ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করে ভয়ভীতি সৃষ্টির অভিযোগে আ`লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ডাঃ গোলাম কবিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে জনসম্মুখে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) দুপুর তিনটার দিকে উপজেলার পৌরসদরের চৌরাস্তা সংলগ্ন খান প্লাজায় এ ঘটনা ঘটে।
ডা. গোলাম কবির নিজেকে ফরিদপুর জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সাবেক সদস্য বলে দাবি করেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পৌরসদরের চৌরাস্তা সংলগ্ন খান প্লাজায় ডাঃ গোলাম কবির নার্সিং ইনস্টিটিউট নামে ডাঃ গোলাম কবিরের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। খান প্লাজার মালিক সালমা বেগমের সঙ্গে দীর্ঘদিন যাবত ভাড়া নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। ঘটনার দিন ডাঃ গোলাম কবির ও বিল্ডিংয়ের মালিক সালমা বেগমের মধ্যে বাক-বিতন্ডার এক পর্যায়ে ডাঃ গোলাম কবির শর্টগান প্রদশর্ন করেন এবং ভয়ভীতি দেখান। এ সময় স্থানীয় জনগণ থানায় খবর দিলে ডাঃ গোলাম কবিরকে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়।
স্থানীয় ব্যাবসায়ী মিজান চৌধুরী বলেন, হট্টগোল দেখে এগিয়ে গিয়ে দেখি ডাঃ গোলাম কবির শর্টগান বের করে গুলি করতে উদ্যত হয়েছেন। তার ড্রাইভার ও স্থানীয় লোকজন এ সময় তাকে নিবৃত্ত করতে চেষ্টা করেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।
বিল্ডিং মালিক সালমা বেগমের মেয়ে জন্নাতুল ফেরদৌস নিপা বলেন, তিনি জোর করে আমাদের ফ্লাট দখল করতে চান। ভাড়া দেন না। ফ্লাটে মেয়েদের নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ করেন। ভাড়া চাইলে ভয়ভীতি দেখান। শর্টগান নিয়ে আমার মাকে গুলি করতে যান। আশাপাশের লোকজন ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
বিল্ডিং মালিক সালমা বেগম বলেন, ডাঃ গোলাম কবির কোন প্রকার চুক্তি ছাড়াই আমার একটি ফ্লাট দখল করে রেখেছেন। ভাড়া দেননা। তিনি এখন আমার পুরো বিল্ডিং দখল করতে চান। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি ভবনে এলে তার কাছে ভাড়া চাইলে তিনি আমার ও আমার মেয়ের উপর ক্ষিপ্ত হন এবং শর্টগান দিয়ে আমাকে গুলি করতে ধেয়ে আসেন। আশপাশের লোকজন ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। পরে পুলিশ অস্ত্রসহ তাকে থানায় নিয়ে গেছে। আমার জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। আমি গোলাম কবীরের শাস্তি দাবি করছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ডাঃ গোলাম কবির বলেন, সব মিথ্যা কথা। আমি নতুন অস্ত্র কিনেছি। লাইসেন্স করার জন্য ফরিদপুর ডিসি অফিসে যাচ্ছিলাম। বিল্ডিংয়ের মালিক সালমা বেগম ও তার মেয়ে নিপা আমার উপর জোরজবরদস্তি করে এবং অস্ত্র কেড়ে নিতে চায়। তখন তাদের সাথে ধস্তাধস্তি হয়।
ফরিদপুর জেলা কৃষক লীগের সভাপতি শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, কৃষক লীগের জেলা কমিটির সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। তিনি ভুয়া পরিচয় দেন। তাকে এর আগেও ভুয়া পরিচয় দেওয়া ও কৃষক লীগের নাম ভাঙতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি তা শোনেন না। তার ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের দায়ভার কৃষক লীগ বহন করবে না।
এ ব্যাপারে বোয়ালমারী থানার ওসি তদন্ত শফিকুল ইসলাম সুমন বলেন, একটি কালো রঙের শর্টগানসহ ডাঃ গোলাম কবিরকে থানায় আনা হয়েছে। তিনি নতুন লাইসেন্স করেছেন। আজকে তার ডিসি অফিসে যাওয়ার কথা ছিল।
তিনি আরো বলেন- শুনেছি বিল্ডিং মালিকের সঙ্গে ভাড়া ও চুক্তি নিয়ে তার ঝামেলা রয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্রসহ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, ডাঃ গোলাম কবিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। তবে এভাবে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে অস্ত্র প্রদশর্ন ও ভয়ভীতি দেখান আইনগত অপরাধ। তার অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
একুশে সংবাদ/ন.ক.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :