চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সব অক্সিজেন প্ল্যান্টে চলমান ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। শুক্রবার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামানের সঙ্গে বৈঠকের পর কর্মসূচি স্থগিত করে জাহাজ ভাঙা শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ)।
সভায় চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম শফিউল্লাহ, শিল্প পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সুলাইমান, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেনসহ বিএসবিআরএর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভার বিষয়ে ইউএনও মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, বিএসবিআরএর পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়, একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর কোমরে দড়ি বাঁধার মতো ঘটনা যাতে না ঘটে। উদ্যোক্তারা যাতে অসম্মানিত না হন বিষয়টি দেখতে হবে। জেলা প্রশাসক তাদের দাবির বিষয়ে যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন। এছাড়া আগামীকালের (শনিবার) মানববন্ধন কর্মসূচি স্থগিত করেছেন।
এর আগে ১৪ মার্চ সন্ধ্যায় সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের পরিচালক পারভেজ উদ্দিনকে নগরের জিইসি মোড় থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
আদালতে হাজির করানোর সময় পারভেজকে হ্যান্ডকাফ লাগানোর পাশাপাশি কোমরে দড়ি দিয়ে বাঁধার একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে। পরে ছবিটি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়। এদিন রাতেই বিষয়টি নজরে আসে চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সুলাইমানের। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যবসায়ীকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বে থাকা এসআই অরুন কান্তি দাশের কাছ থেকে কৈফিয়ত তলব করেন।
একই দিনে শিল্প পুলিশ চট্টগ্রাম ইউনিটের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশও জারি হয়। ওই আদেশে বলা হয়, অরুন কান্তি দাশ স্কটের ইনচার্জ ছিলেন। তিনি নিজের খেয়ালখুশি মতো একজন আসামিকে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে হাজির করেছেন। এতে করে জনসম্মুখে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এছাড়া এটি কর্তব্য কাজে অবহেলা, অদক্ষতা ও বিভাগীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধের শামিল। এ অবস্থায় তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা ৭ দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব না দিলে তার বিরুদ্ধে একতরফা বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আদেশে বলা হয়।
গত ৪ মার্চ সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কদমরসুল কেশবপুর এলাকার সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে সাতজন নিহত এবং ৩৩ জন আহত হয়। এ ঘটনায় ৬ মার্চ রাতে সীতাকুণ্ড থানায় মামলা দায়ের হয়। বিস্ফোরণে প্রাণ হারানো আব্দুল কাদের মিয়ার স্ত্রী রোকেয়া বেগম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
এতে আসামি করা সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের এমডি মো. মামুন উদ্দিন (৫৫), পরিচালক পারভেজ উদ্দিন (৪৮) ও আশরাফ উদ্দিন বাপ্পি (৪২), ম্যানেজার আব্দুল আলীম (৪৫), প্ল্যান্ট অপারেটর ইনচার্জ সামসুজ্জামান শিকদার (৬২), প্ল্যান্ট অপারেটর খুরশিদ আলম (৫০), সেলিম জাহান (৫৮), নির্বাহী পরিচালক মো. কামাল উদ্দিন, অ্যাডমিন অফিসার গোলাম কিবরিয়া, অফিসার শান্তনু রায়, সামিউল, সুপারভাইজার ইদ্রিস আলী, সানা উল্লাহ, সিরাজ উদ-দৌলা, রাকিবুল ও রাজীবকে।
একুশে সংবাদ.কম/জ.ন.প্র/জাহাঙ্গীর
আপনার মতামত লিখুন :