লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত দুই দিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন বলে জানা গেছে। আক্রান্তদেও মধ্যে নারী-শিশু, যুবক, বৃদ্ধ রয়েছে। প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছেন নতুন নতুন রোগী। ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগীই বাড়ি বা অন্যত্রে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদিকে হাসপাতালের পুরাতন ভবনে সংস্কার কাজ চলমান থাকায় শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে। শয্যা সংকটে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ঠাঁই হচ্ছে বারান্ধায়।
অন্যদিকে এডিস মশার উৎপত্তিতে অপরিচ্ছন্ন শহর, যত্রতত্র ময়লা আবর্জনার স্তুপ ও অসচেতনতাকেই দায়ী করছেন সচেতন মহল। তবে ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে মানুষের ঘরবাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ল্যাবরটরি বা পরীক্ষাগারের সামনে পুরুষ মহিলা রোগী বা তাদের স্বজনরা সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকলেও বসার কোন ব্যবস্থা নেই-নেই কোন বৈদ্যুতিক পাখা ও আলোর ব্যবস্থা। গরমে ঘামে- চিৎকার চেচামেচি আর ডেঙ্গু আতঙ্কে রোগী ও স্বজনদের ত্রাহি অবস্থা।
গতকাল ০৩ আগষ্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরাতন ভবনে সংস্কার কাজ চলমান থাকায় প্রতিদিন শত শত রোগী-ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকাসহ চরম দূর্ভোগ পোহাতেও দেখা গেছে। গতকাল দুপুরে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় এ চিত্র।
একদিকে হাসপাতালের পুরাতন ভবনে সংস্কার কাজ করছে শ্রমিকরা অন্যদিকে ওয়ার্ডের বাহিরে বারান্ধার মেঝেতে বিছানা করে চিকিৎসা নিচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা। রোগী স্বজনদের বসার কোনো ব্যবস্থা নেই, নেই কোনো বৈদ্যুতিক পাখা কিংবা আলোর ব্যবস্থা। গরমে ঘামে-চিৎকার চেঁচামেচি করতে দেখা গেছে রোগী ও তার স্বজনদের।
এসময় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সালমান,আজাদ,নূর হোসেন বলেন, হাসপাতালে বেড নাই। তাই কষ্ট করে মেঝেতে বিছনা করে চিকিৎসা নিচ্ছি। তবে বৈদ্যুতিক পাখা কিংবা আলোর ব্যবস্থা না থাকায় গরমে ঘামে খুব কষ্ট পাচ্ছে তারা। এমন অবস্থায় পরীক্ষা শুরুর পর পরই ডেঙ্গু পরীক্ষার মেশিনটিও বন্ধ হয়ে গেছে দুই দুইবার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হসপিটালের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, এভাবে কাজ করা সম্ভব নয়। পুরো হসপিটালে রোগীদের চাপে আমাদের কাজের গতিও ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। হিমশিম খেতে হচ্ছে হসপিটালের কর্মরত লোকজনের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পৌর এলাকাসহ গ্রাম অঞ্চলেও মশা নিধনে নেয়া হয়নি প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা। রামগঞ্জ পৌর এলাকার সোনাপুর বাজারসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের ড্রেনও বিরেন্দ্র খালের দু’পাড়ে ময়লা-আবর্জনা ও পঁচা পানি জমে থাকায় এডিস মশার বিস্তার ঘটছে। কিন্তু ময়লা আবর্জনাপূর্ন খাল ও সোনাপুর বাজার সহ বিভিন্ন ওয়াডের্র ড্রেনগুলো সংস্কারে পৌরকর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান কোন কার্যক্রম নেই বলে অভিযোগ করেন পৌর বাসিন্দারা। এতে করে তারা আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানান।
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার গুনময় পোদ্দার জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে মানুষের ঘরবাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাসহ সচেতনতার পরামর্শ দেন তিনি।
পৌর আউগানখীল গ্রামের একজন স্কুল শিক্ষিকা বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে আমি, আমার স্বামী ও বড় মেয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। সরকারি হাসপাতালে বেড নাই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, পুরাতন ভবনে সংস্কারকাজ চলছে। আপাতত বাড়িতে চিকিৎসা নিন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন মানিক জানান, প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গতকাল ছিল ৬ জন, আজ ভর্তি হয়েছেন ৯ জন। নতুন করে শনাক্ত হচ্ছে ডেঙ্গু রোগী। বেশির ভাগ রোগীই বাড়ি বা অন্যত্রে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
রামগঞ্জ পৌর মেয়র আবুল খায়ের পাটোয়ারী বলেন, আমরা মশা নিধনে পর্যাপ্ত ওষুধ ছিটিয়েছি। এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ গুনময় পোদ্দার জানান, স্বাভাবিক জ¦রে আক্রান্ত রোগীরা ডেঙ্গু আতঙ্কে হাসপাতালে চলে আসছে। হাসপাতালে সংস্কারকাজ চলমান থাকায় কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার।
একুশে সংবাদ/রা
আপনার মতামত লিখুন :