ময়মনসিংহে যুদ্ধাপরাধ মামলার দুই পলাতক আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার (২৫ জুন) পৃথক এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ঈশ্বরগঞ্জের আবুল হাশেম ও ফুলপুরের মাহবুবুল আলম মন্ডল।
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মেদ ভুঞা প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার বলেন, ঈশ্বরগঞ্জের বাগুতা গ্রামের হাসিম উদ্দিন ওরফে আবুল হাশেম ১৯৭১ সালের বাংলা আশ্বিন মাসের ২৫ তারিখে দুপুরে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির সদস্য সৈয়দ হোসাইন আহম্মদের নির্দেশে আল বদর মো. হাসিম উদ্দিন ওরফে আবুল হাসেম সহ ১৫/১৬ জন রাজাকার ঈশ্বরগঞ্জের সোহাগী বাজারে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে এবং সরিষা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক তহসিলদার, তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সোহাগী মাদ্রাসার হিসাব রক্ষক কাঠালিয়া গ্রামের মো. নূরুল হক ওরফে তারা মিয়ার বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়।
অভিযুক্ত রাজাকাররা ঐ দিনই সোহাগী বাজার থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থক নিরীহ ব্যবসায়ী গোপাল চন্দ্র করকে অপহরণ করে আঠারবাড়ি পাকিস্তান আর্মি ক্যাম্পে আটক রাখে এবং পাকিস্তান আর্মির সহায়তায় অমানুষিক নির্যাতন করে। পরবর্তীতে তাকে হত্যার পর লাশ গুম করে ফেলে। এছাড়াও আল বদর মো. হাসিম উদ্দিন ওরফে আবুল হাসেমসহ ১৫/১৬ জন সশস্ত্র রাজাকার তৎকালীন সরিষা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক তহসিলদার, আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মো. নূরুল হক ওরফে তারা মিয়াকে অপহরণ করে ময়মনসিংহ শহরস্থ বড় মসজিদ রাজাকার ক্যাম্পে আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন করে।
পরবর্তীতে তাকে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যার পর তার লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হলে তিনি পলাতক ছিলেন। রোববার সোহাগী ইউনিয়নের বগাপোতা নামক স্থান থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ও গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত তাকে ঈশ্বরগঞ্জ পুলিশ গ্রেফতার করে। অপরদিকে, নগরীর তিনকোনা পুকুর পাড় এলাকা থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ও গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি মাহাবুব আলম মন্ডলকে ফুলপুর থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। তার বাড়ি ফুলপুরের পশ্চিম রাখাই গ্রামে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তৎকালীন পাক হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে গঠিত স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার বাহিনীতে যোগদান করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহায়তাকারী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে সরাসরি অংশগ্রহণ করে মাহাবুব আলম। তার বিরুদ্ধে স্থানীয় যোগেশ চন্দ্র দাসসহ অন্যান্যসহ ৯ জনকে গুলি করে হত্যা অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া যুদ্ধ চলাকালীন সে পাক হানাদার বাহিনীর সহযোগিতায় বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করে এলাকায় ত্রাস কায়েম করে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদের উপর অমানুষিক নিযার্তন করে অসংখ্য নিরীহ মানুষের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয় এবং সম্পদ লুণ্ঠন, নারী ধর্ষণ ও হত্যাসহ জঘন্য অপরাধ চালিয়ে যায়।
২০০৯ সালে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলা রুজুর পর থেকে দীর্ঘ ১৪ বছর ঢাকা ও বিভিন্ন এলাকায় পলাতক ছিলেন। গত তিন দিন আগে ঈদ উপলক্ষে গোপনে ময়মনসিংহে এসেছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার দুপুরে ফুলপুর সান্দিকোনা বিট পুলিশ কার্যালয়-কেন্দুয়া তার মেয়ে ঊর্মি আক্তারের বাসা নগরীর তিনকোনা পুকুরপাড় থেকে গ্রেফতার করে। পুলিশ সুপার আরো বলেন, সোমবার তাদেরকে আদালতে পাঠানো হবে। প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হানুল ইসলাম, শামীম হোসেন, মোহাইমিনুল ইসলাম, শাহিনুল ইসলাম ফকির, কোতোয়ালীর ওসি শাহ কামাল আকন্দসহ
প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
একুশে সংবাদ/ত.ক.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :