বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস এর উদ্যোগে এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর সহযোগিতায় “৪র্থ শিল্প বিপ্লব: শ্রমিক ও কর্মসংস্থানের ওপর প্রভাব এবং অন্তর্ভুক্তিমুলক নীতির প্রয়োজনীয়তা” শীর্ষক দুই দিনব্যাপী এক সিম্পোজিয়ামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের কারণে যে সমস্ত শ্রমিক স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকির মুখে পড়বে তাদের সুরক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন ও পুণঃকর্মসংস্থানে সরকারের নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে এবং এই প্রক্রিয়ার সাথে শ্রমিক, ট্রেড ইউনিয়ন, মালিকপক্ষ, ও নাগরিক সমাজকে যুক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দক্ষতা উন্নয়ন একটি গুরুত্বপুর্ণ ইস্যু, যা বাস্তবায়নে প্রয়োজন কৌশলগত পরিকল্পনা এবং এর সাফল্যের জন্য আরও প্রয়োজন স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শক্তিশালী নেটওয়ার্কিং।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি আজ শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪ রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু সাঈদ মো: কামরুজ্জামান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষক অনন্য রায়হান। সভাপতিত্ব করেন বিলস ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ মজিবুর রহমান ভূঞাঁ। সূচনা বক্তব্য রাখেন বিলস এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতানউদ্দিন আহম্মদ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এনসিসিডব্লিউ এর চেয়ারম্যান বাদল খান, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, জনতা ব্যাংকের সাবেক মহাব্যবস্থাপক ও আইটি বিশেষজ্ঞ চয়নুল হক চয়ন, বিলস এর ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ও আমিরুল হক আমিন সহ সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, জাতীয় পর্যায়ের ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও মিডিয়াকর্মীবৃন্দ।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, বিশ্ব সভ্যতার সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকেও ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে প্রবেশ করতে হবে, সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার এখনই সময়। ২য় ও ৩য় শিল্প বিপ্লবেও কাঠামোগত পরিবর্তন হয়েছে এবং যারাই দ্রুত প্রস্তুতি নিতে পেরেছেন তারাই প্রয়োজনীয় সাফল্য পেয়েছেন। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের পথে বাংলাদেশ বর্তমানে ১৯৬০ সালের জাপান এবং ২০০০ সালের চীনের মতো অবস্থানে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের কারণে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে যে ঝুঁকি তৈরী হবে তা প্রশমনে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখনই সময়। কাঠামোগত পরিবর্তন ও সুবিধার কারণে যে সমস্ত শ্রমিকের ঝরে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেয়ার সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার ও মালিকের পাশাপাশি শ্রমিকদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে তাদের জ্ঞান ও দক্ষতার উন্নয়ন ঘটিয়ে তাদের সামনে এগিয়ে নিতে ট্রেড ইউনিয়নকে নিয়মিত কাজ করতে হবে।
অনন্য রায়হান উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ কল সেন্টারে কাজ করছে। এ ছাড়া গিগ অর্থনীতি ও প্ল্যাটফর্ম অর্থনীতির আরও ল্ক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরী হয়েছে। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শিল্পক্ষেত্রে আসছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। তবে অটোমেশনের কারণে নারী শ্রমিকদের ঝরে পড়া আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে মালিক ও শ্রমিকের সম্পর্ক নতুন মোড় নিচ্ছে। কর্মসংস্থানের কিছু ক্ষেত্রে দক্ষতার পুণর্গঠন সম্ভব হবে না বিধায় নতুন দক্ষতা উন্নয়নের প্রয়োজন হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২০২২ সালে যন্ত্র ও মানুষের কাজের অনুপাত যেখানে ছিল ৪৪% ও ৬৬% , যেখানে ২০৩৫ সালে এটি ৫৭% ও ৪৩% হবে। ২০৪১ সালে তৈরী পোশাক শিল্পে আশংকাজনকভাবে শ্রমিক হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তবে নতুন ধরণের কিছু কাজও তৈরী হবে। কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজতাকরণের কাজ, ঔষধ শিল্প এবং স্বাস্থক্ষেত্রেও শ্রমিক উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়ার আশংকা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সমস্ত কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকের কর্মঘন্টা ও উদ্বেগ বৃদ্ধি পাবে। এ সমস্ত কাজের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার তুলনায় দক্ষতার ওপর বেশী গুরুত্ব দেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
আবু সাঈদ মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, শ্রমিকের সঠিক সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের নৈতিক মানদন্ড নির্ধারণ করতে হবে। এ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রাকে বিবেচনায় নিয়েও সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
উল্লেখ্য, দুই দিনব্যাপী এই সিম্পোজিয়ামের উদ্দেশ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ৪র্থ শিল্প বিপ্লব এবং প্ল্যাটফর্ম অর্থনীতির প্রভাব সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান, ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, এবং এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ প্রণয়ন করা যা ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারণ এবং প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :