২০১৮ সালে স্বল্প মেয়াদী ডিপ্লোমা পাস করেই প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ১৭ বছরের অভিজ্ঞ ডেন্টিস্ট পরিচয়ে বড় বড় সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে ‘ফেন্সি ডেন্টাল হোম’ নামে একাধিক চেম্বার খুলে কর্মজীবন শুরু করেন ওমর ফারুক নামে এক ব্যক্তি। ডেন্টিস্ট না হয়েও বছরের পর বছর নীলফামারীর ডোমার পৌর এলাকায় সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে ‘ফেন্সি ডেন্টাল হোম’ নামে একাধিক চেম্বার খুলে দীর্ঘ দিন থেকে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন তিনি। অবশেষে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ফেন্সি ডেন্টাল হোমের স্বত্বাধিকারী ওমর ফারুককে জরিমানা ও প্রতিষ্ঠানটি সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে ডোমার নিউ মার্কেটের ফেন্সি ডেন্টাল হোমে অভিযান পরিচালনা করেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল আলম বিপিএএ। এ সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) জান্নাতুল ফেরদৌস হ্যাপি উপস্থিত ছিলেন।
সেখানে ওই ডেন্টাল হোমের চিকিৎসকের মিথ্যা অভিজ্ঞতার প্রচার সাইনবোর্ড ও রেজিষ্ট্রেশন না থাকার কারণে ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলেই ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ফেন্সি ডেন্টাল হোমের স্বর্তাধিকারী ওমর ফারুককে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। একইসাথে পূর্বের অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদনে সত্যতা পাওয়ায় সিভিল সার্জনের নির্দেশে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প: প: কর্মকর্তা ডা. রায়হান বারী ডেন্টাল হোমটি সাময়িক ভাবে বন্ধ ঘোষনা করেন। আদালতকে সহযোগিতা করেন ডোমার থানা পুলিশ ও র্যাব-১৩ সিপিসি-২ নীলফামারী কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী হাসান প্রমূখ।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, ডোমার পৌর শহরের নিউ মার্কেটে ‘ফেন্সি ডেন্টাল হোম’ এর ওমর ফারুকের বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জেন্ট বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বাঁধন ইসলাম নামে এক যুবক। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা: তপন কুমার রায়কে প্রধান করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তদন্তে সাইবোর্ডে ১৭ বছরে অভিজ্ঞতা লিখলেও সনদ দেখাতে পারেননি ফেন্সি ডেন্টাল হোমের স্বত্বাধিকারী ওমর ফারুক। এছাড়াও তার দাবিকৃত ডিগ্রির ফটোকপি দেখালেও মূল সনদ দেখাতে পারেনি, ডেন্টিস্ট না হওয়া সত্ত্বেও কার্য পরিধির বাইরে দত্ত সম্পর্কিত অস্ত্রোপচার ও রোগীকে চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র প্রদান করেন তিনি। সে সময়ে তার ট্রেড লাইসেন্স মেয়াদ উত্তীর্ণ ছিল। ওই তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ৩০ অক্টোবর মো. ওমর ফারুক ও তার প্রতিষ্ঠান ফেন্সি ডেন্টাল হোমের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়েরসহ বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করে পত্র প্রেরণ করেন নীলফামারী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের জে এম শাখার সহকারী কমিশনার আসমা-উল-হুসনা। সেই ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জান্নাতুল ফেরদৌস হ্যাপি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ফেন্সি ডেন্টাল হোমসহ আরেকটি ডেন্টাল কেয়ারকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
জরিমানার কয়েকদিন পর ১২ নভেম্বর থেকে ফেন্সি ডেন্টাল হোমের স্বত্বাধিকারী ওমর ফারুক ডাক্তার মোহাইমিনুল ইসলামের নামে ব্যবস্থাপত্র তৈরি করেন। সেই ব্যবস্থাপত্রে তিনি ব্যবহার করে রোগী দেখছেন ও নিজেই স্বাক্ষর করেন। ওই ডেন্টাল হোমে মাঝে মধ্যে ডাক্তার মোহাই মিনুল ইসলাম আসলেও দীর্ঘ দিন ধরে তিনি আর সেখানে বসেন না। পরে উনার পরিবর্তে ডাঃ মোঃ সিদরাতুল মোনতাহা শিক্ষানবিশ ডেন্টাল টেকনোলজিস্ট ফেন্সি ডেন্টাল হোমে দন্ত চিকিৎসকের যাবতীয় কার্য সম্পাদন করছিলেন। তাকে বিডিএস দন্ত চিকিৎসকের পরিচয় দেন ওমর ফারুক।
ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল আলম, বিপিএএ জানান, ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে একাধীক অভিযোগ রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে তার পরিচালিত ফেন্সি ডেন্টাল হোম বন্ধ করার সুপারিশ করেছে। আমরা আজ সরেজমিনে তদন্ত করে বিভিন্ন অসংগতি পেয়েছি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ -এর ৪৪ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা সেবা গৃহীতাকে প্রতারিত করায় ওমর ফারুককে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা ও ফেন্সি ডেল্টাল হোমটি সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
একুশে সংবাদ/র.ই.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :