চট্টগ্রামে ব্রিটিশ আমলের সিআরবি বা সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং এলাকাজুড়ে শতবর্ষী গাছগাছালি, পিচঢালা আঁকাবাঁকা রাস্তা, ছোট-বড় পাহাড়-টিলা আর নজরকাড়া বাংলোগুলো মন জুড়িয়ে দেয় সব দর্শনার্থীর। এই প্রাকৃতিক পরিবেশকে বন্দরনগরীর ‘ফুসফুস’ নামে ডাকা হয়।
এ ফুসফুস ধ্বংসের অংশ হিসেবে এখানে একটি হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে ইউনাইটেড হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে সিআরবিতে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ নির্মাণের চূড়ান্ত করার খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম নগর ও বিভাগীয় নেতারা।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাবের চট্টগ্রাম শাখা জানিয়েছে, চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক প্রাকৃতিক ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক পরিবেশ, বন, পাহাড় ধ্বংস করে সিআরবিতে শুধু হাসপাতাল নয়, কোনো স্থাপনা না করার দাবি করে হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ও বিভিন্ন শিল্পের নামে পাহাড়, রেলওয়ের ভূমি দখলে ব্যবসায়ীদের ষড়যন্ত্র বন্ধ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রামের ফুসফুস ও বুকভরে নিঃশ্বাস নেয়ার স্থানটিকে ঐতিহ্য হিসাবে সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে অবিলম্বে এ ধরনের হটকারী সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন নেতারা।
গতকাল গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান, ক্যাব যুব গ্রুপের সভাপতি চৌধুরী কেএনএম রিয়াদ প্রমুখ।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, চট্টগ্রামে ঢাকার মতো রমনা পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন না থাকলেও হাজার বছরের গাছগাছালিতে আচ্ছাদিত নয়নাভিরাম এই উন্মুক্ত প্রাকৃতিক পরিসরটি নগরীর লাখ মানুষকে সতেজ শ্বাস নিতে সহায়তা করেছে। এ কারণে সংস্কৃতি অঙ্গন ও বিনোদনের অন্যতম তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে এই সিআরবি, যা চট্টগ্রামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে রয়েছে। কিন্তু হাসপাতাল করার মতো চট্টগ্রামে অনেক খালি জায়গা থাকার পরও সিআরবির প্রাকৃতিক পরিবেশকে ধ্বংস করে হাসপাতাল স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হলো তা কোনোভাবে বোধগম্য নয়।
বিবৃতিতে নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার ব্যবসায়ীদের শিল্প স্থাপনের নামে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ সরকারি ভূমি, পাহাড়, স্থাপনা নামমাত্র মূল্যে বরাদ্দ দিচ্ছে। এতে বাদ পড়ছে না পাহাড়, টিলা ও মানুষের শ্বাস নেয়ার স্থানটুকুও। সিআরবি চট্টগ্রামের কার্বন শোষণের প্রাকৃতিক কারখানা। হাসপাতাল করার জন্য চট্টগ্রামে অনেক জায়গা থাকলেও শতবর্ষী গাছ, পাখির কোলাহল, বসার জায়গা, হাঁটাহাঁটির পথ, প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে কংক্রিটের ভারী স্থাপনা নির্মাণের অনুমোদন খুবই দুঃখজনক। আর প্রকৃতি ধ্বংস করে হাসপাতাল কেন শহরের মাঝখানে স্থাপন করতে হবে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মতপ্রকাশ করেন তারা।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে মানুষের বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার সুযোগও ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। নির্বিচারে প্রকৃতি ধ্বংস, পাহাড় কাটা ও ধ্বংসের মহাযজ্ঞ চলছে চট্টগ্রামে। ইতিপূর্বে শিল্প স্থাপনের নামে বৃহৎ শিল্পগ্রুপ অনেক পাহাড় ও প্রাকৃতিক নৈসর্গিক স্থাপনা ধ্বংস করেছে। সার্কিট হাউস ধ্বংস করে শিশু পার্ক করা হয়েছে। সংস্কৃৃতি অংগনের ঐতিহাসিক স্থাপনা ডিসি হিলে এখন আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা যায় না। তাই বৃহৎ শিল্পগ্রুপের কংক্রিটের আগ্রাসন রোধে এখনই সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে নগরবাসীর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে সিআরবিতে হাসপাতাল স্থাপন থেকে সরে আসার আহ্বান জানান ক্যাব নেতারা।
একুশে সংবাদ/শর্মা/ব
আপনার মতামত লিখুন :