রোহিঙ্গা সঙ্কট প্রলম্বিত হওয়ায় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ অন্যদিকে সরে যাওয়ায় রোহিঙ্গাদের জন্য আর্থিক সহায়তা কমেছে এবং তাদের জন্য পরিচালিত কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে আর্থিক সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। রোববার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল আলোচনায় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) এ তথ্য জানান মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
অরবিস ইন্টারন্যাশনাল এবং দ্য ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেস আয়োজিত "মানবিক পরিস্থিতে চক্ষুসেবার সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি: পাঠ ও সেরা অনুশীলন" শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দেখাশোনা করা কেবল বাংলাদেশের দায়িত্ব নয়।
তিনি বলেন, “আমরা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছি। আমরা তাদের পক্ষে কাজ করছি। কিন্তু এখন তারা আমাদের ভুলে যাচ্ছে।”
মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১৬০ থেকে কমে এখন ১২০-এ দাঁড়িয়েছে এবং আর্থিক সংকটের কারণে বর্তমানে চালু স্বাস্থকেন্দ্রগুলোও তাদের সেবা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিয়ে বাধ্য হয়েছে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করছে এমন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও আর্থিক সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হচ্ছে।
অফথালমোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওএসবি) প্রেসিডেন্ট এবং ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর দ্য প্রিভেনশন অব ব্লাইন্ডনেস (আইএপিবি) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের কান্ট্রি চেয়ার অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করার সময় বলেন, চোখের যত্ন এখন আর কেবল স্বাস্থ্য সমস্যা নয়; এটি এখন উন্নয়ন সমস্যা।
তিনি সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে চোখের যত্নকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব তুলে ধরেন। জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক খায়ের আহমেদ চৌধুরী আলোচনায় জানান, জুলাই আন্দোলনে যাদের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের জন্য বাংলাদেশ নেপাল থেকে কর্নিয়া আনছে।
তিনি বলেন, বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইটে রোববার (২০ অক্টোবর) বিকেলের মধ্যে দুই রোগীর কর্নিয়া ঢাকায় পৌঁছানোর কথা। খায়ের আহমেদ বলেন, আন্দোলনের সময় গুলি ও অন্যান্য আঘাতের কারণে অনেকের চোখে সমস্যা হয়েছে।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. শামসুদ্দোজা চোখের যত্নসহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সাক্ষরতার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান, যাতে মানুষ তাদের স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো বুঝতে পারে এবং চিকিৎসা গ্রহণের চেষ্টা করে।
অনেক চক্ষু রোগীর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনতে কর্নিয়া দানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, সচেতনতা মানুষকে কর্নিয়া দান করতে উৎসাহিত করতে পারে।স্বাগত বক্তব্যে দ্য ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এর সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, স্বাস্থ্য- সম্পর্কিত সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোকে গণমাধ্যমের সহযোগিতায় চক্ষু স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে।
চোখের যত্ন সম্পর্কে সচেতনতার অভাবের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি পাঠ্যপুস্তকে চোখের যত্ন বিষয়ক পাঠ অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. মুনির আহমেদ ধন্যবাদ জ্ঞাপনের সময় বলেন, বক্তারা যে সুপারিশ ও পরামর্শ দিয়েছেন তা তার প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য অংশীজনদের আগামী দিনে
পথচলায় ব্যাপকভাবে সাহায্য করবে। ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের অনলাইন ও ডিজিটাল কনটেন্টের প্রধান শিয়াবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
রোহিঙ্গা বিষয়ক কর্মসূচিতে অরবিসের অংশীদারদের প্রতিনিধি, রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করছে এমন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীরা চক্ষুস্বাস্থ্য খাতের চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জগুলি কাটিয়ে ওঠার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন এবং বিভিন্ন পরামর্শ দেন, যা রোহিঙ্গা-সম্পর্কিত কর্মসূচিকে একীভূত ও ব্যাপক করতে সাহায্য করতে পারে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের সাবেক পরিচালক (ডিজিএইচএস) ডা. খালেদা ইসলাম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ পরিচালক ডা. মঞ্জর কাদির আহমেদ, সিবিএম গ্লোবাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান, সেন্টার ফর ডিসঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্ট (সিডিডি)- এর নির্বাহী পরিচালক এএইচএম নোমান খান, অরবিস ইন্টারন্যাশনালের অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর মো.ইকবাল হোসেন এবং প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড গ্রান্টস ম্যানেজমেন্টের সিনিয়র ম্যানেজার এসএম মনিরুল আহসান, দ্য ফ্রেড হোলস ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ম্যানেজার মুসাব্বির আলম, কক্সবাজার বায়তুশ শরফ হাসপাতালের ব্যবস্থাপক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ, অ্যালায়েন্স ফর কোঅপারেশন অ্যান্ড লিগ্যাল এইড বাংলাদেশের কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান এবং সাংবাদিক নুরুল ইসলাম হাসিব ও সারোয়ার আজম মানিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :