ময়মনসিংহের নান্দাইলে ড্রাগন চাষে ভালো ফলন পেয়ে এবং বাজারে চাহিদা থাকায় চাষাবাদে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের। উন্নত জাতের ড্রাগন ফলের বাগান করে সফলতা পেয়েছেন উদ্যোক্তারা। দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এই ফলের চাষাবাদ। বর্তমান মৌসুমে বৃষ্টিতে ড্রাগনের ব্যাপক ফলন হয়েছে। উৎসাহ উদ্দীপনায় বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা। বিদেশি এই ফল দেশের মাটিতে সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করে বাম্পার ফলনপেয়ে উদ্যোক্তাদের চোখে-মুখে ফুটেছে আনন্দের ঝিলিক।
সরজমিনে নান্দাইল উপজেলার কাটলীপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার রফিউল কবির মোহন ৩০ শতক জমিতে ড্রাগন বাগান করেছেন। প্রত্যেকটি গাছের পাতায় পাতায় চিমটি দিয়ে আকড়ে ধরে আছে অসংখ্য ড্রাগন ফল। ছোট বড় মাঝারি ফল আর পাতা সবুজ রঙে মিশে একাকার। সবুজ ফলগুলো পাকলে গোলাপি রং ধারণ করে। দেখতে চমৎকার সুস্বাদু এই ফলটির ফলন ভালো এবং বাজারে বেশ চাহিদা থাকায় চাষাবাদে ঝুঁকছেন অনেকেই।
উদ্যোক্তা রফিউল কবির মোহন জানান, তিনি ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ৩০০টি পিলারে চারটি করে ড্রাগনের চারা রোপণ করেন। গত বছরের মে মাস থেকে ফলন ধরা শুরু করে। প্রত্যেকটি গাছেই ভালো ফলন হয়। জুন থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ফল বিক্রি করেন। দুই সিজনে এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন তিনি। এই সিজনে আরও দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। তিনি জানান, এই মৌসুমের শুরুতে প্রাকৃতিক দূর্যোগ অতিরিক্ত তাপদাহের জন্য এপ্রিল, মে, জুন তিনবার ফুল ঝরে যাওয়ায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে এরপর থেকে বৃষ্টি থাকায় ব্যাপক ফলন ধরে। যা কল্পনাও করিনি। বৃষ্টিতে ড্রাগনের বাম্পার ফলন হওয়ায় চাষবাদের প্রতি আরও আগ্রহ বেড়েছে আমাদের। ড্রাগন বাগান করতে এই পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। এই মৌসুমেই খরচ উঠে যাবে। চাষী মোহনের বড়ভাই সামছুল কবির নিক্সন জানান, নতুন বাগান এরপরও ভালো ফলন হয়েছে। সামনের বছর বাগানটি পরিপূর্ণ হবে। কোন ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে আরও দ্বিগুণ ফলন যাবো। বর্তমানে ২২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা ধরে প্রতি কেজি ড্রাগন পাইকারি বিক্রি করছি। অন্যান্য বাগানের তুলনায় আমাদের বাগানের ফল সুস্বাদু এবং কালারও চমৎকার। তুলনামূলক ভাবে দামেও বেশি দিচ্ছে পাইকাররা। জাত বাচাইয়ে আমরা উন্নত জাতের মালোশিয়ান পিংক জাতের বাউ ড্রাগন-৪ চাষ করেছি, যা দেখতে গোলাপি, সাইজও গোলাকার। খুবই মিষ্ট ও সুস্বাদু। বাজারে এর চাহিদা অনেক বেশি।
ড্রাগন চাষে উৎসাহ সম্পর্কে রফিউল কবির মোহন জানান, প্রথমে ছোট পরিসরে ৩ শতক জমিতে ২০১৬ সালে ২৮টি পিলার দিয়ে শুরু করি খাওয়ার জন্য। পরে দেখি ব্যাপক ফলন হয়েছে। ফলও অত্যান্ত সুস্বাদু। আন্ত বাজারে খাওনোর মত। যা আমি কল্পনাও করিনি। এখান থেকে খাবারের বাহিরে অনেক ফল বিক্রি করি। এতে অর্থনৈতিক ভাবে ভালো লাভবান হই। এরপর থেকে আমার আগ্রহ বাড়ে। চিন্তা করি আরেকটি বাগান করার। আমার সফলতা দেখে পরিবার থেকে অর্থনৈতিক ভাবে সহযোগিতা করে। এবং পরিবারের সবাই বাগানে শ্রম দেয়। পরে ২০২১ সালে নতুন চারা উৎপাদন করি এবং ৩০ শতক জমির মধ্যে মাটি ভরাট করে ৩০০টি পিলার স্থাপন করে বাগান করি। এতে ওই জমিতে মাটি ভরাট, পিলার তৈরি, বাগানের চারিদিকে বেঁড়া দেয়া এবং চারা লাগানোসহ সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
একুশে সংবাদ/স ক
আপনার মতামত লিখুন :