নরসিংদীর রায়পুরায় বাবাকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার পর নিজেই জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দিয়ে জানিয়েছেন ছেলে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধারসহ ওই যুবককে আটক করে।
আজ রোববার সকাল ৯টায় উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের মেজেরকান্দি উত্তরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতের নাম হাজি আইনুল হক (৭০)। এ ঘটনায় আটক করা হয়েছে তাঁর দ্বিতীয় ছেলে ইয়াসিনকে (২৮)।
পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছে, দীর্ঘদিন যাবৎ পারিবারিক নানা বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে কলহ চলছিল। বিভিন্ন সময় তাঁদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকত। ইয়াসিন মাদক সেবন করতেন। যে কারণে তাঁর স্ত্রী বেশির ভাগ সময়ই বাপের বাড়িতে থাকতেন। রোববার সকালে এসব বিষয় নিয়ে ইয়াসিন ও তার বাবা আইনুল হকের মধ্যে কথা-কাটাকাটির হয়। এরই একপর্যায়ে ইয়াসিন ঘরে ঢুকে তাঁর বাবাকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। পরে তিনি নিজেই ৯৯৯ এ কল দিয়ে বাবাকে হত্যার কথা জানায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে এবং ইয়াসিনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
আটক ইয়াসিনের স্ত্রী হাওয়া বেগম বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে ৪ বছর। আমার শ্বশুর আর সৎ শাশুড়ির অত্যাচারে আমাকে বেশি সময় বাপের বাড়িতেই থাকতে হয়। আমার পরিবারের বিষয় নিয়ে প্রায়ই শ্বশুর-শাশুড়ির মধ্যে ঝগড়া হতো। পরে আজ আমার স্বামী দা দিয়ে কুপিয়ে আমার শ্বশুরকে হত্যা করেছে।
তার স্বামী ইয়াসিন মাদক সেবনের সঙ্গে জড়িত কি না প্রশ্নের জবাবে হাওয়া বেগম বলেন, আমি বিয়ের পর দেখতাম উনি (ইয়াসিন) মাদক সেবন করত। কিন্তু এগারো মাস যাবৎ উনি আর কোনো মাদক সেবনের সাথে জড়িত না। বিশ্বাস না হলে আপনারা তাঁকে টেস্ট করে দেখতে পারেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আলম ভূঁইয়া বলেন, আইনুল হাজি প্রায়ই এ নেশাগ্রস্ত ছেলেকে নিয়ে কথা বলতেন। তিনি ওই ছেলেকে খুব ভয়ও পেতেন। ওই ছেলের জন্য নরসিংদীতে একটি বাড়িও বিক্রি করতে হয়েছে বলে তিনি বলেছিলেন। আজকে সকালে শুনতে পাই ইয়াসিন তাঁর বাবাকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমরা এমন ছেলের উপযুক্ত শাস্তি হিসেবে তাঁর ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।
এ ঘটনায় মির্জানগর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. মোমেন মিয়া বলেন, খবর পেয়েই আমি ঘটনাস্থলে যাই। ইয়াসিন তাঁর বাবাকে হত্যার পর সে নিজেই ৯৯৯ এ কল করে পুলিশকে খবরটি দেয়। পরে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে হত্যায় ব্যবহৃত দাসহ ইয়াসিনকে আটক করে। আমরা এর উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে রায়পুরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নবী হোসেন বলেন, দা দিয়ে কুপিয়ে বাবাকে হত্যার পর ঘাতক ছেলে ইয়াসিন নিজেই ৯৯৯ এ কল করে বিষয়টি জানান। পরে আমরা তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যাই। হত্যায় ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইয়াসিনের স্ত্রী ও শাশুড়িকে থানায় নেওয়া হয়েছে।
এসআই নবী হোসেন আরও বলেন, সুরতহাল করারা সময় নিহতের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের চারটি জখমের চিহ্ন দেখা গেছে। লাশের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একুশে সংবাদ.কম/সা.ই.রু/বি.এস
আপনার মতামত লিখুন :