১৬ বছরের সংসার লিজা ও শাহীন দম্পতির। তাদের ঘরে ১০ ও ১২ বছরের দুটি সন্তান রয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে কখনো সুখের মুখ দেখেনি লিজা। স্বামীর জুয়া খেলার টাকা জোগাড় করতে প্রতিনিয়ত প্রবাসী ভাইয়ের কাছে হাত পাততে হয়েছে তাকে। টাকা না পেলেই শাহীন লিজার ওপর চালাতো শারীরিক নির্যাতন। বাধ্য হয়ে বোনের সুখের জন্য প্রবাসী ভাই প্রায়ই টাকা দিত শাহীনকে। এরপরেও তাদের সংসার টেকেনি।
জুয়া খেলা ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় লিজা শাহীনের বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে ভাঙ্গুড়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শাহীন গত তিনদিন আগে লিজাকে ডিভোর্স দেয়। তবে লিজার প্রাপ্য কাবিনের ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করেনি শাহীন।
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পার-ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের কুদ্দুস আলীর ছেলে শাহীন। তবে তালাক দিলেও মোহরানার টাকা শোধ না করা এবং সন্তানদের ভরণ-পোষণের কোনো ব্যবস্থা না করায় শাহীনের বাড়িতেই স্ত্রী তার দুই সন্তানসহ অনশন শুরু করেছেন।
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত তিনি অনশনে রয়েছেন বলে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য নিশ্চিত করেছেন।
স্ত্রী লিজা বেগম জানান, তার প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে শাহীনের এনজিওর ঋণ পরিশোধ করা হয়। গত কয়েক বছর ধরে শাহীনকে জুয়া খেলার নেশা থেকে ফেরাতে চেষ্টা করে তিনি ও তার পরিবারের লোকজন ব্যর্থ হন। উপরন্তু জুয়া খেলার টাকা না পেয়ে প্রায়ই তাকে মারধর করতেন শাহীন।
জানা যায়, ১৬ বছর আগে পারিবারিকভাবে শাহীনের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী পাটুলীপাড়া গ্রামের জলিল সরদারের মেয়ে লিজার বিয়ে হয়। শাহীন যুবক বয়স থেকেই জুয়া খেলায় আসক্ত। বিয়ের সময় লিজার পরিবার থেকে নেয়া যৌতুকের টাকা সে সময় জুয়া খেলে শেষ করে বলে অভিযোগ লিজার পরিবারের। এরপর অনেকবার শাহীন তার স্ত্রীকে চাপ দিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা নিয়ে জুয়া খেলে। এভাবে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে শাহিন জুয়া খেলে টাকা হেরেছে। ঋণ পরিশোধ করতে না পেয়ে শাহীন একাধিকবার আত্মগোপনে থাকে। পরে লিজার প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা নিয়ে শাহীন এনজিওর ঋণ পরিশোধ করে।
গত কয়েক বছর লিজার পরিবার শাহীনকে জুয়া খেলার নেশা থেকে ফেরাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। উপরন্ত জুয়া খেলার টাকা না পেয়ে প্রায়ই লিজাকে ব্যাপক মারধর করে বলে শাহীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পরিবারের। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে অনেকবার সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সর্বশেষ পার-ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হেদায়েতুল হক, পাবনা জেলা পরিষদ সদস্য আসলাম আলী, ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিনসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এ বিষয়ে সালিশি বৈঠক করে সমাধান করতে ব্যর্থ হন। এর পরদিন শাহীন লিজাকে ডিভোর্স দেয়।
পার-ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হেদায়েতুল হক বলেন, শাহীন জুয়া খেলার কারণেই পরিবারে অশান্তি। তবে সালিশ করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেও সমাধান করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলহাজ্ব রাশিদুল ইসলাম বলেন, ওই গৃহবধূ অভিযোগ দিলেও থানা পুলিশের কিছু করার নেই। তাকে পারিবারিক আদালতে গিয়ে মামলা করে প্রতিকার পাওয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একুশে সংবাদ/শ.স.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :