নওগাঁর নিয়ামতপুরে টিনের ঘরে ঘর-ঘর-ক্যাঁচ-ক্যাঁচ শব্দে ঘুরছে কাঠের তৈরি ঘানি। ঘানির ভেতরে রয়েছে সরিষা। কাঠের হাতলের চাপে সরিষা ভেঙে একটি পাত্রে ফোটায় ফোটায় চুইয়ে পড়ছে বিশুদ্ধ সরিষার তেল। এভাবেই আড়াই বছর ধরে সরিষা থেকে তেল সংগ্রহ করছেন জিয়াউল বারী।
গত বৃহস্পতিবার বিকালে শিবপুর বাজারের ধানহাটি এলাকায় এমন দৃশ্য দেখা গেছে। জিয়াউল বারী নিয়ামতপুর উপজেলার হাজিনগর ইউনিয়নের পরানপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে।
চারিদিকে যখন অবিশ্বাস আর ভেজালে সয়লাব। তখন চোখের সামনেই ঘরের দুয়ারে খাঁটি তেলের ঘানি। কালচে সোনালী রঙ্গের ফোটায় ফোটায় তেলের সাথে বের হয় বিশ্বাস। এই তেলে রয়েছে অনেক প্রয়োজনীয় ও পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান। যারা এর সঠিক গুণাগুণ সম্পর্কে ধারণা রাখেন, তারা এখনো ঘানিতে ভাঙ্গা সরিষার তেল ব্যবহার করেন।
স্থানীয় জনি আহমেদ ও বকুল বলেন, সড়কের পাশে খোলা জায়গায় ঘানিতে তেল ভাঙায় পথচারীরা উৎসাহ নিয়ে তেল ভাঙা দেখেন। পুষ্টিগুণেই নয় ঘানিতে ভাঙ্গানো সরিষার তেলে যে কোন ভর্তার স্বাদ জুড়ি মেলা ভার। রান্না ও গায়ে মাখার জন্যও আমরা এ সরিষার তেল ব্যবহার করি।
জিয়াউল বারী বলেন, তাঁর ঘানিতে একবারে ১০-১২ কেজি সরিষা ভাঙানো যায়। একদিনে পর্যায়ক্রমে দুই থেকে তিন বার সরিষা ভাঙানো যায়। মেশিনে সরিষা ভাঙানোর খরচ ও সময় কম লাগার কারণে মেশিনে সরিষা ভাঙাতে মানুষের ঝোঁক বেশি। তা ছাড়া হাতের কাছে ঘানিও এখন তেমন মেলে না।
তিনি আরোও বলেন, অনেকে সরিষা ভাঙ্গাতে আসলে তা চুক্তিতে ভেঙে দেয়। প্রতিদিন এই ঘানি থেকে ৮ শত থেকে ১ হাজার টাকা আয় হয় তার। ঘানির তেল বিক্রি করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে চলছে সুখের সংসার।
ঘানির ঘোড়া ঘোরানো সময় চোখ বেঁধে দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে জিয়াউল বারী বলেন, ঘোরার সময় চোখ খোলা থাকলে ঘোর লাগে। এ ছাড়া কুকুর-বিড়াল দেখলে ঘোড়া ঘুরতে চায় না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, প্রযুক্তির দাপটে বিলুপ্তর পথে ঘানিশিল্প। ঘানি ভাঙা তেল শতভাগ খাঁটি হয়। কারণ এতে কোনো ক্যামিকেল মেশানো হয় না। এতে তেলের গুণগত মান ঠিক থাকে।
একুশে সংবাদ/ই.ই.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :