বী ও ৩৩ নং ওয়ার্ড সিক্কাটুলীর বাসিন্দা হাজী ফারুক হোসেন জানান, গত ৫ আগস্টের পর থেকেই কার্যালয়টি বন্ধ। ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কেউই কার্যালয়ে আসছেন না। কিন্তু সেবা নিতে আসা অনেকেই কার্যালয়ে গিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
শুধু ৩৩ নং ওয়ার্ড নয় ঢাকা দক্ষিন সিটির ৭৫ টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অফিসের অধিকাংশেরই একই চিত্র।
হাজী ফারুক হোসেন বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটির জায়গা, ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়ি-মার্কেট, ওয়াকফ এস্টেট, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও দখল করার অভিযোগ রয়েছে ৩৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। একারণে ৫ আগস্ট থেকে লাপাত্তা তিনি। প্রতিদিন বিভিন্ন সেবা নিতে এসে খালি হাতে ফিরছেন অত্র এলাকার বাসিন্দারা। কর্মস্থলে অনুপুস্থিত কাউন্সিলরদের জায়গায় অন্য কাউকে দায়িত্ব দিয়ে নাগরিক সেবা দেয়ার দাবি জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে বেশ কিুছ নাগরিক সেবা দেওয়া হয়। এগুলো হলো- জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধন, পারিবারিক সমস্যা, নাগরিক, চারিত্রিক, ওয়ারিশ সনদ, , অবিবাহিত, ২য় বিয়েতে আবদ্ধ না হওয়া, ভাতার সত্যায়িত সনদ, প্রত্যয়নপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকায় যাচাইকারী হিসেবে স্বাক্ষর,টিসিবির পণ্য বিতরণে সহায়তা, মশক ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজের তদারকির কাজ করা হয়। কাউন্সিলর অনুপস্থিত থাকায় এসকল সেবা থেকে বঞ্চিত নগরবাসী।
সিক্কাটুলী পার্ক এলাকার বাসিন্দা ইউসুফ হোসেন বলেন, কাউন্সিলর আওলাদ কারণে–অকারণে সাধারণ মানুষকে নির্যাতন চালিয়েছেন। দুই হাতে চাঁদা তুলেছেন। এমনকি নিজ দল আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন করেছেন। মানুষের রোষানল থেকে থেকে বাঁচতেই তিনি লাপাত্তা হয়েছেন।
সেবা নিতে রোববার দুপুরে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ আউয়াল হোসেনের কার্যালয়ে এসেছিলেন চান খা মসজিদ এলাকার বাসিন্দা টিটু বেপারি। তিনি জানান, তাঁর ছেলের বয়স দুই মাস। চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে হবে। বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাসপোর্ট লাগব। তাই জন্মনিবন্ধন করা প্রয়োজন। ছেলের জন্মনিবন্ধন করাতে এখন পর্যন্ত মোট আট দিন এলাম। কিন্তু এক দিনও কার্যালয়টি খোলা দেখতে পাইনি। কবে চালু হবে, এ তথ্যও কেউ দিতে পারছেন না।
৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ আউয়াল হোসেন ও ওয়ার্ড সচিব মনির হোসেনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে কিন্তু দুজনের নম্বরই বন্ধ। ওই এলাকার একাধিক বাসিন্দা বলেন, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ আউয়াল হোসেন এলাকায় চাদাবাজি, কিশোর গ্যাং দিয়ে নির্যাতন করেছে । অভিযোগ রয়েছে মাদককারবারীদের কাছ থেকে কমিশন খেতেন। গণধোলাই থেকে বাঁচতেই তিনি আসাধা ত্মগোপনে চলে গেছেন।
ঢাকা দক্ষিন সিটির ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিল ওমর আব্দাল আজিজ চকবাজারেরর কার্যালয়ও বন্ধ দেখা গেছে। ৫ আগস্ট ওই কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়। ওয়ার্ডের সচিব সামি বলেন, কম্পিউটার ও প্রিন্টার লুট হয়েছে অথবা পুড়ে গেছে। আসবাবপত্র ও কাগজপত্র সব পুড়ে গেছে। প্রতিদিন বিভিন্ন সেবার জন্য অনেকেই আসছেন। কিন্তু কাউকে সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। কাউন্সিলর কোথায় আছেন, তা জানি না। ঢাকা দক্ষিন সিটির ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিল ওমর আব্দাল আজিজের মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলে নাম্বার বন্ধ পাওয়া গেছে।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির কাউন্সিলররা না থাকায় মশার ওষুধ ছিটানো ও পরিচ্ছন্ন কাজেও কর্মীরা গাফিলতি করতে দেখা গেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২৫,৩৩,৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি ওয়ার্ডে মশকনিধন কর্মী ৬জন। এর মধ্যে তিনজন কর্মী কাজ করছেন, বাকি তিনজন কাজে যাননি। এঅবস্থা দক্ষিণ সিটির বেশির ভাগ ওয়ার্ডের একই অবস্থা। দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তা ইচ্ছেমতো দায়িত্ব পালন করছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৭৫ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৬৬ জনেরর এখনো কোনো হদিস নেই। এসব ওয়ার্ডের কোনো কোনো কাউন্সিলরের কার্যালয় ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে ওয়ার্ড সচিবরা পর্যন্ত ভয়ে অফিসে আসছেন না।
এবিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, কর্মস্থলে ফেরার জন্য কাউন্সিলরদের একটা সময় দেওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে যাঁরা ফিরে আসবেন, তাঁদের একাধিক ওয়ার্ডের দায়িত্ব দিয়ে নাগরিক সেবার কাজ চালিয়ে যাবেন। এটি স্থায়ী সমাধান নয়, এবিষয়ে সরকার বিকল্প একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
এবিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ঢাকা দক্ষিণের যেসব ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একেবারেই অনুপস্থিত থাকছেন, সেসব জায়গায় আঞ্চলিক কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। আমরা নাগরিক সেবা সচল রাখতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আশা করি দ্রুত সমস্যা কাটিয়ে উঠবো।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :