এবছরের চলতি বর্ষার মৌসুমে টানা ভারী বর্ষণ ও বৃষ্টিপাতের কারনে বান্দরবান-থানচি সড়কের পাহাড় ধ্বসের কবলিত পড়ে সড়কে কার্পেটিং খন্দ খন্দ ভাঙ্গার ও বিশাল গর্তের ঝর্ণার পরিনত হওয়ায় জেলার সাথে এক সপ্তাহে ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে থানচির। পাহাড় ধ্বসের পড়ে সড়কে খন্দ খন্দ ভাঙ্গনে ছোট বড় যানবাহন চলাচল করতে পারচ্ছেন না। এতে চরম দুর্ভোগে ভুগতে হচ্ছে সাধারণ জনজীবন। এবং উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোলার নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িতে ফিরেছে জনসাধারণ মানুষ।
রোববার (১৩ আগষ্ট) দুপুরে বান্দরবান জেলার সাথে থানচির সড়ক যোগাযোগে বন্ধের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাঃ আবুল মনসুর সাংবাদিকদের বলেন, চলতি বর্ষার মৌসুমে টানা ভারী বৃষ্টিপাতের সাঙ্গু নদী উজানে নদীর পানি স্রোতের গতিবেগ বৃদ্ধি পাওয়ায় তিন্দু ও রেমাক্রী দুই ইউনিয়নের সড়ক ও নৌ-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ঘটে। এছাড়াও বৃষ্টিপাতের বান্দরবান-থানচি সড়কে বিভিন্ন স্থানে কালভার্ট সেতু পানিতে ডুবে যাওয়ার কারনে জেলার সাথে থানচি উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ঘটেছিল। ঝুম বৃষ্টির থামার পরে থানচি উপজেলার সাথে দুই ইউনিয়নের নৌ-যোগাযোগ স্বাভাবিক হলেও বান্দরবান-থানচি সড়কে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে এখনো জেলার সাথে থানচি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে সাঙ্গু নদীতে ভয়াল পানি স্রোত কমে যাওয়ার কারণে নৌ-পথে যোগাযোগে যাতায়াতের স্বাভাবিক হয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, টানা বৃষ্টিপাতের পাহাড় ধ্বসের থানচি ও বান্দরবান জেলার সাথে যোগাযোগ সড়কের ডাক বাংলো, নীলগিরি, মিলনছড়ি, জীবন নগর, গ্যালেঙ্গা ঝিড়ি উপরে কালা পাহাড়, শিলা ঝিঁড়ি, বিদ্যামনি পাড়া এলাকাসহ সড়কে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধ্বসের পড়ে বিশাল গর্তের ঝর্ণার পরিনত হয়। সড়কে কিছু কিছু স্থানে পাহাড় থেকে বিশালাকার পাথর সড়কে মাঝখানে পড়ে থাকার কারণে ছোট-বড় যানবাহন চলাচলে অনুপযোগী হওয়ায় জেলার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ঘটেছে থানচি।
আরো জানা গেছে, থানচির আলীকদম অভ্যন্তরীন সড়কে ২৭ কিঃমিঃ অংম্পু পাড়া এলাকার সড়কে পাথর পড়ে থাকায় আলীকদম উপজেলার সাথেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বর্তমানে বান্দরবান জেলার সাথে থানচির যোগাযোগে নৌ-পথে যাতায়াতে অবলম্বন করেছে সাধারণ মানুষ।
নৌ-পথ ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার ব্যাপারে জানতে চাইলে রেমাক্রী ইউপি চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা (রনি) বলেন, এই বর্ষার মৌসুমে টানা ভারী বৃষ্টিপাত ৫-৬ দিনের মাথায় বৃষ্টির থেমে যায়। এতে সাঙ্গু নদী উজানে নদীর পানি স্রোতের গতিবেগ কমে যাওয়ার কারণে থানচি সদর সাথে দুই ইউনিয়নের নৌ-যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কাটিয়ে স্বাভাবিক হয়েছে। কিন্তু বান্দরবান জেলার সাথে সড়ক যোগাযোগে সড়কে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কারণে এখনো জেলার সাথে থানচির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। চলতি বর্ষার মৌসুমে বিচ্ছিন্নতার এলাকায় মানুষের নিরাপদ স্থানে সরানো’সহ জানমালের ক্ষয়ক্ষতি রক্ষার্থে ব্যবস্থা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, বান্দরবান থানচি সড়কের উপজেলা সদর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরত্বে বিদ্যমনি পাড়া ও দিংতে পাড়া মাঝামাঝি স্থানের সড়কে খন্দ খন্দ ভাঙ্গন ও পাহাড় ধ্বসের সড়কে উপর গর্তের ঝর্ণার সৃষ্টি হয়েছে। শিলা ঝিঁড়ি এলাকার মেনরোয়া পাড়াসহ সড়কে বিভিন্ন স্থানের ছোট বড় খন্দ খন্দ ভাঙ্গনে গর্তে নালা পরিনত হয়ে গেছে। টানা বৃষ্টিপাত বর্ষন থামলেও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে সারাদিনই। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধ্বসের আশষ্কায় ঝুকিপূর্ণ আরো বেশি।
স্থানীয়রা জানান, এ বছরের বর্ষার মৌসুমে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড় ধ্বসের সড়কে উপর পাথর ও সড়ক খন্দ খন্দ ভাঙ্গনে বান্দরবানে সাথে থানচির সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে ভুগতে হয়েছে সাধারণ জনজীবন। এই বর্ষায় সাঙ্গু নদী উজানে নদীর পানি স্রোতের গতিবেগ বৃদ্ধির ফলে সাঙ্গু নদী পাশে ফলসের শষায় নষ্ট হয়েছে। পাহাড় ধ্বসের পড়ে জুম, ধানের জমি, ফলজ্য চাষের উপর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত বেশি প্রভাব পড়েছে। সরকারের সহযোগিতা পদক্ষেপের সাথে ক্ষতিগ্রস্থ সড়কের সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট উব্ধর্তম কর্তৃপক্ষের নিকট জোড়ালো দাবী জানান স্থানীয়রা।
এদিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোহাম্মদ সূজন মিয়া বলেন, অভ্যন্তরীন সড়কে ক্ষয়ক্ষতি পরিমান বিশাল এবং দুর্যোগে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়কটি যেহেতু সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রনে, সেহেতু বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীনে উদ্ধর্তম কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। টানা বৃষ্টিপাতের পাহাড় ধ্বসের পাহাড়ের জুম, ধানের জমি, ফসলের চাষের উপর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্যা ও পাহাড় ধ্বসের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, টানা বৃষ্টিপাতের মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পাহাড়ের মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে পারে। পরিবারের শিশুসহ প্রাপ্ত-বয়স্কদের যত্ন ও মশারী ব্যবহার এবং অসুস্থতা দেখা দিলে নিকটতম স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র কিংবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যোগাযোগ স্থাপনে অনুরোধ জানান তিনি।
থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাঃ আবুল মনসুর বলেন, টানা বৃষ্টিপাতের পাহাড় ধ্বসের সড়কে উপর পাথর এবং বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত পরিনত হওয়ায় ছোট বড় যানবাহন চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে পরিদর্শন করে সম্পুর্ন পরিস্থিতির সেনাবাহিনী ও জনপ্রশাসনের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পরিদর্শনের তদন্তের প্রতিবেদন পেশ করে রেখেছি। এখনো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে, বৃষ্টির কমলে সংস্কারের কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যে কোন দুর্যোগে মোকাবেলা ও সহযোগিতার জন্য উপজেলা কন্ট্রোলরুম সাথে যোগাযোগ স্থাপনে আহব্বান জানান তিনি।
একুশে সংবাদ/চ.ম.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :