সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় তিনটি গ্রামে বসতি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী (আদিবাসী) পরিবারগুলোর মাঝে শিক্ষার হার বাড়ছে। উপজেলার দুটি ইউনিয়নে গ্রাম তিনটিতে বসবাসকারী প্রায় নব্বই পরিবারের ৯২ জন পড়ালেখা করছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অবধি ৪৪ জন পড়ালেখা করছে।
উল্লাপাড়া উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়নের বেলাই ও ফাজিলনগর এবং বাঙ্গালা ইউনিয়নের প্রতাপ গ্রামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী প্রায় নব্বই পরিবার বসবাস করছেন। এর মধ্যে বেলাই গ্রামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৪৮ সিং পরিবার ও ফাজিলনগর গ্রামে বসবাস করছেন ২৫ মাহাতো পরিবার। আর বাঙ্গালা ইউনিয়নের প্রতাপে ঘাশীমালো ১৭ পরিবার বংশ পরম্পরায় বসবাস করছেন। গ্রাম তিনটিতে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারগুলোর কৃষি পেশার আয়ে সংসার চলে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারগুলো অভাবের মাঝেও সন্তানদের পড়ালেখা করাচ্ছে। এদের মাঝে শিক্ষার হার বেড়েছে। শিক্ষার হার আরো বাড়ছে।
বেলাই গ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সিং পরিবারের প্রায় ৩৫ জন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে। এছাড়া মাধ্যমিক পর্যায়ের ষষ্ঠ শ্রেণীতে ২ জন, অষ্টম শ্রেণীতে ২ জন , দশম শ্রেণীতে ৫ জন ও একাদশ শ্রেণীতে ১ জন পড়ালেখা করছে। প্রতাপে ঘাশীমালো পরিবারের ৬ জন পড়ালেখা করছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ষষ্ঠ শ্রেণীতে ৩ জন, সপ্তম শ্রেণীতে ২ জন, দশম শ্রেণীতে ২ জন ও একজন একাদশ শ্রেণীতে পড়ালেখা করছে। ফাজিলনগর গ্রামের ৭জন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে। ষষ্ঠ শ্রেণীতে ২ জন, সপ্তম শ্রেণীতে ৭ জন, অষ্টম শ্রেণীতে ১ জন, নবম শ্রেণীতে ১ জন, দশম শ্রেণীতে ৪ জন, একাদশ শ্রেণীতে ৫ জন ও স্মাতকে ৬ জন পড়ালেখা করছে।
বাঙ্গালা ইউনিয়নের প্রতাপের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মমতা ঘাশীমালো ও শাপলা ঘাশীমালো স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীতে ও পূর্ণ বাবু ঘাশীমালো একাদশ শ্রেণীতে পড়ালেখা করছে। এরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। উধুনিয়া ইউনিয়নের ফাজিলনগর গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নিত্য মাহাতোর দুই সন্তান সুমন্ত মাহাতো অনার্সে ও সমীরণ মাহাতো দশম শ্রেণীতে পড়ালেখা করছে। প্রতিবেদককে নিত্য মাহাতো জানান তিনি কামার পেশায় আয়ের টাকায় সংসার চালানো ও সন্তানদের পড়ালেখায় খরচ করছেন। বেলাই গ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মিঠুন সিং এর সংসার কৃষি পেশায় দিন আয়ে চলে। তার দুই সন্তান শুভ সিং পঞ্চম শ্রেণীতে ও মেয়ে মিথিনা সিং তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ালেখা করছে।
প্রতিবেদককে গ্রাম তিনটির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আরো কজন বলেন তাদের মাঝে শিক্ষার হার বেড়েছে। শিক্ষার হার আরো বাড়ছে। বেশীর ভাগ পরিবারে সংসারে অভাব থাকলেও সন্তানদেরকে পড়ালেখা করানো হচ্ছে। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল মোত্তালিব বলেন উল্লাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বসবাস করা অনগ্রসর জনগোষ্ঠির নানা পেশার পরিবারের ৪৬ জন তার বিভাগ থেকে মাসিক শিক্ষা বৃত্তির টাকা পায়। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারগুলোর সন্তানদের পড়ালেখায় সরকার থেকে তার বিভাগের মাধ্যমে শিক্ষা বৃত্তিতে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় না বলে জানান। তিনি আরো বলেন এক কালীন অনুদান সহায়তায় কিছু টাকা খুবই গরীব পরিবারের এক দুজনকে দেওয়া যেতে পারে বলে জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও ) মোঃ উজ্জল হোসেন বলেন উল্লাপাড়া শিক্ষা বৃত্তি ট্রাস্ট থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে এমন কেউ আবেদন করলে মাসিক বৃত্তিতে টাকা দেওয়া যেতে পারে।
একুশে সংবাদ/সা.স.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :