জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একীভূত করে প্রতি শলাকার সর্বনিম্ন খুচরা মূল্য ৯ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিকরা।
তাদের মতে, সিগারেটের দাম বাড়ানো হলে তরুণদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা হ্রাস পাবে এবং প্রায় ১৮ লাখ কিশোর-তরুণ নতুন করে ধূমপানে আসক্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। একই সঙ্গে, ২৪ লাখ ৪০ হাজারের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ধূমপান ছাড়তে উৎসাহিত হবেন। দীর্ঘমেয়াদে এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে প্রায় ১৭ লাখ ১৩ হাজার অকালে মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
এছাড়া, কর ও মূল্য বৃদ্ধি করা হলে সরকারের রাজস্ব আয় ৬৯,৩৫২ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে, যা বর্তমান তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি। বর্তমানে সিগারেটের উপর সম্পূরক শুল্ক ৬৭ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ১ শতাংশ নির্ধারিত রয়েছে। (সুত্রঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা)
মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রস্তাবনা: আজ মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে নারী মৈত্রী আয়োজিত “জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে তামাকপণ্যের উপর কার্যকর কর ও মূল্য বৃদ্ধি” শীর্ষক সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় এসব দাবি জানানো হয়।
নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলির সভাপতিত্বে সভায় সংগঠনের কার্যক্রম উপস্থাপন করেন প্রোজেক্ট কোঅর্ডিনেটর নাসরিন আকতার।
সভায় রিসোর্স পার্সন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রজ্ঞার হেড অফ প্রোগ্রামস মো. হাসান শাহারিয়ার। তিনি বলেন, নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটের দামের পার্থক্য কম থাকায় ভোক্তারা সহজেই এক স্তর থেকে অন্য স্তরে চলে যেতে পারেন। এই দুটি স্তরকে একীভূত করে মূল্য বৃদ্ধি করলে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠী ও তরুণ প্রজন্ম ধূমপান থেকে নিরুৎসাহিত হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সোহরাব হাসান, যুগ্ম সম্পাদক, প্রথম আলো, মোরশেদ নোমান, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, বাংলাদেশ ফার্স্ট, মো. জাহিদুল ইসলাম, নিউজ এডিটর, বাংলাদেশ টেলিভিশন, মীর মাসরুর জামান, সিএনই, চ্যানেল আই, জুলহাস আলম, ঢাকা ব্যুরো প্রধান, এপি (এসোসিয়েটেড প্রেস), শাহনাজ পলি, জয়েন্ট কনভেনার, মাদারস’ ফোরাম অ্যাগেইনস্ট টোব্যাকো, ড. খালেদা ইসলাম, আহ্বায়ক, তামাক বিরোধী শিক্ষক ফোরাম এবং পরিচালক, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শিবানী ভট্টাচার্য, আহ্বায়ক, তামাক বিরোধী মায়েদের ফোরাম এবং সাবেক অতিরিক্ত সচিব
সাংবাদিকরা তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি করে ধূমপানের হার কমানোর লক্ষ্যে।
সাংবাদিকরা প্রস্তাব দিয়েছেন- নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটের খুচরা মূল্য প্রতি ১০ শলাকার জন্য ৯০ টাকা, উচ্চ স্তরের সিগারেটের মূল্য ১৪০ টাকা, প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটের মূল্য ১৯০ টাকা, বিড়ির প্রতি শলাকার মূল্য কমপক্ষে ১ টাকা, গবেষণা অনুযায়ী, তামাক পণ্যের বিদ্যমান কর কাঠামো সংস্কার করা হলে ধূমপানের হার ১৫.১% থেকে ১৩.৩%-এ নেমে আসতে পারে। এর ফলে— ২৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান ছেড়ে দেবেন ১৮ লাখ কিশোর-তরুণ নতুন করে ধূমপানের অভ্যাস গড়ে তোলা থেকে বিরত থাকবে সরকার প্রায় ২০,০০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করতে পারবে এই উদ্যোগ জনস্বাস্থ্য ও জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মী ও সংগঠনসমূহ: সভায় তামাক বিরোধী তরুণ ফোরাম, গার্লস গাইডের সদস্যরা এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সিগারেটের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং তরুণদের ধূমপানের প্রবণতা কমানোর আহ্বান জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :