মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারা দেশের মতো প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের চতুর্থ পর্যায়ে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় ২১০টি ঘর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলনকক্ষে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তিনি।
এদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের কাজ সম্পন্ন না করেই তড়িঘড়ি করে উদ্বোধন ও হস্তান্তরের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন। ২১০টি ঘর হস্তান্তরের কথা থাকলেও বাস্তবে বেশিরভাগ ঘর হস্তান্তর করা হয়নি। এমনকি জায়গাজমির কোনো কাগজপত্রও হস্তান্তর করা হয়নি উপকারভোগীদের মধ্যে। এখনো ঘরের কাজ চলমান রয়েছে। অধিকাংশ ঘর নির্মাণের কাজও চলমান রয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, রাণীশংকৈল উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের চতুর্থ পর্যায়ে ২১০টি ঘর নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশের ন্যায় রাণীশংকৈল উপজেলার আশ্রয়ন প্রকল্পের ২১০টি ঘর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
সে হিসাবে সারাদেশেই গত বুধবার আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমির দলিল ও বিদ্যুৎ লাইনসহ ঘরের চাবি সুবিধাভোগীদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা। অথচ রাণীশংকৈল উপজেলায় ঘর উদ্বোধন হলেও জায়গাজমির কোনো কাগজপত্রও হস্তান্তর করা হয়নি বেশিরভাগ উপকারভোগীদের মধ্যে।
গতকাল বুধবার ঘর পাওয়ার আশায় ঘর হস্তান্তর ও উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, ঘর দেওয়ার কথা বলে অনুষ্ঠানে আনা হয়েছে। কিন্তু আমাদের বলা হয়েছে পরবর্তী সময়ে ঘরের বিষয়ে জানানো হবে।
বৃহস্পতিবার (১০ আগষ্ট) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মীরডাঙ্গী বাজার সংলগ্ন মহেষপুর গ্রামে মোট ৩৪টি বাড়ীর ঘর বসেছে। এ বাড়ীর ঘরগুলোর ১৭টি বাড়ীর ঘর নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছে তবে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন হয়নি। অপরদিকে অবশিষ্ট ১৭টি বাড়ীর ঘরের মধ্যে ৪টি বাড়ীর ঘরের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এদিন সরেজমিনে দেখা যায়, ওই ৪টি বাড়ীর ঘরের মেঝেতে খোয়ার ঢালাই ও আস্তরের (প্লাষ্টার) কাজ চলছে।
একইভাবে নেকমরদ এলাকার চামারদিঘী এলাকায় মোট ২৬টি ঘরের মধ্যে ৫টি ঘরের বিভিন্ন কাজ চলতে দেখা যায়। এছাড়াও ওই বাড়ীগুলোর এখনো অনেক বাড়ীর রং করা হয়নি। বিদ্যুৎ স্থাপন হয়নি এমনকি সুবিধাভোগীরা এখনো ঘরও বুঝে পায়নি।
অপরদিকে নন্দুয়ার ইউনিয়নের মুনিষগাঁও গ্রামের ৬৭টি বাড়ীর রংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। তাদের মধ্যে বনগাঁও এলাকার ভূমিহীন রাজিব আলী নামে একজন বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডেকেছিল। শুনেছি আজ প্রধানমন্ত্রী ঘর উদ্বোধন করে আমাদের হাতে বাড়ীর চাবি তুলে দেওয়া হবে, কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে তা করা হয়নি। খালি হাতেই ফিরেছি।
একইভাবে মীরডাঙ্গী মহেষপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগী আব্দুল হালিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘর উদ্বোধন করলেও। আমরা এখানকার বাসিন্দারা এখনো ঘর বুঝে পায়নি। উল্টো এখনো বাড়ীর নির্মাণ কাজ চলমনা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সামিয়েল মার্ডি মুঠোফোনে বলেন, প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করলেও অনেক বাড়ী এখনো প্রস্তুত হয়নি। তবে খুব শিগগির ঘর প্রস্তুত করে সুবিধাভোগীদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
রাণীশংকৈল সাব-রেজিষ্টার শফি আকরামুজ্জামান বলেন, গত চার দিনে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মোট ১৬৩ বাড়ীর জমির দলিল সম্পাদন করা হযেছে।
রাণীশংকৈল পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম নেজামুল ইসলাম বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ীগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনের জন্য গত বুধবার ১৪৫ টি বাড়ীর তালিকা অফিস মেইলে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এগুলোর কাজ খুব শিগগির শুরু করা হবে।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহরিয়ার রহমান মুঠোফোনে বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে বাড়ীগুলো সুবিধাভোগীদের মাঝে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
একুশে সংবাদ/আ.আ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :