মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে প্রশাসনের ঢিলেঢালা অভিযানের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিষিদ্ধ সময়ে পদ্মায় ইলিশ শিকার করছেন জেলেরা। উপজেলার চরাঞ্চলের তিন ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় তা বিক্রিও হচ্ছে নিয়মিত। প্রশাসনকে ফাঁকি দিতে এদের রয়েছে খবর দেওয়ার লোক। নদীতে প্রশাসনের অভিযানের খবর তারাই পৌঁছে দেন জেলেদের কাছে।
ইলিশ রক্ষায় গত ১২ অক্টোবর থেকে আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২২ দিন ইলিশ মাছ ধরা, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তবে, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কিছু অসাধু ও মৌসুমী জেলেরা হরিরামপুরে মাছ শিকার করছেন। এতে হুমকির মুখে পড়ছে ইলিশের বংশবৃদ্ধি।
চরাঞ্চল ও নদীপাড়ের মানুষের অভিযোগ, প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে পদ্মায় মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে কোনো ফলই হচ্ছে না। নাম মাত্র অভিযানে কৌশল পাল্টে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে জেলেরা। এছাড়াও, অনেক জেলেরা দূর থেকে প্রশাসনের স্পিডবোড কিংবা ট্রলার দেখা মাত্রই দ্রুতগতিকে নৌকা নিয়ে পালিয়ে যান। তাড়াছা, এসব জেলেদের খবর দেওয়ার জন্যও রয়েছে নিজস্ব সোর্স।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সরকারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চর এলাকায় প্রতিদিনই ইলিশ শিকার করে যাচ্ছেন কতিপয় অসাধু ও মৌসুমী জেলেরা। রাতে পদ্মা নদী থেকে ইলিশ ধরে মোটরসাইকেল যোগে বিক্রয় করতে নিয়ে আসেন সুতালড়ি ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামে, লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের পাটগ্রাম চর, ভগবান চর, নটাখোলা চরসহ আজিনগরের হাতিঘাটার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে মাছ বিক্রি করে যাচ্ছে কিছু অসাধু জেলেরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানান, প্রশাসন অভিযানে গেলে জেলেরা আগেই খবর পেয়ে পালিয়ে যান। অভিযান শেষে প্রশাসনের লোকজন চলে যাওয়ার পর পুনরায় নদীতে নেমে ইলিশ নিধনের মহোৎসবে মেতে ওঠেন জেলেরা। ফলে সুচতুর এসব জেলেদের আটকও করা যাচ্ছেনা। তবে প্রশাসন আরো কঠোর হলে অসাধু জেলেদের দৌরাত্ম্য কমে আসবে বলে মনে করেন স্থানীয় সচেতন বাসিন্দারা।
আজিমনগর ইউনিয়নের হাতিঘাটা গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় এ সময়কালে ডিমওয়ালা ইলিশ মাছ নদীতে বেশি ধরা পড়ে। আর এখন এর দাম ভালো পাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কিছু জেলেরা এ মাছ ধরে। আমাদের চরাঞ্চলের এদিকে প্রশাসনের অভিযান ও তৎপরতা কম বলে জেলেরা এ সময়েও ইলিশ ধরা অব্যাহত রেখেছে।
হরিরামপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নুরুল ইকরাম জানান, ইলিশের ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতে ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২২ দিন ইলিশসহ সব প্রজাতির মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আমি প্রতিদিনই নদীতে অভিযানে গিয়ে কারেন্ট জাল ও মা ইলিশ উদ্ধার করছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের যাওয়ার খবর পেলে ট্রলার নিয়ে ঘটনাস্থল যাওয়ার আগেই জেলেরা পালিয়ে যায়, এরকম তথ্য আমার কাছেও এসেছে। মা ইলিশ রক্ষায় এবং অসাধু জেলেদের ধরতে আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার রহমান বলেন, গতকাল রাতেও আমি চরাঞ্চলে অভিযান চালিয়েছি। আমি হরিরামপুরের পুরো পদ্মায় কাউকে পাইনি। হতে পারে তারা আমাদের যাওয়ার খবর আগেই পেয়ে পালিয়ে যায়। আমাদের সরকারি কোন নৌকা নেই, নিজস্ব কোন মাঝি নেই। আমরা ঘাট থেকে মাঝি নিয়ে অভিযানে যাই। হতে পারে ঘাট থেকেই অভিযানের খবর পৌঁছে দেয়। ঘাট থেকে নৌকা-মাঝি না নিয়ে আমি অন্যভাবে চেষ্টা করছি যাতে অসাধু জেলেদের দমন করে মা ইলিশ রক্ষা করা যায়।
একুশে সংবাদ/স ক
আপনার মতামত লিখুন :