রাজধানী ঢাকার সৌন্দর্য বর্ধন, পরিবেশ দূষণ রোধ, সড়ক দুর্ঘটনা ও যাত্রী হয়রানী বন্ধের পাশাপাশি সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে অন্তবর্তী সরকার ঢাকা মহানগরীর ২০ বছরের পুরনো লক্কড়-ঝক্কর বাস উচ্ছেদে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ায় এহেন পদক্ষেপ ঠেকাতে ফিটনেসবিহীন পুরনো লক্কড়-ঝক্কর বাসগুলো রাতারাতি গোলাপি রং ধারণ করে চালাতে গিয়ে নগরজুড়ে প্রতিদিন গণপরিবহন সংকটে ভয়াবহ যাত্রী দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ যাত্রী কল্যাণ সমিতির।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে নগরীর ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী এমন অভিযোগ করেন।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, রাজধানী ঢাকার বিশৃঙ্খল গণপরিবহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, লক্কড়-ঝক্কর বাস উচ্ছেদ করে মানসম্মত উন্নত গণপরিবহন নামাতে অর্ন্তবর্তী সরকার ইত্যিমধ্যে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। গত ১৯ ডিসেম্বর সরকারের চার উপদেষ্ঠা, পুলিশ, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ’সহ বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় স্টেকহোল্ডারদের সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্ঠা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ঢাকা মহানগরীর ২০ বছরের পুরোনো বাস মে মাসের মধ্যে উচ্ছেদ করার নির্দেশনা দেন। আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ২৫ ফেব্রুয়ারী থেকে ঢাকার সবরুট বিলুপ্ত করে ৯টি রুটে ৯ কালারের উন্নত বাস পরিসেবা চালুর নির্দেশনা দেন। এমন নির্দেশনা অপব্যবহার করে নতুন উন্নত বাসের বদলে ২০ থেকে ৪০ বছর যাবত নগরীতে চলাচলরত মেয়াদোর্ত্তীণ লক্কড়-ঝক্কর ফিটনেসবিহীন বাস রাতারাতি গোলাপি কালার ধারণ করে চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এসব বাস ইত্যিমধ্যে মুখ তুবড়ে পরা ই-টিকিটিং পদ্ধতিতে বাস কাউন্টারে ভাড়ার টাকা আদায় করে চালক-সহকারীর দৈনিক হারে ট্রিপভিত্তিক মজুরী নির্ধারণ ও সাপ্তাহিক, পাক্ষিক হারে মালিকের জমা বাস মালিক সমিতি কর্তৃক প্রদানের সিদ্ধান্ত হয় বলে পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে দৈনিক চুক্তিতে চলা বাসগুলোর মালিকেরা সমিতি থেকে সঠিক হিসাবে তাদের বাসগুলোর জমাটাকা পাওয়া নিয়ে বিশ্বাস-অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে চুক্তিতে চলা বাসের আয় থেকে কম মজুরী নির্ধারণ করায় চালক ও সহকারীর মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এতে করে প্রান্তিক বিভিন্ন বাসের মালিক ও চালক-সহকারীরা তাদের কিছু কিছু বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে। বাসের ভাড়া নির্ধারণের শর্ত লংঘন করে এহেন অব্যবস্থাপনায় গণপরিবহন সংকটে ভয়াবহ যাত্রী দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে নগরজুড়ে। এতে ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়ছেন প্রতিদিন নিয়মিত অফিসগামী যাত্রীরা। এমন সংকট নিরসনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ, ট্রাফিক বিভাগ ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কোনপ্রকার হস্তক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। সংকট নিরসনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করা হলে কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা ঢাকা মহানগরীর ২১টি পরিবহন কোম্পানীর গাড়ি ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে কাউন্টারভিত্তিক পরিচালনার কথা বলে সার্ভিস শুরু করলেও এমন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহনের পূর্বে তারা অতীতের নেতৃবৃন্দের ধারাবাহিকতায় যাত্রী কল্যাণ সমিতিকে বিষয়টি অবহিত করেন নি। নগরীতে যেকোন উন্নত গণপরিবহন পরিসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ঢাকামেট্রো আরটিসির অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এক্ষেত্রে তা অনুসরন করেনি। ২৬১০টি বাসের কালার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিআরটিএ’র পূর্ব অনুমোদন নেননি। এসব বাসের তালিকা বিআরটিএ বা ট্রাফিক বিভাগ কারো কাছে পাওয়া যায়নি। যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এসব বাস-মিনিবাসের সিংহভাগই ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কর, অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নোংরা আর্বজনায় ভরপুর। কোন কোন বাসের পেছনে লাইট-ইন্ডিকেটর আর লুকিং গ্লাস নেই। আসনে দুই পা মেলে বসা যায় না। কোন কোন বাসের পাদানি, ধরার হ্যান্ডেল ভাঙ্গা। ময়লা-আবর্জনা, ছাড়পোকা-তেলাপোকায় ভরপুর। কোন কোন বাসের সিট তেল চিটচিটে। কোন বাসের আসনে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই। উপরন্তু কোন কোন পথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে এসব মেয়াদোর্ত্তীণ লক্কড়-ঝক্কর ফিটনেসবিহীন বাস উচ্ছেদ ঠেকাতে কেবলমাত্র উপরে গোলাপি রং ধারণ করেছে বলে পর্যবেক্ষণকালে অভিজ্ঞমহল মনে করেন। এমন পরিস্থিতিতে এসব মেয়াদোর্ত্তীণ ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কর বাস উচ্ছেদ করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে মালিক সমিতির পরিবর্তে একটি কোম্পানির আদলে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে রুট রেশনলাইজেশন পদ্ধতিতে কোরিডর ভিত্তিক চলাচল নিশ্চিত করে ৫,০০০ উন্নতমানের বাস নামানোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে গতকাল নগরজুড়ে সড়ক অবরোধ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের তা-বলিলায় ভয়াবহ যাত্রী দুর্ভোগ তৈরির জন্য বিআরটিএ’কে দায়ী করে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবী করেন। জনগণের অর্থে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারী সিএনজিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে মামলা রুজুর প্রজ্ঞাপন বাতিল করে অসহায় যাত্রীদের ভাড়া নৈরাজ্যকারী অটোরিকশা চালকদের হাতে তুলে দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি বিলুপ্তির দাবী করেন।
এতে আরো উপস্থিত ছিলেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি তাওহীদুল হক, যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্য মোঃ জিয়াউল হক চৌধুরী, সদস্য মোহাম্মদ আরিফ হোসেন প্রমুখ।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :