উত্তর জনপদের মৎস্য ভান্ডার হিসাবে খ্যাত নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় বর্ষা মৌসুমের আগমনী বার্তায় বিভিন্ন হাট বাজারগুলোতে লক্ষ্য করা যাচ্ছে দেশী প্রজাতির ছোট জাতের মাছ ধরার জন্য গ্রাম বাংলার সহজ লভ্য প্রাচীনতম উপকরণ বাঁশের তৈরি খলশানি (চাঁই) বিক্রির ধুম। গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পানিতে উপজেলার খাল-বিল ও জলাশয়ে পানি বাড়তে থাকায় উপজেলার হাট বাজারগুলোতে প্রতিদিন শত শত খলশানি বিক্রি হচ্ছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা যায় হাট-বাজারগুলোতে প্রতিদিন শত শত খলশানি (চাঁই) বিক্রি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী আহসানগঞ্জ হাটের খলশানি পট্টিতে বেচা কেনার জন্য জনসাধারণের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার সিংসাড়া, মিরাপুরসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলার নিজামপুর, ঝিনা, খট্টেশ্বর, কৃষ্ণপুর-মালঞ্চিসহ বিভিন্ন গ্রামের ঋষি সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যাসহ পরিবারের সকল সদস্যরা মিলে এই অবসর মৌসুমে তাদের নিপুণ হাতের তৈরি খলশানি উপজেলার আহসানগঞ্জ, কাশিয়াবাড়ি, সুটকিগাছা, পাইকরা, বজ্রপুর, বান্ধাইখাড়া, মির্জাপুর- ভবানিপুরসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রির জন্য পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
বাঁশ, কটের সুতা এবং তাল গাছের আঁশ দিয়ে তৈরি এসব খলসানি মানের দিক দিয়ে ভালো হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের অঞ্চল ভেদে বিশেষ করে হাওর অঞ্চলে মাছ শিকারীরা এসব হাট-বাজার থেকে পাইকারি মূল্যে নিয়ে যায়। ফলে এ পেশায় জড়িত পরিবারগুলো বর্ষা মৌসুমে এর কদর বেশিও যথাযথ মূল্য পাওয়ায় মাত্র দুই তিন মাসেই খলশানি বিক্রি করেই তারা প্রায় বছরের খোরাক ঘরে তুলে নেয়।
লাভ খুব বেশি না হলেও বর্ষা মৌসুমে এর চাহিদা থাকায় রাত দিন পরিশ্রমের মাধ্যমে খলশানি তৈরি করে তারা বেজায় খুশি। এক দিকে যেমন সময় কাটে অন্য দিকে লাভের আশায় বাড়ির সকল সদস্যরা মিলে খলশানি তৈরি কাজ করে অভাব অনটনের কবল থেকে একটু সুখের নিঃশ্বাস ফেলে।
এসব খলশানি তৈরিতে প্রকার ভেদে খরচ হয় ৭০ থেকে ২শত টাকা, বিক্রি হয় ১০০ থেকে ৩ শত টাকা পর্যন্ত। এতে করে খুব বেশি লাভ না হলেও পৈত্রিক এ পেশা ছাড়তে তারা নারাজ। আধুনিকতার উৎকর্ষের তৈরি ছোট জাতের মাছ ধরার সুতি, ভাদায় ও কারেন্ট জালের দাপটের কারণে দেশি প্রযুক্তির বাঁশের তৈরি খলশানি সামগ্রী এমনিতেই টিকে থাকতে পারছে না।
কিন্তু জীবনের তাগিদে তারা একেবারে কর্মহীন থাকতেও চায় না। তবে সরকারি বেসরকারি পৃষ্টপোষকতা ও সহযোগীতা পেলে মৌসুমের আগে বেশি পরিমান খলশানি মজুত করতে পারলে ভরা মৌসুমে বেশি দামে বিক্রি হলে লাভ ভালো হয়।
উপজেলার একাধিক খলশান বিক্রেতার সাথে কথা বললে তারা জানান, খলশানি তৈরির সামগ্রীর দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তাই আগের মতো আর লাভ হয় না। দীর্ঘ দিন থেকে এ ব্যবসায় জড়িত তাই ছাড়তেও পাড়ছি না।
তারা আরও জানান, বর্ষা এবার আগাম শুরু হওয়ায় খলশানির কদরও বেড়েছে। হাট বাজারগুলোতে খলশানি বিক্রির ধুম পড়েছে।
আহসানগঞ্জ হাটে খলশানি কিনতে আসা মজিবর আলী জানান, খলশানি দিয়ে চিংড়ি, বোয়ালসহ নানান ধরনের দেশি প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে। তাছাড়াও খলশানিতে ধরা মাছের চাহিদাও থাকে বেশি। কারণ খলশানির মাছ তাজা থাকে। উপজেলার সচেতন মহল মনেকরেন খলশানি তৈরি কারিগররা সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতা পেলে তারা মাছ ধরার উপকরণ বেশি বেশি তৈরি করতে উৎসাহ পাবেন। সেই সাথে এ শিল্পের সাথে জড়িত বাঁশশিল্পও টিকে থাকবে, স্বাবলম্বী হবে কারিগর পরিবারগুলো।
একুশে সংবাদ/ন.ন.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :