বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হলে চাচা-ভাতিজা একসঙ্গে কাজ করবেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত।
সোমবার (১২ জুন) ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দেওয়া শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আপনি যদি বিজয়ী হন তাহলে কি মিলেমিশে কাজ করবেন, অর্থাৎ চাচা-ভাতিজা একসঙ্গে কাজ করবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের অভিযোগ, আপনারা মাঠ দখল করে প্রভাব বিস্তার করছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ বলেন, এখানে নির্বাচন কমিশন আছে, তারা পর্যবেক্ষণ করছেন। তাই আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাই না।
ভোটারদের যে উপস্থিতি তাতে কি আপনি মনে করছেন, উৎসবমুখর ও আনন্দময় পরিস্থিতি—এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বলেন, আমি খুবই আনন্দিত যে ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিচ্ছে। এটা আমার কাছেও ভালো লেগেছে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসছেন এবং ভোট দিচ্ছেন। এটা আমার কাছে আনন্দের ব্যাপার।
যাদের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন, তাদের কতটুকু মূল্যায়ন করবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি প্রত্যেক নাগরিককেই মূল্যায়ন করব। এখানে সবার প্রতি আমার ন্যায়বিচার থাকবে।
কিছু কেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে দেখা গেছে, নৌকার প্রার্থীরা এগুলো করছে। তাদের উদ্দেশে আপনারা কী বলবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমি অবশ্যই আমার কর্মীদের বলব, তারা সংযতভাবে ভোটকেন্দ্রে থাকবে। এখানে অনেক কাউন্সিলরের নিজেদের মধ্যে ঝামেলা আছে, সেটাও হতে পারে।
এদিকে সকালে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, ভোট গ্রহণের শুরুটা ভালো, আলহামদুলিল্লাহ। এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ ভালো। ভোটারদের মধ্যে যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। এখন পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না।
সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেছেন, ভোট সুষ্ঠু হলে যে কোনো ফলাফল মেনে নেব। এ ছাড়া কোনো কারচুপি হলে ভিন্ন প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে। এর জন্য আমরা তখন আন্দোলন করব। আদালতে রিট করা হবে।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ ভালো। দীর্ঘদিন পরে মানুষ ভোট দেওয়ার পরিবেশ পেয়েছে। যেন মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দ। ভোট যদি সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ আর গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে যা হয় আমরা সেটাই মেনে নেব। এ ছাড়া শেষ পর্যন্ত মানুষ যদি ভোট দিতে পারে, তাহলে সর্বোচ্চ ভোট নিয়ে হাতপাখা জয়লাভ করবে।
ইভিএম নিয়ে কোনো শঙ্কা আছে কিনা—সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে এই প্রার্থী বলেন, অবশ্যই আছে। ইভিএম একটি কঠিন শঙ্কা। এটি সহজ কোনো বিষয় নয়। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, আমরা যেন শঙ্কামুক্ত থাকি। এ ছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমাদের বলেছেন, প্রতিটি রেজাল্টের প্রিন্ট কপি তারা আমাদের দেবেন। আমরাও তাদের বলেছি, তারা যেন হাতে লেখা কোনো রেজাল্ট শিট আমাদের না দেন।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩০টি ওয়ার্ডে ১২৬টি কেন্দ্রের ৮৯৪টি বুথে ভোট গ্রহণ চলবে। প্রস্তুত করা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ ইভিএম। এসব ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১০৬টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম।
বরিশাল সিটির ভোটার ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯৯৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭১ জন এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৪ জন।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৭ জন। তারা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম, জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চু ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন ঘড়ি প্রতীকের মো. কামরুল আহসান রুপন, হাতি প্রতীকের আসাদুজ্জামান ও হরিণ প্রতীকের আলী হোসেন।
এ ছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৮ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪২ জনসহ মোট ১৬৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদিকে কেন্দ্রীয়ভাবে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে এই নির্বাচন মনিটর করছে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট আয়োজনে সার্বিক প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর আগে গতকাল রোববার রাতে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে যায় নির্বাচনী সরঞ্জাম। যে কোনো ধরনের সহিংসতা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
একুশে সংবাদ/এসএপি
আপনার মতামত লিখুন :