পদ্মা সেতু প্রকল্পের ঢাকা-মাওয়া-ভাংগা এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা গোলচত্বর সহ কোন ফ্লাইওভারে বিদ্যুৎ নেই একমাস ধরে। ফলে চুরি ডাকাতি ছিনতাই বেড়ে গেছে।এলাকায় সন্ধ্যার পর এভাবেই নেমে ঘোর অন্ধকার। দূর দুরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ও যাত্রীরা বিপাকে পড়ে অন্ধকারে। এ অবস্থায় যাত্রীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের নামকরণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক। সেই মহাসড়কে ভাঙ্গা উপজেলার ইন্টারচেঞ্জর ভাঙ্গা গোল চত্বর, বগাইল ওভার ব্রিজ ও মালিগ্রাম ওভারব্রিজে এক মাস ধরে বিদ্যুৎ নেই। এতে রাতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার অন্যতম প্রবেশদ্বারটি ভাঙ্গা এলাকায় বিদ্যুৎ বিহীন থাকায় ভূতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
ভাঙ্গা ওজোপাডিকো কর্তৃপক্ষ বলছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (মুন্সীগঞ্জ) কাছে বিদ্যুৎ বিলের প্রায় ৩০ লাখ বকেয়া। বিল পরিশোধ না করায় ওই এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
ভাঙ্গা আবাসিক প্রকৌশলী (ওজোপাডিকো) সাইদুর রহমান জানান, প্রায় ৩০ লাখ টাকা বকেয়া পরিশোধের জন্য একাধিকবার জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর সময়মতো বিল পরিশোধ না করায় গত ৬ জুন ইন্টারচেঞ্জ এলাকার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ইন্টারচেঞ্জ এলাকায় ও সড়কে বাতি বন্ধ থাকায় ওই এলাকায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ওজোপাডিকো দায়ভার নেবে না।
এ বিষয়ে সওজের (শ্রীনগর-মুন্সীগঞ্জ) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে বিদ্যুতের মিটার চুরি হয়ে যাওয়ায় কিছুদিন ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিল পরিশোধের জন্য তাদের কাছে ফান্ড নেই। এজন্যই বিল পরিষদ করা হয় নাই।
স্থানীয়দের ভাষ্য, পদ্মা সেতু প্রকল্প সারা দেশের মধ্যে অত্যাধুনিক স্বপ্নের প্রকল্প। এই প্রকল্প অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকাটা খুবই দুঃখজনক। অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকায় ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ এলাকায় চুরি-ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় স্থানীয়সহ ওই এলাকা দিয়ে যাতায়াতকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
গত এক মাস ধরে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১ জেলার অন্যতম প্রবেশদ্বারটি ভূতুড়ে এলাকায় পরিণত দাবি করে ভাঙ্গা কোর্ট পাড়ের বাসিন্দা খালেদ হাসান বলেন, পুরো এলাকায় রাতে বিদ্যুতের আলো জ্বলে না। শুনেছি, গোলচত্বরের বিদ্যুতের তার চুরি হয়ে গেছে। এ কারণে বিদ্যুৎ নেই।’
ইলিশ পরিবহনের শ্রমিক লিটু ব্যাপারীর দাবি, ১৫ দিন আগে রাতে এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা মডেল মসজিদ সংলগ্ন সড়ক থেকে তাদের পরিবহনের একটি বাস চুরি হয়ে যায়।
এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ারুল হক দিপু বলেন, গোল চত্বর দিয়ে প্রতিদিন আমরা বন্ধুদের নিয়ে হাটাহাটি করি, বিদ্যুৎবিহীন গোল চত্বর থাকায় অনেক ছিনতাই চুরির ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় ঝালমুড়ি বিক্রেতা শুকুরআলী জানান, আমাদের ঝালমুড়ির ব্যবসা সন্ধার পরে জমে উঠে প্রায় একমাস ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় আমাদের বেচাকেনা হয় না। এ কারণে চুরি-ছিনতাইয়ের শঙ্কায় মানুষের সমাগমও কমে গেছে।
বাস কাউন্টারের কয়েকজন জানান, গোলচত্বরটিতে বিদ্যুৎ না থাকায় যাত্রীরা ছিনতাইকারী ও মলম পার্টির খপ্পরে পড়ে অনেকে। এতে এলাকার বদনাম হচ্ছে। পুলিশ টহল দিলেও চুরি-ছিনতাই কমছে না। ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ সাব-স্টেশনের নৈশপ্রহরী সিরাজ খান জানায়, সড়কের মিটার ও বিদ্যুতের তার একাধিকবার চুরি হয়েছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে তিনি অবহিত করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিম উদ্দিন রুবেল বলেন, জেলা প্রশাসনের সমন্বয় সভায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। আবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করবেন তিনি।
ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়ারুল ইসলাম বলেন, ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ এলাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান । তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সচল থাকা খুবই জরুরি। ঈদের আগে ও পরে ছোটখাটো ঘটনা ছাড়া বড় অপরাধের ঘটনা ঘটেনি। তবে এলাকায় পুলিশের তৎপরতা রয়েছে।
একুশে সংবাদ/শা.স.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :