নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে পূর্ববর্তী ইউপি চেয়ারম্যান-সদস্যদের মেয়াদ পূর্তির আগেই পরিষদ দখলের অভিযোগ উঠেছে।
রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য ও সাধারণ সদস্যরা পরিষদ দখলে নেয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৯টায় হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তালা ভেঙে গয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শরীফ ইবনে ফয়সাল মুনের সমর্থক, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য ও সাধারণ সদস্যরা। এসময় ওই ইউপি চেয়ারম্যানে মোঃ সামছুল হকের নেমপ্লেট পাল্টে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শরীফ ইবনে ফয়সাল মুনের নেমপ্লেট প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও উপস্থিত সবার মাঝে জিলাপি বিতরণ করেন তাঁরা। পরে ঘটনাস্থলে ডিমলা থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোঃ সামছুল হক জানান, নতুন জনপ্রতিনিধিগণ কবে দায়িত্ব গ্রহণ করবে জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জানতে চেয়ে চিঠি করেছে। যার উত্তর এখনো আসেনি। চিঠির জবাব পর্যন্ত নতুন জন প্রতিনিধিদের অপেক্ষা এবং কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা না করার কথা বলেছে। কিন্তু নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা অবৈধভাবে তালা ভেঙ্গে পরিষদে প্রবেশ করেছে এবং আমার ড্রয়ার ভেঙে টাকা নিয়ে যায়। কাগজে কলমে নভেম্বর মাসের ১৮তারিখ পর্যন্ত আমি বৈধ চেয়ারম্যান।
তিনি আরো জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নীলফামারী জেলা উপ-পরিচালক মহোদয়কে অভিযোগ জানিয়েছি। তারা জানিয়েছে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরিষদে অবৈধভাবে প্রবেশ এবং আমার টাকা চুরির বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এবিষয়ে গয়াবাড়ী ইউপি সচিব মোঃ মাহাবুব ইসলাম জানান, আমি অফিসে আসার পর চেয়ারম্যানের রুমে খোলা এবং স্থানীয় লোকজনসহ নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বসতে দেখছি। নেমপ্লেট পরিবর্তন এবং চেয়ারম্যানের রুমের তালা ভাঙ্গার বিষয়ে তিনি তেমন কিছুই জানেন না।
ইউনিয়ন পরিষদের সার্বিক বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, চেয়ারম্যান তো প্রতিদিনই অফিসে বসেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে পরিষদে আজ আসেননি। যেহেতু নির্বাহী দায়িত্ব এখনো চেয়ারম্যান সাহেব আছেন সব বিষয়ে তাকেই প্রশ্ন করুন।
গ্রাম পুলিশ সদস্য মশিয়ার রহমান জানান, সকালে বাবর আলী (নবনির্বাচিত সদস্য ৬ নম্বর ওয়ার্ড) মেম্বার আমাকে কল দিয়ে চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন এবং চৌকিদার টেক্স কাগজ চেয়েছে। আমি জানাই সকাল দশটায় চেয়ারম্যান পরিষদে আসবেন আপনি তখন আসেন। প্রত্যয়ন এবং চৌকিদার টেক্সের কাগজ দেব। লোক মারফতে জানতে পেরেছি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে খোলা। আমি ভেবেছি জনগণের কাজ-বাজের জন্য প্রতিদিনের মতো আজকেও চেয়ারম্যান অফিসে গিয়েছে। চেয়ারম্যানকে কল দিলে জানতে পারি তিনি অফিসে আসেননি। পরে পরিষদে আসলে দেখতে পাই চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের তালা ভাঙ্গা এবং নেমপ্লেট পরিবর্তন করা হয়েছে। চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে নবনির্বাচিত সদস্যসহ অনেকেই দেখতে পাই। তিনি আরো জানান, এখনো আমার কাছে চেয়ারম্যানের রুমের চাবি আছে। আমাকে বললেই তালা খুলে দিতাম।
নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শরীফ ইবনে ফয়সাল মুন জানান, ইউনিয়ন পরিষদের বিধান অনুযায়ী ২৪ আগস্ট শপথ হয়েছে। আর শপথের ৩০ দিনের মধ্যে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত করতে হবে। শপথ অনুষ্ঠানে ডিসি মহোদয় বলেছেন " আজ থেকে আপনাদের কার্যক্রম শুরু" এবং আপনারা নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান। সে অনুযায়ী ৩সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাচন অফিস, উপজেলা নির্বাহী অফিস এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে রেজুলেশন জমা দেওয়ার জন্য নীলফামারী গিয়েছিলাম। পূর্ববর্তী ১২মেম্বারদের মধ্যে অনেকে নির্বাচনে অংশ নেননি এবং এবারে সবাই নতুন মেম্বার নির্বাচিত হয়েছেন। আগের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা পরিষদে বসে না। যে কারণে এলাকার লোকজন নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কাছে আসতেছে। টিসিবি কার্ড শতভাগ অনলাইনের আওতায় আসায় নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিগণ সুবিধাভোগীদের সহযোগিতা করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে গেছে। তালা ভাঙ্গে নাই। কয়েকজন জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে ওয়াশরুম ব্যবহারের জন্য গেছে এবং ইমান আলী (গ্রাম পুলিশ) তালা খুলে দেয়। এখানে তালা ভেঙে ঢোকার কিছুই নেই।
এ বিষয়ে ডিমলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ লাইছুর রহমান বলেন, পুলিশ তথ্যের ভিত্তিতে টহল দিয়েছে। পুলিশ যাওয়ার পর কোন ঝামেলা হয়নি। এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পেলে আমরা তদন্তের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-পরিচালক (উপ সচিব) মোঃ সাইফুর রহমান বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান বিকেলে দেখা করে আমাকে অভিযোগ করেছে। যেহেতু বিনা অনুমতিতে তালা ভেঙে প্রবেশ করেছে বা টাকা নিয়েছে। এবিষয়ে আপনি থানায় একটা অভিযোগ করেন।
এছাড়াও টেপাখরিবাড়ি ও খগাখরিবাড়ী ইউপির বিষয় প্রশ্ন করেলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা জানান, যেহেতু পূর্ববর্তী পরিষদেরর মেয়াদ এখনো বলবদ আছে। আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে আপনাদের চিঠি পাঠিয়েছি। নির্দেশনা আসলে আপনারা পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবেন। সে পর্যন্ত আপনারা কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি করবেন না।
নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ জানান, বিস্তারিত কিছুই জানিনা। যদি ওরকম কিছু ঘটে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
একুশে সংবাদ/র.ই.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :