ঢাকার ধামরাইয়ে এসএসসির নির্বাচনী পরীক্ষায় গাইড বই ফটোকপি করে প্রশ্নপত্র তৈরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় রবিবার (১৫ অক্টোবর) বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
গত ১০ অক্টোবর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের ওদুদুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোকেশনাল শাখার রসায়ন বিজ্ঞান-২ (সৃজনশীল) পরীক্ষায় এ ঘটনা ঘটে। ওই প্রশ্নপত্রটি তৈরির দায়িত্বে ছিলেন বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ফিরোজ আল মামুন ও সহকারী প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম।
শিক্ষার্থীরা জানায়, ওই প্রশ্নপত্রে প্রশ্নের নিচেই উত্তরের পৃষ্ঠা নম্বর দেওয়া ছিল। বিষয়টি নিয়ে অনেকের সন্দেহ হয়। পরে মিলিয়ে দেখা যায় এই প্রশ্নটি ”সিসটেক টেকনিক্যাল পাবলিকেশন্স” নামে গাইড বই থেকে ফটোকপি করে তৈরি করা হয়েছে।
প্রশ্নপত্রটিতে দেখা যায়, পূর্ণমান ৩০ নম্বরের রসায়ন বিজ্ঞান-২ (সৃজনশীল) ১৯২৬ নম্বর কোডের ক-বিভাগের প্রশ্নপত্রটিতে ১২টি প্রশ্ন রয়েছে। প্রতিটি প্রশ্নের নিচে উত্তরের পৃষ্ঠা নম্বর ও কোন অধ্যায় থেকে প্রশ্নটি করা হয়েছে তার উল্লেখ রয়েছে।
“সিসটেক টেকনিক্যাল পাবলিকেশন্স” নামে গাইড বইয়ের ২২০ পৃষ্ঠায় দেখা মেলে একই প্রশ্নপত্রের।
গাইড বই থেকে ফটোকপি করে প্রশ্নপত্র তৈরি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, ওই শিক্ষকদের কাছে যারা টিউশন পড়েন। তাদের সুবিধা করে দিতেই এমন প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ’ওই শিক্ষকদের কাছে অনেকেই প্রাইভেট টিউশন নেন। তাদের আগে থেকেই জানানো ছিল প্রশ্নে কি আসবে। সেভাবেই এই প্রশ্ন করা হয়েছে।
এদিকে প্রশ্নপত্রের বিষয়টি নিয়ে দুই শিক্ষক একে অপরকে দোষারোপ করেন। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভোকেশনালে আমি দুই মাস ক্লাস নিয়েছি। আগে নিয়েছেন ফিরোজ স্যার। আমাকে প্রশ্ন করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু আমি ফিরোজ স্যারকে বলার পর প্রশ্ন উনিই করেছেন। আমি শুধু বিষয়টা দেখতে বলেছি। প্রশ্ন এরকম করেই বানানো হয়। শুধু নিচের ওই লেখা মুছে দিলেই বিষয়টা কেউ ধরতে পারতো না।
শিক্ষক ফিরোজ আল মামুন বলেন, প্রশ্ন জাহাঙ্গীর স্যারের করার কথা ছিল। পরে আমি বানিয়েছি। কম্পিউটার অপারেটরকে দিয়েছিলাম। সে ঠিক করতে পারেনি। তাই এমনটা হয়েছে।
প্রশ্নপত্র নিজের তৈরি করে দেওয়ার কথা ছিল কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, এই বিষয়ের প্রশ্ন আমরা পাই না কোথাও থেকে। তাই গাইড বইয়ের সহযোগিতা নিয়েছি। লেখাটা মুছে দেওয়া উচিৎ ছিল।
এ ঘটনা তদন্তে রবিবার বিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক আরিফ হোসেন, বাংলা শিক্ষক সফিকুল ইসলাম ও ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক সবুজ আহমেদকে নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে একদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ওদুদুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়, বালিয়ার প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত নভেম্বর মাসে অফিস আদেশে স্ব-স্ব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে প্রশ্নপত্র তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই প্রশ্নেই পরীক্ষা হচ্ছে। ১০ তারিখ ভোকেশনাল রসায়ন বিজ্ঞান-২ বিষয়ের প্রশ্নটি নিয়ে অভিযোগ পাওয়া যায়। বিষয়টি জানার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা যে প্রতিবেদন দেবেন, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ধামরাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহীন আশরাফি বলেন, এ অভিযোগের বিষয়ে তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে বিষয়টিতে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একুশে সংবাদ/ন.ক.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :