সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে প্রায় ১০০ টি অবৈধ সুতা ডায়িং অ্যান্ড প্রসেস মিল। এই সমস্ত ডায়িং ও প্রসেস মিলের ব্যবহৃত কেমিক্যাল মিশ্রিত বিষাক্ত তরল বর্জ্য ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বা বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন না করে পাইপের সাহায্যে ফেলা হচ্ছে হুড়াসাগরে।
ফিরোজা রঙের বিষাক্ত তরল বর্জ্য নদীর পানিতে মিশে এবং বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে প্রবাহিত হচ্ছে বেলকুচি উপজেলাসহ অন্যান্য অঞ্চলের বাণিজ্যিক মাছের খামার, কৃষি জমি, খাল, বিল, পুকুর ও জলকরে। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে জনসাধারণ ও চরম ক্ষতির মুখে জীবজগৎ। এছাড়া সুতা ডায়িং অ্যান্ড প্রসেস মিলে সুতায় বিভিন্ন ধরনের রঙ করা হচ্ছে। সুতা রঙের কাজে এসিড, কস্টিক সোডা, ব্লিচিং পাউডারসহ বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। অবিলম্বে এসব প্রসেস মিল অ্যান্ড ডায়িং কারখানা জনবসতিহীন এলাকায় স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বেলকুচি উপজেলায় প্রসেস অ্যান্ড ডায়িং কারখানায় কেমিক্যাল বর্জ্যের ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বা বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) নেই। প্রসেস মিলের বয়লার ও ডায়িং কারখানার দূষিত তরল বর্জ্য প্রবাহিত হয়ে হুড়াসাগরে যাচ্ছে। সেখানে কৃষকেরা গবাদিপশুসহ স্থানীয় লোকজন গোসল করছে। অনেকেই নিরূপায় হয়ে ওই পানি ব্যবহার করছেন। এতে তারা চর্মরোগ, ক্যান্সার, পেটের পীড়াসহ নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কারখানার পাশের খালে রাসায়নিক মিশ্রিত তরল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। ওই তরল বর্জ্য ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে গিয়ে মিশছে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। ওই এলাকার বেশ কিছু অগভীর নলকূপে দুর্গন্ধযুক্ত পানি উঠছে। এছাড়া নদীর জলজ উদ্ভিদ মরে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো: আব্দুল আলীম সরকার, মো.ফজলার রহমান খাঁন বলেন, মো: দুলাল ( সাবেক মেম্বর)সহ আরও অনেকে বলেন, উপজেলার তামাই এলাকায় মুন্না কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ ও মেসার্স এস.আর মার্চরাইজ মিলের বিষাক্ত বজ্র পরিশোধন না করে হুড়াসাগরে ফেলছে ফলে বিষাক্ত পানি এলাকার নদী, নালা,খাল, বীল,পুকুর ও জলকরের পানিতে মিশে যাচ্ছে। আমরা সরকারি জলকর লিজ নিয়ে ৩৫০ বিঘা জলকরে দেশিয় প্রজাতি বানিজ্যিক মাছের খামার করেছে। বিষাক্ত পানির কারনে আমাদের প্রতিদিন প্রায় ৮-১০ মন মাছ মারা যাচ্ছে। আমরা ক্ষতির মুখে পড়ছি।
সিরাজগঞ্জ জেলা কার্যালয় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো: আব্দুল গফুর বলেন, ৫৩ টি ডায়িং এন্ড প্রসেস মিলে নোটিশ পাঠিয়েছি। এই প্রতিষ্ঠানগুলো যেন ইটিপি স্থাপনের মাধ্যমে ডায়িং এন্ড প্রসেস মিল পরিচালনা করে। এতে পরিবেশ দুষন মুক্ত হবে তাদের শিল্প টিকিয়ে থাকবে।
বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফিয়া সুলতানা কেয়া বলেন, স্থানীরা এবিষয়ে আমাকে কোন অভিযোগ করে নাই। সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করবো। পরিবেশ দূষন মুক্ত রাখতে হলে অবশ্যই ইটিপি স্থাপন করতে হবে। এলাকায় ডায়িং এন্ড প্রসেস মিলের মালিকদের ইটিপি স্থাপনের জন্য সচেতনতা করতে হবে। এরপরও যদি ইটিপি স্থাপনের ব্যবস্থা না নেই আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
একুশে সংবাদ/ম.দ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :