হামার চিন্ত্যাতে আচিল ন্যা হামড়া এই জীবনোত পাকা বাড়ী পামো। এলা আর বন্যা আইসপ্যার পাবার নয়, নদীও ভাইংগব্যার নয়। শ্যাখের বেটির ঘর পায়া হামার কষ্ট দূর হইছে। কথা গুলো বলতে বলতে দুথচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল, রবিদাস সম্প্রদায়ের ষাটোর্দ্ধ বৃদ্ধা শ্রীমতি ম›জরী রবিদাসের।
শুধু ম›জরী রবিদাস নয় এরকম গৃহহীন, ভূমিহীন ভাসমান ১৫টি রবিদাস পরিবার কুড়িগ্রামের উলিপুরে আশ্রায়ন প্রকল্পের আওতায় গড়ে তোলা রবিদাস পল্লীতে আশ্রয় পেয়ে খুব খুশি। সোমবার (১০ এপ্রিল) সরেজমিন ওই পল্লীতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। প্রশাসনের এ উ˜েদ্যাগে স্বাগত জানিয়েছেন এলাকার সুধীজন ও সচেতন মহল। উপজেলা নিবার্হী অফিসারের দপ্তর সুত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ন-৩ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার নদী ভাঙ্গন কবলিত হাতিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর কামারটারী গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে রবিদাস পল্লী। সম্প্রতি সেই পল্লীতে নদী ভাঙ্গা গৃহহীন ভাসমান ১৫টি রবিদাস পরিবারের কাছে ঘর গুলো হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রতি পরিবারের জন্য ২শতক জমিসহ ২ রুম বিশিষ্ট আধা পাকা টিন সেড ১টি ঘর, ১টি বাথরুম ও ১টি করে নলকুপ রয়েছে। চর ডিজাইনের প্রতিটি ঘরের নিমার্ন ব্যয় হয়েছে ২লাখ ৮৪ হাজার ৫থশ টাকা। ১৫টি ঘরের জন্য মোট ব্যয় হয়েছে ৪২ লাখ ৬৭ হাজার ৫থশ টাকা।
৫০ বছর ধরে ব্রহ্মপুত্র নদীর কিনারে বাঁধের রাস্তায় ঝুঁপরি ঘরে জীবন কাটিয়েছি। বছর বছর নদী ভাঙ্গে, হামার ঠিকানাও ভাঙ্গে। নদী হামাক তাড়ে (তাড়িয়ে) নিয়ে বেড়ায়। বর্ষাকালে ঝড়িত (বৃষ্টি) ভিজি। এখন আর নদী ভাইংগব্যার নয়, ঝড়িত ভেজা নাইগব্যার নয়। নিজের মত করি এই পল্লীত বসবাস কইরব্যার পামো। বেটা-বেটিক স্কুলোত ভর্ত্তি করি পড়বার পামো। এভাবে আশ্রায়নের ঘর পাওয়ার প্রশান্তির অনুভুতি প্রকাশ করলেন জোসনা রবিদাস, বিধবা ফেলানী রবিদাস, শ্যামল রবিদাস ও জয়ন্তী রবিদাস। গৃহহীন এই পরিবার গুলো সরকারের দেয়া এমন সুন্দর ঘর পেয়ে বেজায় খুশি। তারা জানান, ভগবান শ্যাখ হাসিনাকে বাঁচি থুক , ভালো করুক।
উপজেলা নিবার্হী অফিসার শোভন রাংসা বলেন, দলিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী যারা রবিদাস স¤প্রদায় বলে পরিচিত, এখনো তারা সমাজের মুল স্রোতের সাথে সামিল হতে পারেনি। ফলে তারা নানা অভাব অনটনের মধ্যে যাযাবর জীবন যাপন করে। তাই তাদের সমাজের মুল ধারার সাথে একিভুত করার জন্য এ উ˜েদ্যাগ নেয়া হয়েছে। গৃহ প্রদানের মাধ্যমে ১৫টি রবিদাস পরিবারের স্থায়ী ভাবে আবাসন সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু বলেন, প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী, তিনি চান এ দেশের প্রতিটি মানুষ নাগরিক সুবিধা পাক। প্রতিটি নাগরিক যেন সমান অধিকার ও সুযোগ সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করার লক্ষে রবিদাস পল্লী নিমার্ন করা হয়েছে। এর ফলে সুবিধা বঞ্চিত এই মানুষগুলো তাঁর নিজ পেশায় যেমন মনোযোগী হতে পারবেন একই সাথে নিজেদের ভবিষ্যত সম্পর্কে সচেতন হবেন।
কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক এম এ মতিন বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রথম সরকার প্রধান যিনি আশ্রয়হীনদের জন্য আধাপাকা ঘর এবং ২শতক জায়গা দান করেছেন। রবিদাস যারা সমাজে দরিদ্র এবং অবহেলিত শ্রেণির। এদের জন্য কেউ কখনো চিন্তা করেনি। এই সরকার যারা সমাজে একেবারে অবহেলিত, শোষিত, বঞ্চিত তাদের সকলকে খাদ্য, নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও থাকার ব্যবস্থা করেছে।
একুশে সংবাদ.কম/সম
আপনার মতামত লিখুন :