ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকেরা দাবি আদায়ে সকাল থেকে রাজধানীর মহাখালী রেলগেটে অবস্থান নিয়ে রেলসহ সব ধরনের যানচলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রেখেছেন। তাদের অনড় অবস্থানে স্থবির হয়ে গেছে মহাখালীসহ আশপাশের কয়েক কিলোমিটার সড়ক। সব যানবাহন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে মহাখালী রেলগেটসহ আশপাশের এলাকায় সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ রেখেছে। এদিকে রেলগেটে রিকশা চালকরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পাশেই অবস্থান নিয়েছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা, অবস্থান নিয়েছে পুলিশও।
এর আগে গত ১৯ নভেম্বর (মঙ্গলবার) ঢাকা মহানগর এলাকায় তিনদিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। এরপর থেকেই ঢাকায় বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলন করছে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকরা।
রাজধানীর বিমান বন্দর থেকে স্ত্রীসহ পঙ্গু হাসপাতালে যাচ্ছিলেন নোমান নামের একজন। কিন্তু মহাখালীর রাস্তা বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তিনি। এ সময় মহাখালীর রাস্তা বন্ধ থাকায় অনেক দূর পর্যন্ত যানজট লেগে আছে। যে কারণে বাধ্য হয়ে রেডিসন ব্লুর সামনে থেকে হেঁটে মহাখালী পর্যন্ত এলাম অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে। এখন জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত গিয়ে যদি কোনো যানবাহন পাই, তাহলে পঙ্গু হাসপাতালে যাব। রিকশা চালকরা রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করার কারণে হাজার হাজার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
বাড্ডা থেকে ছেড়ে আসা আলিফ বাসের চালক রহিম মিয়া বলেন,
‘সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে মহাখালীর কাঁচাবাজারের সামনে আটকা আছি। সামনেও যেতে পারছি না, পেছনেও ঘোরাতে পারছি না। যাত্রী সব নেমে গেলেও ফাঁকা বাস নিয়েই এখানে বসে আছি। রিকশা চালকরা আন্দোলন করছে রাস্তা বন্ধ করে, যে কারণে মহাখালী থেকে চারিদিকে বিশাল যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সব দিকের রাস্তা স্থবির হয়ে আছে। আমাদের সারাদিনের ব্যবসাই শেষ। অনেক টাকা জমা খরচ দিয়ে বাস বের করতে হয়, কিন্তু আজ সারাদিন এখানেই আটকে থাকতে হলো।’ হাজার হাজার মানুষ পায়ে হেঁটে রাস্তাগুলো দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।
ফার্মগেট থেকে মহাখালী পর্যন্ত হেঁটে আসা পথচারীরা বলেন, কয়েক ঘণ্টা যানজটে বসেছিলাম, পরে বাধ্য হয়ে হাঁটতে শুরু করেছি। ফার্মগেট থেকে মহাখালী পর্যন্ত এলাম। আমার ছোট ভাই বিদেশ থেকে এয়ারপোর্টে এসে নামবে, সে কারণেই বাধ্য হয়ে এয়ারপোর্টের দিকে হাঁটতে শুরু করেছি। রিকশা চালকদের আন্দোলনে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুব ভোড়ান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। যাদের কাজ আছে তারা মাইলের পর মাইলে হেঁটে যাচ্ছে। এমন সব ভোগান্তি থেকে আমরা অবসান চাই।
তেজগাঁও বেগুনবাড়ি থেকে আরিফুর রহমান তার বাবাকে নিয়ে এসেছেন মেট্রোপলিটন হাসপাতালে। কিন্তু নাবিস্কো এসে আটকে যান জ্যামে। এরপরে কোনরকম কোলে-পিঠে করে নিয়ে আসেন মেট্রোপলিটন হাসপাতালের গেটে। সেখানে থেকে স্ট্রেচারে করে হাসপাতালে ভিতরে প্রবেশ করানোর আগেই জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েন তার বাবা। এ সময় নিরুপায় আরিফুর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, ‘এজন্যই কি দেশটা স্বাধীন করেছি। আজ আমার বাবাকে নিয়ে বিপদে পড়তে হবে।’
মহাখালীতে অবস্থান নেওয়া ব্যাটারিচালিত এক রিকশা চালক বলেন,
‘আমরা আমাদের দাবি আদায়ে রাজপথে অবস্থান নিয়েছি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাস্তা ছাড়ব না। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমরাও তাদের সাথে রাস্তায় আন্দোলন করেছি। আজ তারা ক্ষমতার বসে আমাদেরকেই রাস্তাছাড়া করতে চাইছে। আমাদের বিষয়ও তো ভাবতে হবে। আমাদের জীবিকা নষ্ট হয়ে যাবে, আমরা কর্মহীন হয়ে যাব, এটা তো মেনে নেওয়া যায় না। তাই আমরা বাধ্য হয়ে দাবি আদায়ে রাস্তায় নেমেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা সড়ক ছাড়ব না।’
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :