ভ্যাপসা গরমে শরীরের পানি শূন্যতা দূর করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে তাল। সহজলভ্য ও মুখরোচক হওয়ায় বিভিন্ন বয়সী, শ্রেণী-পেশার মানুষের এ সময়ের পছন্দের ফল তাল শাঁস। এ ফলটির রয়েছে বিভিন্ন রকমের ওষুধি গুণও। গরমের এই দিনে তালের শাঁস খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। পাকা তালের পূর্ব অবস্থাটির নামই হলো তালের শাঁস। এর নরম কচি শাঁস খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বর্তমানে এর চাহিদা অনেক বেড়েছে। একজন বিক্রেতা শাঁস কেটে তুলতে তুলতে আরো অনেক ক্রেতারা দাঁড়িয়ে থাকে শাঁস নেবার জন্য। রামগঞ্জ উপজেলার অনেক গ্রামেই তাল গাছ রয়েছে। তালের শাঁস অতি সুস্বাদু হওয়ায় সকল শ্রেণীর মানুষের মাঝে তালের শাঁস একটি জনপ্রিয় ফল। তালগাছ বাড়ির আনাচে-কাঁনাচে, পুকুর পাড়ে, নদীর ধারে, পরিত্যক্ত স্থানে বেশি দেখা যায়। তবে দিনে দিনে অনেকটা বিলুপ্তির পথে তালগাছ।
জ্যৈষ্ঠের এই তীব্র গরমের মধ্যে একটু স্বস্তি পেতে রামগঞ্জ উপজেলাবাসীর কাছে তালের শাঁসের কদর বেড়েছে। যদিও সহজলভ্য ও মুখরোচক হওয়ায় এ সময় বিভিন্ন বয়সী মানুষের পছন্দের তালিকায় থাকে এটি। তাপদাহে তাল শাঁস খেয়ে একটু তৃপ্তি খুঁজছেন মানুষ। চাহিদার কারণে বাজারে এর দামও খানিকটা বেশি হলেও, বিক্রি হচ্ছে বেশ। প্রতি তাল (তিন কোষ) ১৫ থেতে ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রচন্ড গরমে শহরসহ গ্রাম জুড়ে কদর বেড়েছে তালের শাঁসের। স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষের প্রিয় তালশাস।
আম, লিচু ও কাঁঠালের মতো রসালো না হলেও তালের শাঁস এখন বেশ জনপ্রিয়। একটু স্বস্তি পেতে রাস্তার পাশে ফুটপাতে বিক্রি হওয়া রসালো এ ফলের স্বাদ নিচ্ছেন অনেকে। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এ ফলে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে। এর বেশিরভাগ অংশ জলীয় হওয়ায় এটা খেলে দ্রুত শরীরে পানিশূন্যতা দূর হয়। কচি তালের শাঁস যেমন সুস্বাদু ও পুষ্টিকর তেমনি পাঁকা তাল ও তালের পিঠা গ্রাম বাংলার সুস্বাদু ও জনপ্রিয় খাবার। প্রতিদিন সব খরচ বাদ দিয়ে দৈনিক তিন-চারশ’ টাকা লাভ থাকে। গরম যতো বাড়ে তালের শাঁসের চাহিদাও বাড়ে। গাছ থেকে তালের কাঁদি কেটে তা আবার নামানো, বাজারে বয়ে আনা, তারপর কাটাকুটি করে তবেই ক্রেতার হাতে দিতে হয়। কষ্ট হলেও বেশ লাভ হয়। অবাক করার মতো খাদ্যশক্তি রয়েছে তালের শাঁসে। প্রায় ৮৭ কিলো ক্যালোরি। ৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকায় তালের শাঁস হাড় গঠনেও দারুণ ভূমিকা রাখে।
উপজেলার রামগঞ্জ বাজারের তাল বিক্রেতা মন্টু মিয়া বলেন, শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতি, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবার কাছে প্রিয় তালের শ্বাস। আবার মৌসুমি ফল বলে শখের বশেই অনেকে এটি খায়। দামেও বেশ সস্তা। তাই বাজারে এর কদরও বেশি। বাজারের পাশাপাশি পাড়া মহল্লায়ও প্রতিটি তাল ১০-১৫ টাকা করে ভ্যানে নিয়ে ফেরি করে বিক্রী করেন তিনি।
তিনি আরো জানান, একটি তাল থেকে দুই থেকে তিনটি শাঁস পাওয়া যায়। প্রতি পিস এখন ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হয়। গ্রামে গ্রামে ঘুরে এসব কচি তাল কিনে এনে বাজারে বিক্রি করেন তিনি। তালের সংখ্যা ভেদে একটি গাছের দাম পড়ে ৫০০ থেকে হাজার টাকাও পড়ে যায়। প্রতিদিন তিনি ৭০০ থেকে হাজার টাকার তালশাঁস বিক্রি করেন।
তালের শাঁস বিক্রেতা বাচ্চু মিয়া জানান, কেউ একটু তরল, আবার কেউ একটু শক্ত শাঁস পছন্দ করেন। তবে অধিকাংশ মানুষ তরল ধরণের শাঁস পছন্দ করেন। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ কাঁদি তাল বিক্রি করেন তিনি। বছরের অন্য সময় ভিন্ন কাজে জড়িত থাকেন তিনি।
তালের শাঁসের ক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম জানান, ‘বর্তমান সময়ে ফরমালিন বা কেমিক্যাল ছাড়া কোনও ফল পাওয়া মুশকিল। সেখানে তালের শাঁস সর্বোৎকৃষ্ট। কোনও ধরনের ভেজাল নেই। তবে তালের শাঁস সুপারশপে বিক্রি হয় না, এটা কেবল ফুটপাত বা মহল্লার অলিগলিতে পাওয়া যায়। ছোট শাঁস অনুযায়ী দাম কিছুটা বেশি হলেও এ নিয়ে কিছু বলার নেই। তালের শাঁস একটি সুস্বাদু ফল। গরম থেকে এসে তালের শাঁস খেতে ভালই লাগে। ফলে এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে।
রামগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার সৈয়দ রায়হানুল হায়দার জানান, তালের শাঁস শরীরকে দ্রুত শীতল করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় শরীরের কোষের ক্ষয় প্রতিরোধ করে। শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। বজ্রপাত রোধে বিভিন্ন রাস্তার ধারে তালগাছ রোপণ করা হয়েছে। কৃষি অফিস ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন আলাদাভাবে তালের গাছ রোপণ করে আসছে। কিছু গাছের তাল পাকানোর জন্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে, যাতে বীজ করা যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গুনময় পোদ্দায় বলেন, পানি তালের অনেক উপকারিতা রয়েছে। তালের আশে প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৮ গ্রাম খাদ্যপযোগী খনিজ পদার্থ, ২০.৭ গ্রাম শর্করা, ০.৮ গ্রাম আমিষ, ০.৫ গ্রাম আঁশ রয়েছে। গরমে শরীরের পানির অভাব পূরণ করতে এর মধ্যে আছে ৭৭.৫ ভাগ জলীয় অংশ। ০.৫ গ্রাম খাদ্য আঁশ থাকায় এটি হজমে সহায়ক। অবাক করার মতো খাদ্যশক্তি রয়েছে তালের শাঁসে। প্রায় ৮৭ কিলো ক্যালোরি। ৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকায় তালের শাঁস হাড় গঠনেও দারুণ ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে তালের শাঁস নানা রোগের প্রতিশেধক হিসেবে কাজ করে। তবে পরিস্কার-পরিছন্নভাবে না খেলে আবার ডায়েরিয়ারও ঝুঁকি থাকে।
একুশে সংবাদ/সা.ই.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :