তিস্তার উজানে ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা অংশে বাধ ভেঙ্গে যাওয়ায় এবং টানা বৃষ্টিতে তিস্তায় আকষ্মিক সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। নদীর পানি নেমে গেলে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে চরম ভোগান্তি। নষ্ট হয়েছে ফসল, এখনো নিম্নাঞ্চলের অনেক রাস্তা পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এতে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব এলাকার বাসিন্দাদের। পানি দ্রুত গতিতে নেমে যাওয়া নতুন করে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন আতঙ্ক।
বৃহস্পতিবার(৫ অক্টোবর) দুপুরে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিগত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ডালিয়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে ধীর গতিতে হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে ডালিয়া পয়েন্টের পানি সমতল বিপদসীমার ৬৮ সে.মি. নিচে (বর্তমান পানি সমতল ৫১.৪৭ মি.) এবং কাউনিয়া পয়েন্টের পানি সমতল বিপদসীমার ১০ সে.মি. উপরে অবস্থান করছে (বর্তমান পানি সমতল ২৮.৮৫ মি.)।
ভারতীয় আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দেশের উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানের তিস্তা অববাহিকায় আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এর ফলে তিস্তা নদীর ডালিয়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে পানিসমতল আজ বিকাল পর্যন্ত ধীরগতিতে হ্রাস পেয়ে পুনঃরায় কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে তিস্তা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, বন্যা ঝুঁকি কমে এসেছে।
তিস্তার পানি কমে বন্যার শঙ্কা কাটলেও তিস্তা নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের ভোগান্তি কাটেনি। এখনো অনেক এলাকায় তলিয়ে আছে রাস্তা ঘাট, বাড়িঘরে রয়েছে পানি। এতে রান্না করতে না পারায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার গোবর্দ্ধন এলাকার কৃষক ফারুক মিয়া বলেন, চরে তিন দোন জমিতে রোপা আপন বপন করেছিলাম। ধান কাটার সময়ও চলে আসছে। হঠাৎ পানি আসায় সব ডুবে আছে। কতটুকু ধান থাকবে বলা মুশকিল। একই এলাকার কৃষক তোতা মিয়া বলেন, চরে কয়েকদিন আগে ধান কেটে রেখেছি। হালকা বৃষ্টি হয় জন্য নিয়ে আসিনাই বাড়িতে। পানি আসার খবরে কোনরকমে ভেজা ধান নিয়ে আসছি। বৃষ্টি পড়তেছে। তাই ধান মাড়াই করতেও পারছিনা।
আদিতমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, বন্যার পানিতে চরের সবজি ক্ষেত, আলু, রোপা আপন সহ বিভিন্ন ফসল ডুবে আছে। মাঠ পর্যায়ে আমাদের লোকজন কাজ করছে। এখনো ক্ষতির পরিমান নিরুপন করা সম্ভব হয়নি।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জি আর সারোয়ার বলেন, আমরা নদী এলাকার জনপ্রতিনিধিদের মাইকিং করে ও বিভিন্নভাবে নদী এলাকার মানুষকে সচেতন করেছি। আমি গতকাল রাতে নদী এলাকা পরিদর্শন করে সার্বিক খোজখবর নিচ্ছি। চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের লোকজনদের পশুপাখিসহ প্রস্তুতি নিয়ে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে। যেকোন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, উজানের ভারী ঢলে তিস্তায় আবারও বন্যা দেখা দিবে। আমরা সার্বিক খোজখবর রাখছি।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, বন্যা কবলিতদের মাঝে এরইমধ্যে শুকনো খুব বিতরণ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি রয়েছে। আর নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি ও হ্রাসের কারণে ভাঙ্গন ঠেকাতে প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বাপাউবোর তথ্যমতে আগামী ২৪ ঘন্টায় তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলসমূহের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে এবং পানি সমতল বিপদসীমার নিচে বা কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে।
একুশে সংবাদ/জা.বা/না.স
আপনার মতামত লিখুন :