ঢাকার সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরায় চামড়া শিল্প নগরীর ট্যানারিগুলোতে চামড়া সংগ্রহ শুরু করেছেন ট্যানারি মালিকেরা। এ বছর এক কোটি পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদের দিন থেকে রবিবার বিকেল পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ১০ হাজার পিস চামড়া সংগ্রহ করেছেন ট্যানারি মালিকরা।
ট্যানারি মালিকদের দাবি, ট্যানারিগুলোর লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি) সনদ না থাকায় আন্তর্জাতিক বাজার অনুসারে দাম পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। প্রক্রিয়াজাত চামড়া বিক্রির ক্ষেত্রে চীনের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে তাদের। এক্ষেত্রে চামড়ার মূল্য অনেক কম পাচ্ছেন বলে দাবি ট্যানারি মালিকদের।
এদিকে অব্যবস্থাপনার কারণে চামড়ার বর্জ্য ডাম্পিং ইয়ার্ডের বাইরেও ফেলা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের (সিইটিপি) কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় তরল বর্জ্যে এ বছরও পরিবেশ ও চামড়াশিল্প নগরসংলগ্ন ধলেশ্বরী নদীতে দূষণের আশঙ্কা রয়েছে।
সোমবার (৩ জুলাই) চামড়াশিল্প নগরে ঘুরে দেখা যায়, সাভার ও এর আশপাশের এলাকাগুলো থেকে লবণ ছাড়া চামড়া সংগ্রহ করেছে ট্যানারিগুলো। এগুলোতে লবণ মাখাচ্ছেন শ্রমিকরা। উচ্ছিষ্ট বর্জ্য হিসেবে চামড়া থেকে কেটে ফেলা হচ্ছে লেজ, কান, মাথার অংশ। এগুলো পরে ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত গাড়িতে করে শিল্পনগর ঘেঁষে থাকা ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে নিয়ে উন্মুক্ত স্থানে ফেলা হচ্ছে। এ বছর ঈদকে কেন্দ্র করে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নদীর পাড় ঘেঁষা ডাম্পিং ইয়ার্ডের একটি অংশে বড় গর্ত করা হয়েছিল। তবে সেখানে বর্জ্য না ফেলে তা নেওয়া হচ্ছে উন্মুক্ত স্থানে। সেখানেই লেজের অংশ থেকে লোমযুক্ত অংশটি আলাদা করছেন ৪-৫ জন।
নদীর পাড়ে উন্মুক্ত স্থানে লেজের লোমযুক্ত অংশটি সংগ্রহ করা শ্রমিক মঞ্জু মিয়া বলেন, এই অংশটি আগে ৩-৪ টাকা করে বিক্রি হতো। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ পয়সায়। আপাতত সংগ্রহ করে রাখছি। পরে বিক্রি করবো।
পাশেই ছিলেন রবিউল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। তিনি নিজেকে সিইটিপির কর্মচারি পরিচয় দিয়ে বলেন, বর্জ্য ফেলার জায়গায় যাওয়ার সড়ক বৃষ্টিতে কাঁদা হয়ে যাওয়ায় গাড়ি যেতে পারছে না। তাই এখন এখানে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। পরে সরিয়ে যথাস্থানে নেওয়া হবে।
চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই জানান, সোমবার থেকেই লবণ দিয়ে সাজিয়ে রাখা চামড়া খোলা হবে। তারপর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ড্রামে দেওয়া হবে।
চামড়ার ব্যবসায়ী ও প্রক্রিয়াজাতকরণকারী মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, আমরা এখন কাচা চামড়া কাটিং করে লবন দিয়ে সাজিয়ে রাখছি। এরপর চামড়ার স্তুপ ভেঙে ওয়েট ব্লু` জন্য ড্রামে দেয়া হবে। এক সপ্তাহ পর থেকে অন্যান্য জেলার লবনযুক্ত চামড়া আসবে।
ট্যানারিগুলোর এলডব্লিউজি সনদ না থাকায় আন্তর্জাতিক বাজার অনুসারে দাম পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ট্যানারি মালিকেরা।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সালমা ট্যানারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, সিইটিপি বা ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থাপনা না থাকা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি) সনদ পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সনদ না থাকায় আমাদের কাছ থেকে চামড়া নিচ্ছেন না। যে দু-একটি দেশের ক্রেতা রয়েছে তারাও আগামী দিনে চামড়া নেয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। এক্ষেত্রে আমাদের একমাত্র চীনের ক্রেতাদের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, আগে ইউরোপের বাজারে প্রতি বর্গফুট চামড়া ১ থেকে ১ ডলার ৬০ সেন্টে বিক্রি করা যেত।চীনের ক্রেতাদের কাছে এখন ৪৫ থেকে ৮০ সেন্টে বিক্রি করতে হচ্ছে। ঈদের দিন থেকে আজ (রোববার) বিকেল পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ১০ হাজার পিস চামড়া সংগ্রহ করেছেন ট্যানারি মালিকরা৷
এদিকে চামড়ার বর্জ্য উন্মুক্ত স্থানে ফেলায় এসব থেকে গড়িয়ে পরা তরল বর্জ্য বৃষ্টির পানিসহ গড়িয়ে নদীতে যাওয়ায় সুযোগ থাকায় পরিবেশ দূষণ হচ্ছে ও নদী দূষণের সম্ভাবনা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, সিইটিপি পুরোপুরি সম্পন্ন না হওয়ায় প্রতি বছরই ট্যানারির অপরিশোধিত তরল বর্জ্যে ধলেশ্বরী নদী দূষিত হয়। কোনো পদক্ষেপ না নিলে এবারেও একই অবস্থা হবে। এরইমধ্যে কঠিন বর্জ্য যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে। যে কারণে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। এরমধ্যে দিয়ে সংশ্লিষ্টদের দূরদর্শীতার অভাব ফুটে উঠেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলার উপ পরিচালক জহিরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, চামড়া শিল্প নগরির কার্যক্রম পর্যবেক্ষনের জন্য ইতিমধ্যে ৪ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি নিয়মিত চামড়াশিল্প নগরি পরিদর্শন করছেন। পরিবেশ দূষণ করতে পারে এমন যেকোন বিষয়ের প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একুশে সংবাদ/ন.ক.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :