‘‘ও পুজনীয় ভান্তে, তুমি আগ বুদ্ধ শাসনত, ত্যাগেই মিলি এজ্জি রাগেবং, দানর রাজা কঠিন চীবর দান হুজি মনে তোমা মুজঙত’’
এই উদ্বোধনী বৌদ্ধ সংগীতের মাধ্যমে কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া অঞ্চলের চেলাছড়া দশবল বৌদ্ধ বিহারে ১৬তম দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্টান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সকাল ৯টায় চেলাছড়া দশবল বৌদ্ধ বিহারে বিহার পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে ১৬তম দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্টানে আগত কিশোর-কিশোরী, নারী-পুরুষ পূর্ণ্যার্থীরা পঞ্চশীলে অধিষ্টিত হয়ে বুদ্ধপূজা, বুদ্ধমূর্তি দান, সংঘদান, অষ্টপরিস্কার দান, পিন্ডদান, হাজার প্রদীপ দান, নানাবিধ দান কার্যসহ ধর্মোপদেশ সম্পাদনের মধ্যে দিয়ে প্রথম পর্ব সম্পন্ন হয়। বিকাল ২ঘটিকায় ভিক্ষু সংঘের আগমনের পরপরই অনুষ্টানে আগত অতিথি ভিক্ষু সংঘ ও অতিথি পূর্ণ্যার্থীদেরকে বরণ করা হয়। এরপরই দ্বিতীয় পর্বের দিনের প্রধান আর্কষন ও বৌদ্ধদের বছরের সর্বশেষ প্রধান ধর্মীয় উৎসব দানোত্তম কঠিন চীবর দানানুষ্টান সূচনা করা হয়। এতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হাজার হাজার পূর্ণ্যার্থীদের দানোত্তম কঠিন চীবর দান, কল্পতরু দান, পঞ্চশীল প্রার্থনা সহ নানাবিধ দানকার্য সম্পন্ন করা হয়।
দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ধর্মোপদেশ কালে বলেন, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান তিনটি কাজ পালন করা অত্যাবশ্যক। এই তিনটি হলো- দান, শীল ও ভাবনা। এই তিনটি যে বৌদ্ধ অনুসারীর মধ্যে উৎপন্ন হবে কিংবা প্রতিপালন করবে তাহলে ঐ বৌদ্ধ ধর্ম পূজারির কোনদিন আপদে-বিপদে পড়বেনা। তার দিন দিন উন্নতি সাধিত ঘটবে। এমনকি ধর্মের পরিহানি কাজ করা থেকে বিরত থাকবে। তার মধ্যে সার্বক্ষণিক সৎ কাজের চিন্তা চেতনা, ধর্মানুরাগী, সকল প্রাণীর প্রতি মৈত্রী পোষণ সৃষ্টি হবে। অন্তিমে তার নির্বাণ লাভের হেতু উৎপন্ন হবে। অতঃপর আজকে থেকে দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে আগত পূণ্যার্থীদের এই তিনটি কাজ দান, শীল ও ভাবনা ব্রত নিয়ে প্রতিমুহুর্তে প্রতিপালন করতে অনুষ্ঠানে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ধর্মোপদেশ প্রদান করেন।
চেলাছড়া দশবল বৌদ্ধ বিহারে ১৬তম দানোত্তম কঠিন চীবর দান পূর্ণ্যানুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ৩নং ঘাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নাজিম উদ্দিন, ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মন্টু বিকাশ চাকমা, আশীষ খীসা, সাংবাদিক বিহারী চাকমা সহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও পূর্ণ্যার্থীরা। এসময় "চেলাছড়া আলোড়ন পাঠাগার" এ কর্তৃপক্ষের হাতে আলীকদম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক, ছড়াকার, গীতিকার ও শিল্পী আশীষ খীসা এবং লেখক ও সাংবাদিক বিহারী চাকমা নিজেদের লেখা কিছু সংখ্যক বই তুলে দেন। সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্যে দিয়ে চেলাছড়া দশবল বৌদ্ধ বিহারে ১৬তম দানোত্তম কঠিন চীবর দান দিনব্যাপী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :