বনানী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু ও থানা ছাত্রদলের সহ সভাপতি সাব্বিরের বিরুদ্ধে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে সাথে একটি ছবির উপর ভিত্তি করে মহাখালী এলাকার বাসিন্দা সিকিউরিটি কোম্পানির মালিক ব্যবসায়ী কাওসার আহমেদ বিজয়কে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি ও আটকের মাধ্যমে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে বিজয়ের ছোট ভাই সোহেল জানায়, ‘বনানী থানার স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু ও থানা ছাত্রদলের সহ সভাপতি সাব্বির আমার বড় ভাইকে সরকার পতনের পর থেকেই মামলাসংক্রান্ত বিষয়ে হুমকি প্রধান করেন ও মামলা থেকে বাঁচতে হলে ৩ লক্ষ টাকা দিতে হবে। টাকা না দিলে ছাত্রদের উপর হামলা ও রাজনৈতিক কয়েকটি মামলায় আসামি করার হুমকি-ধমকি প্রধান করা হয়।’
সোহেল আরো জানায়, ‘গত ৭ই নভেম্বর সন্ধ্যায় আমার বড় ভাই কাওসার আহমেদ বিজয় মহাখালী আমতলী বনভবন এর পিছনে পিন্টিং ইমেজ নামে একটি প্রিন্টিং প্রেসের দোকানে ব্যবসায়িক বিল প্যাড বানানোর জন্য যায়। কিছুক্ষণ পর উক্ত দোকানে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বনানী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের ব্যানার বানাতে যায় সেখানেই বিজয় ভাইকে দেখে আটকে রেখে ফোন দিয়ে থানা ছাত্রদলের সহ সভাপতি সাব্বিরও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের ডাকা হয় তারপর ছাত্রদল নেতা ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীরা এসে আমার ভাই বিজয়কে আটকে রাখে এবং বলে তোর বিরুদ্ধে মামলা আছে বনানী থানায় ফোন দেওয়া হয়েছে পুলিশ আসছে এবং তোর বাসায় ফোন দিয়ে লোকজন আসতে বল, তারপর বিজয় ভাই আমাকে ফোন দেয় তখন আমি আমার বন্ধু ও এলাকার এক বড় ভাইকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসি। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পাই ভাইকে ১৫-২০ জন নেতাকর্মী আটকে রেখেছে এবং তাদেরকে বলে বিজয় আমার বড় ভাই তখন নেতাকর্মীরা বলে মিশু ভাই প্রিন্টিংএর দোকান আছে সেখানে গিয়ে কথা বলো।’
‘প্রিন্টিং প্রেসে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশুকে সোহেল জানায় তার ভাই আওয়ামী লীগের কোন পদে নেই ইভেন ম্যানেজমেন্ট এর কারণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে তার ভাইয়ের কাছ থেকে একটি গাড়ি ভাড়া নিয়েছিল সে সুবাদেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে জ্যোতির সাথে পরিচয় হয় ও ছবি তুলেছিলেন।’
সোহেল মিশুকে আরও জানান, সে একটি অনলাইন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করে এবং শুরু থেকেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে একজন অংশগ্রহণকারী এবং পুলিশের গুলিতে আহত এবং মেডিকেল সার্টিফিকেট ও পরিচয় পত্র দেখায়।
সে সব কথা তোয়াক্কা না করে দাম্ভিকতার সাথে মিশু বলে, ১৭ বছর দল ক্ষমতায় ছিল না অনেক মামলা খেয়েছি এলাকা ছাড়া ছিলাম দলের পক্ষ থেকে আমাদেরকে বনানী থানাধীন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সমস্যা নাই তোমার ভাইকে নিয়ে যাও নেতাকর্মীরা আটক করেছে বুঝতেই তো পারো।
দলীয় প্রয়োজনে নেতাকর্মীদের চালাতে হয় একটা খরচ আছে যেমন দেখো আগামীকাল (৮ই নভেম্বর) জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে প্রোগ্রাম আছে সেখানে ব্যানার বানাতে হবে কর্মীদের নিয়ে যেতে হয় গাড়ি ভাড়া আছে একটা কাজ করো কিছু খরচ দিয়ে তোমার ভাইকে নিয়ে যাও। আর তা না হলে এরচেয়ে কঠিন অবস্থা অপেক্ষা করছে।
সোহেল জানান, ‘মিশুর এমন কথায় তিনি বড় ভাইয়ের বিষয়টি নিয়ে একটু ঘাবড়ে যায় এবং বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলে বাসায় গিয়ে মায়ের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে আসে এবং তার ভাইয়ের বন্ধুর মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা দেয় দেওয়ার পর রেগে যায় ও বলে আমি কি এই টাকা খাই নাকি বললাম যে নেতাকর্মীদের দিতে হবে ৫০ হাজার টাকার কম হবে না শুধু তোমাদের জন্য অন্য কেউ হলে তিন লাখ টাকা দেওয়া লাগতো। তারপর ঘন্টাখানেক কথা বলার পরও ৫০ হাজার টাকার কমে রাজি না হওয়ায় আমি আমার বিকাশ থেকে ১৩ হাজার টাকা ও ভাইয়ের বন্ধুর কাছ থেকে ১৭ হাজার টাকা নিয়ে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে বড় ভাই বিজয়কে বাসায় নিয়ে আসি ‘
উক্ত কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসীর মধ্যে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। তারা বলছেন, বিএনপি সরকার গঠনের আগেই বিএনপি নেতাকর্মীরা যা শুরু করছেন, ক্ষমতায় এলে না জানি কী করবে।
এমত অবস্থায় এলাকাবাসীর জানায়, এ সকল চাঁদাবাজ দখলবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে দেশের বৃহৎ এ রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়ে যাবে।
একজন প্রবীণ বিএনপি নেতা বলেন, বিএনপি`র ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই একটি পক্ষ দলের নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি করছে। শুরু থেকেই এ বিষয়ে বিএনপি`র অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। দলের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে নেতাকর্মী নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যেন কেউ এসবের সঙ্গে যুক্ত না হয়।
বিএনপির নাম ব্যবহার করে কেউ চাঁদা চাইলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।
অন্যদিকে, বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে কেউ যদি চাঁদাবাজিসহ অন্য কোনো অন্যায়ের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাহলে তথ্য-প্রমাণসহ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত পাঁচই আগস্ট সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা, লুটপাট ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠতে দেখা গেছে। এসব ঘটনায় গত দুই মাসে বেশকিছু জেলায় শতাধিক নেতাকর্মীকে শোকজ নোটিশ প্রদান, দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি, এমনকি বহিষ্কারও করেছে বিএনপি।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :