বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ১৬১ নং উত্তর নাথারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মান কাজ পাঁচ বছরেও শেষ না হওয়ায় চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ঠিকাদারের গাফলতি ও অনিয়মের কারনে ৫ বছরে নির্মাণাধীন ভবনের শুধু ভীত নির্মাণ করেছে বলে স্থানীয়রা জানান।
বরিশাল এলজিইডি, শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত পল্লিতে ১৯৯০ সালে ১৬১ নং উত্তর নাথারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত ২০১৩ সালে জাতীয়করণ করা হয়। ১৯৯০ সালে নির্মিত বিদ্যালয়ের ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ ২০১৭ সালে ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধীদপ্তরের চাহিদাভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (১ম পর্যায়) আওতায় উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে বিদ্যালয়ে তিনতলা ভবন নির্মাণের জন্য ১ কোটি ৩১ লাখ ৮৪ হাজার ২ শত ৬ টাকার একটি প্রকল্প গ্রহন করে ২০১৮ - ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দরপত্র আহবান করেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য মেসার্স খাঁন এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জহির খাঁনকে কার্যাদেশ দেয়া হয়।
রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার হারতা ইউনিয়নের ১৬১ নং উওর নাথারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ৫ বছর আগে পুরাতন ভবনটি ভেঙ্গে ফেলে সেখানে নতুন ভবনের কাজ শুরু করা হয়। গত ৫ বছরে ঠিকাদার ভবন নির্মাণের শুধুই ভীত ঢালাই দিয়েছে। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রাখায় কলামের রডগুলোতে মরিচা ধরে নষ্ট হচ্ছে। পাশেই প্রায় ৩৫ ফুট লম্বা ৯ ফুট পাশে এক চালা টিনের ছাপরা দিয়ে তার একটি কক্ষে লাইব্রেরী আর তিনটি কক্ষে পাঠদান করা হয়। এতে ছাত্রছাত্রীদের আসন সংকট দেখা গেছে। তাছাড়া নিন্ম ভূমিতে ঘরটি তোলার কারনে সামান্য বৃষ্টি হলে শ্রেণী কক্ষের ভিতর দিয়ে জোয়ার বহে। ফলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, পুরাতন ভবনটি ভেঙ্গে ফেলায় গত ৫ বছরে নতুন নির্মাণ না করায় আসন সংকটে লেখাপড়া বিঘ্ন হচ্ছে এবং বৃষ্টি হলে শ্রেণী কক্ষের মধ্যে পানি ঢুকে পড়ে বই খাতা ভিজে যায়। লেখাপড়ার পরিবেশ না থাকায় অনেক সহপাঠী স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।
তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী তন্ময় বিশ্বাস বলেন, ক্লাসের অবস্থা খুবই খারাপ। বৃষ্টি হলে পানি গড়িয়ে ক্লাসের ভিতরে আসে। চলিত বর্ষা মৌসুমে এভাবে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়।
চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী রিংকু বিশ্বাস বলেন, আমাদের স্কুল ঘরের অবস্থা খুবই খারাপ। একটু বৃষ্টি হলে মেঝেতে পানি জমে যায়। কাদা মেখে বাড়ি যেতে হয়। বই খাতা সবই ভিজে যায়।
হারতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অমল মল্লিক বলেন, ঠিকাদার কাজ শুরু করে মাটি খোড়াখুড়ি করে কয়েকটি ভীত ও নিচের ভীত ঢালাই দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। বহু অনুরোধ করা হলে সম্প্রতি সময়ে কাজ শুরু করা কথা বললে কাজ না করে ফেলে রাখে। ভবন নির্মিত না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যাহতসহ চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমাকে মৌখিক অভিযোগ করেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুনীল বিশ্বাস। আমি তাকে আশ্বস্ত করি ঠিকাদারের সাথে কথা বলব।
স্থানীয় অভিভাবক কালাচাঁদ বিশ্বাস, উত্তম বিশ্বাস, নারায়ণ চন্দ্র অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদার পুরাতন ভবনটি না ভেঙ্গেও নতুন ভবন নির্মাণ কাজ করতে পারত কিন্ত খামখেয়ালী করে পুরাতন ভবনটি ভেঙ্গে ফেলে এবং নতুন ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখে ফলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যবহতসহ দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সুনীল বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, ভবন নির্মাণ কাজে ঠিকাদারের গাফলতি ও খাম খেয়ালীপনা কারনে গত ৫ বছরে শুধু মাত্র ভীত ঢালাইর কাজ করে ফেলে রাখে। তাকে দ্রুত কাজ শেষ করতে বললে ঠিকাদার শিক্ষক ও কমিটির সদস্যদের সাথে খারাপ আচরন করে থাকে। বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন ভাঙার কথা ছিল না। ঠিকাদারের অধিক লাভের জন্য পুরাতন ভবন ভেঙ্গে মালামাল নিজে আত্মসাত করে অধিক লাভবান হন। কিছুদিন আগে এক শিক্ষার্থী বেইছ ঢালাই এর রডের সাথে আঘাত লেগে রক্তাক্ত জখম হন। শিক্ষার্থীর বর্তমানে চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়াতে রয়েছে। ঠিকাদারের গাফলতি ও খাম খেয়ালিপনার খেসারত দিচ্ছে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা।
বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক নিপুল চন্দ্র সমদ্দার জানান, ঠিকাদার পুরাতন ভবনটি ভেঙ্গে ফেলে। পরবর্তিতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা মিলে যেনতেনভাবে একটি একচালা টিনের ঘর নির্মাণ করে সেখানে পাঠদান করা হয়। এতে শিক্ষার্থীদের বসার সংকুলন হচ্ছে না। গত ৫ বছরে নির্মাণ কাজ কাজ শেষ না করায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে বিঘ্ন হচ্ছে। ঠিকাদারকে কাজ শেষ করার জন্য বার বার অনুরোধ করা সত্বেও কাজ করেননি বরং আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছে। আমরা বিষয়টি লিখিতভাবে উজিরপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা প্রকৌশলীকে জানানোর পরেও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে তারা কোন ব্যবস্থা নেননি।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে মেসার্স খাঁন এন্টারপ্রাইজ প্রোপ্রাইটর মো. জহির খাঁনের কাছে ফোন করলে তিনি ধরেননি পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও কোন সারা মিলেনি। ঠিকাদারের পক্ষে কাজ তদারককারী মিন্টু মজুমদার বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় প্রকল্প এলাকায় নির্মান সামগ্রী পরিবহনে সমস্যার কারনে কাজে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে এবং কাজের গতি কমে গেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্মান কাজ শুরু করা হবে।
উজিরপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিনের কাছে জানতে এ বিষয়ে চাইলে তিনি বলেন, ভবনটি নির্মান না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের খুবই সমস্যা হচ্ছে। ঠিকাদারকে প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে বার বার তাগিদ দেয়া হচ্ছে কিন্তু তারপরেও কাজ করছে না।
এ প্রসঙ্গে উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী সুব্রত রায়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ঠিকাদারকে জোর করে ওই পর্যন্ত কাজ করাতে সক্ষম হয়েছি। দ্রুত কাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অমান্য করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একুশে সংবাদ/র.ই.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :