যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলায় ফুুুলের রাজধানীখ্যাত গদখালীর পানিসারায় অবশেষে চালু হতে যাচ্ছে বহুল কাঙ্খিত বাংলাদেশ-আমেরিকার সৌহার্দ্য ফুল বিপণন কেন্দ্র ও কোল্ড স্টোরেজ। অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ রুপে শেষ হয়েছে আরও অনেক আগেই। এখন শুধু বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন হলেই ফুল চাষীদের বহুল প্রতিক্ষীত এই কেন্দ্রটি চালু হবে। আর এটি চালু হলে চাষীরা এখানে ফুল ও বীজ সংরক্ষণ করতে পারবেন, পাশাপাশি তাদের খরচ কমবে, সাথে সময়ও বাঁচবে।
ইতিমধ্যে যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের কাছে কেন্দ্রটির কাগজপত্র ও চাবি হস্তান্তর করেছে ঝিকরগাছা উপজেলা প্রশাসন। বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শেষ হলেই কেন্দ্রটি চালু হবে পুরোদমে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রটি নির্মাণের মুুল উদ্দেশ্য হলো আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ফুল সংগ্রহের পর ফুলের ব্যবস্থাপনা, ফুল ও বীজের গুণগতমান উন্নয়ন ও বীজ সংরক্ষণ। অর্থাৎ ফুলের ‘সর্টিং, গ্রেডিং ও প্যাকেজিং’ করা। এর মাধ্যমে দেশীয় বাজার, সাাথে আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যা দেশের অর্থনীতিতে গুুুরুত্বপূর্ণ ভুুুুমিকা রাখবে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফুল চাষীদের উন্নয়নে কেন্দ্রটি ভূমিকা রাখবে বলে স্থানীয় ৯ কৃষক শর্তসাপেক্ষে কেন্দ্রটি নির্মাণে এক একর জমি দেন। গদখালী ইউনিয়ন ও পানিসারা ইউনিয়নের ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একটি ফুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র, কোল্ড স্টোরেজ ও আধুনিক ফুল বাজারের। তাদের সেই দাবি পূরণে ফুল বিপণন কেন্দ্র ও স্টোরেজ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। আমেরিকান দাতা সংস্থা ইউএসএইডের সহযোগিতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারায় বাংলাদেশ-আমেরিকার সৌহার্দ্য ফুল বিপণন কেন্দ্র নির্মাণ করে। ২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে এক একর জমিতে কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ২০২১ সালের ৩০ জুন নির্মাণ কাজ শেষ হলেও চুক্তির একটি শর্তের কারণে কেন্দ্রটি হস্তান্তর করা সম্ভব হচ্ছিলো না।
তবে চাষীদের সুুুুবিধার কথা চিন্তা করে দ্রুত সমস্যা নিরসণের লক্ষ্যে পরীক্ষামূলকভাবে যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের কাছে প্রতিষ্ঠানটি হস্তান্তর করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, সমিতির কাছে পরিচালনার জন্য ফুল বিপণন কেন্দ্র হস্তান্তর করা হয়েছে। এখানে আপাতত বীজ সংরক্ষণ করা হবে। এর ফলে কৃষকদের বীজ সংংরক্ষণের জন্য, আর অন্য কোথাও বীজ সংরক্ষণের জন্য নিতে হবে না। এখানে পর্যায়ক্রমে ফুলের গ্রেডিং, সর্টিংসহ সংরক্ষণ করা যাবে। এই কেন্দ্রে কৃষকদের উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
তিনি আরো জানান, তার পরিবারের সদস্যসহ নয়জনের দান করা জমির ওপর এই কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। চুক্তি জটিলতায় এতদিন উদ্বোধন না হলেও এখন প্রতিষ্ঠনটির কার্যক্রম শুরু হবে।
এই অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের জনক ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামের শের আলী সরদার জানান, কোল্ড স্টোরেজ চালু হলে এখানে বীজ সংরক্ষণ করা যাবে। ফুলের গ্রেডিং ও সর্টিং করা যাবে। এছাড়া যেদিন ফুল বিক্রি হবে না, সেই দিন কোল্ড স্টোরে রেখে পরদিন ঐ ফুল বিক্রি করা যাবে।
ফুলচাষী ইসমাইল হোসেন বলেন, এই অঞ্চলের ফুল চাষিদের প্রাণের দাবি ছিল প্রতিষ্টানটি চালু হোক। শুধু বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ হলেই কেন্দ্রটি চালু হবে। তিনি আরো বলেন, এই অঞ্চলে অপার সম্ভাবনার ফুলচাষ হলো গ্লাডিওলাস। শুধু বীজ সংরক্ষণের অসুবিধার কারণে অনেক চাষিরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে কেউ কেউ আজ সর্বশান্ত। কেন্দ্রটি চালু হলে অনেকাংশেই সেই সমস্যার কিছু টা সমাধান হবে।
নারী ফুলচাষি সাজেদা বেগম বলেন, আগে যশোরের ঝুমঝুমপুর বিএডিসি কোল্ড স্টোরেজে অনেক কষ্ট করে বীজ রাখতে হতো, যেটা আমাদের ফুল চাষীদের জন্য খুবই কষ্টকর একটা ব্যাপার ছিলো। এখন বাড়ির কাছেই বীজ রাখতে পারলে আমাদের সবার খরচও কমবে, সময়ও বাাঁচবে আর কষ্ট করে যশোর যাওয়া লাগবে না। আর শীতের ফুল লিলিয়ামের বীজ রাখতে পারলে আমার অনেক টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুল হক জানান, নির্মাণ কাজ শেষ হলেও বিভিন্ন জটিলতায় ফুল বিপণন কেন্দ্রটি চালু করা সম্ভব হয়নি। এখন পরীক্ষামূলকভাবে প্রতিষ্ঠানটি চালু করা হচ্ছে। ফলে যন্ত্রপাতিও ভাল থাকবে এবং ফুুলচাষী ও ফুুল ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হবেন। ইতিমধ্যে যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের কাছে কেন্দ্রটি পরিচালনা করার অনুমতি দিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। এখন শুধু মাাত্র বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হলেই এটা চালু করা হবে। সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রটি উদ্বোধন করা হবে।
ফুল চাষীরা আশা করছে কেন্দ্রটি চালু হলে চাষীদের দুর্ভোগ অনেকাংশেই কমে যাবে। ফুলের সর্টিং, গ্রেডিং ও প্যাকেজিং করা সম্ভব হলে ফুল বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়ার আশা চাষীদের, আরও বেশি পরিমাণে ফুল বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। যা আমাদের দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে ও দেশের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
একুশে সংবাদ.কম/সম
আপনার মতামত লিখুন :