ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার থানা সংলগ্ন গ্রীন (প্রা.) হসপিটাল এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল সিজারে এ্যামি আক্তার (১৮) নামের এক প্রসূতির পেটের ভিতর গজ ও মলমূত্র রেখে সেলাই করার অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (২৭ আগট) সন্ধ্যায় এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বামী তুষার মিয়া বাদী হয়ে ভাঙ্গা থানায় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৪ মার্চ ভাঙ্গা গ্রীন (প্রা.) হসপিটাল এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বাদীর স্ত্রী এ্যামি আক্তারকে সন্তান প্রসবের জন্য সিজার করতে যায়। সেখানে চিকিৎসক তামান্না হাসান ও গোপাল দেব এদের তত্ত্বাবধানে তার সিজারের মাধ্যমে পুত্র সন্তানের হয় । ২৭ মার্চ ওই নারীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। কিছুদিন পর এ্যামি আক্তার অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে গ্রীন হসপিটালের চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভুক্তভোগীকে আবার হসপিটালে নেওয়া হয়। তখন চিকিৎসকরা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। কিন্তু পরীক্ষা নিরীক্ষায় কোন সমস্যা ধরা পড়েনি। শুধু স্ত্রীর থাইরয়েডের সমস্যা আছে বলে ভুক্তভোগীদের বুঝ দেন।
পরে ফরিদপুরেও অভিজ্ঞ ডাক্তার দেখান সেখানেও সমস্যা ধরা পড়েনি। কিন্তু বাদির স্ত্রীর অসুস্থতা যায়নি। পরে তারা চলতি মাসের ২২ আগস্ট রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালের অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। ২৩ আগস্ট ল্যাব এইড হাসপাতলে ভর্তি করান। সেখানে চিকিৎসকরা আধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানতে পারেন রোগীর পেটে গজ ও মলমূত্র রেখে সিলাই করা হয়েছে। তখন চিকিৎসকরা অপারেশন করে গজ ও মলমূত্র বের করেন। এতে বাদী তুষার মিয়া সামাজিকভাবে ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।
অভিযোগে আরো বলেন, তিনি জানতে পারেন সিজারের জন্য অভিজ্ঞ চিকিৎসকের নাম ব্যবহার করা হয় কিন্তু সিজার করান অনভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা। এমন অহরহ করে থাকেন বলে তুষার মিয়া জানতে পারেন।
এ ঘটনায় তুষার মিয়া তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা ও সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান।
এ ঘটনায় চিকিৎসক তামান্না হাসানের মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি।
এদিকে গ্রীন (প্রাঃ) হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিকের চেয়ারম্যান মাসুদ মিয়া জানান, আমাদের এখানে পাঁচ মাস আগে সিজার করিয়েছেন এটা ঠিক, কিন্তু পেটের ভিতর গজ ও মলমূত্র ৫-৭ দিন থাকলেই রোগী মারা যাওয়ার কথা। কোনভাবেই টিকে থাকার কথা নয় পাঁচ মাস পর্যন্ত। আমাকে এবং আমার হসপিটালে এই কয় মাসের মধ্যে একবার হলেও অবগত করান নাই বা আসেন নাই ভুক্তভোগীরা। আমার হাসপাতালের চিকিৎসক তামান্না হাসান ঢাকা কুর্মিটোলা হসপিটালের একজন চিকিৎসক এবং গোপাল দেব ভাঙ্গা সরকারি হসপিটালের এনেস্তেছিয়া ডাক্তার, এবং আমার আরএমও ডঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন তিনিও সিজারে ছিলেন। সকলেই সার্টিফিকেট ধারি চিকিৎসক।
তুষার মিয়া তারা কিভাবে কি করছে এটা আমার জানা নাই। তবে একটা গ্রুপ আমাকে ব্ল্যাকমেইল করার জন্য আমার হসপিটালের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। আমার হসপিটালের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য। যে অভিযোগ তুলেছে সেটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিম উদ্দিন জানান, এমন একটি অভিযোগ আমি পেয়েছি, আমি একটি তদন্ত কমিটি করেছি, এক্সকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমানকে প্রধান করে, ভাঙ্গা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার প্রাণেশ চন্দ্র পণ্ডিত ও ভাংগা থানা অফিসার ইনচার্জ জিয়ারুল ইসলামকে এই তিনজনকে তদন্তের জন্য একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্টে সত্যতা মিললে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অন্যদিকে ভাংগা থানা অফিসার ইনচার্জ জিয়ারুল ইসলাম জানান, পাঁচ মাস আগের ঘটনার বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একুশে সংবাদ/স.শ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :