ফাঁসি আর মাত্র একদিন বাকি, মহিউদ্দিনের মরদেহের অপেক্ষায় রয়েছেন স্বজনেরা। গ্রামের বাড়ির মসজিদের সামনে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার পাশেই দাফনের জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন। অধ্যাপক তাহের হত্যার ৪নং আসামী ডক্টর মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের ফাঁসির খবরে গ্রামবাসী যেন স্তব্ধ হয়ে গেছেন।
তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের জান্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায় পরিবারের লোকজন পাথর হয়ে আছেন। তার শতবর্ষী বৃদ্ধা মা কানে একদমই শুনেন না, তিনি এখনো জানেন না যে তার ছেলে একদিন পরেই ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলছে। পরিবারের কেউ তাকে কিছু বুঝতে দিচ্ছেন না। তার বাড়িতে কোন সংবাদকর্মী বা কোন আত্মীয়স্বজনের সমাগম দেখলেই তিনি জানতে চান কি জন্য এসেছেন আপনারা। হয়তো মা খবর শুনলে স্টক করতে পারেন এজন্যই তাকে কিছুই জানানো হচ্ছে না বলে জানান তার ছেলে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, মহিউদ্দিনের সঙ্গে কারাগারে শেষ দেখা করেন গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত। তার সঙ্গে শেষ কথা কি হয়েছে এ বিষয়ে মহিউদ্দিনের চাচাতো ভাই ছিকু মিয়া জানান, কারা কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে শেষ দেখা করার জন্য সময় দেন মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় আমরা সেখানে দেখা করেছি ৫জন।মহিউদ্দিনের স্ত্রী, ভাই আরজু মিয়া,বোন রিনা বেগম, আমি চাচাতো ভাই ছিকু মিয়া, আরেক চাচাতো ভাই শাহীন মিয়া। তার সঙ্গে শেষ কথা কি হয়েছে তার উত্তরে মহিউদ্দিন বলেছেন, অধ্যাপক তাহের ছিলেন আমার বাপের সমতুল্য। তিনি আমাকে হাতে গড়িয়ে মানুষ করেছেন। প্রায়ই আমি তার বাজার ঘাট নিয়ে দিতাম। তার হত্যাকাণ্ডে আমি নির্দোষ আমি কিছুই জানতাম না। আমি ন্যায় বিচার পেলাম না, আমি আল্লাহর কাছে এর বিচার দিলাম। তার স্ত্রীকে বলেছেন, যেহেতু এদেশে ন্যায় বিচার পেলাম না, জায়গা জমি বিক্রি করে আমার ছেলে মেয়ে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যেও।
মহিউদ্দিনের ছোট ভাই আরজু মিয়া বলেন,আমরা আওয়ামী পরিবারের সন্তান, আমার ভাই ৪নং আসামি ছিলেন ১ নং ও দুই নং তারা খালাস পেল অথচ আমার ভাইয়ের ফাঁসি বহাল থাকলো।
আমার ভাই নির্দোষ ছিল বিধায় মামলা সম্পর্কে কোন গুরুত্ব দেন নাই। আমার ভাই ভেবেছিল অন্যায় করি নাই ইনশাআল্লাহ খালাস পাবো। আমার ভাই রোষানলে পড়ে ফাঁসি হলো। আমার ভাইয়ের বিচার পরকালে পাবো।
তিনি আরো বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে একটা চিঠি দিয়েছে সেই চিঠি বাড়ি নিয়ে খুলতে বলেছিলেন, আমরা গাড়ির মধ্যেই চিঠি খুলে দেখেছি, ভেতর লেখা রয়েছে ২৭-৭-২০২৩ বৃহস্পতিবার রাত দশটা এক মিনিটে ফাঁসি কার্যকর হবে। আমরা লাশ অ্যাম্বুলেন্সে পাঠিয়ে দিব, আপনারা শুধু এম্বুলেন্সের ভাড়া দিয়ে দিয়েন।
স্বজনরা আরো জানান,জানাযা বাড়ীর মসজিদে এবং জুমার নামাজের আগেই দেয়ার সময় নির্ধারণ করেন।
মহিউদ্দিনের স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায় নাই।
এদিকে ৭০ থেকে ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধা হাসিনা বেগম জানান, মহিউদ্দিন আমরা গ্রামে বলি সূর্য মিয়া, তার মত ভদ্র ছেলে আমাদের গ্রামে নাই।
এদিকে গ্রামের আরেক যুবক রনি মিয়া জানান, আমরা শুনেছি মহিউদ্দিন চাচা জাপান, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া থেকে সোনার মেডেন পেয়েছেন তিনি একজন বিজ্ঞানী ছিলেন। তার মত এমন লোক আর আমাদের এলাকায় হবে না।
একুশে সংবাদ/সা.শ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :