চলনবিলে অধ্যুষিত উপজেলাগুলোর বিল ও নদীতে শুরু হয়েছে গ্রাম বাংলার চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার বাউত উৎসব। হাজারো সৌখিন মৎস্য শিকারী মেতে উঠেছে মাছ ধরার এই উৎসবে।
কুয়াশার চাদরে মোড়া হেমন্তের সকাল। পুর্বাকাশে নতুন সুর্যদয়। শিশির ভেজা ঘাস মাড়িয়ে বিল অভিমুখে মানুষের ঢল। কারো কাঁধে পলো, আবার কারো হাতে ঠেলা জাল, বাদাই জাল, খেপলা জালসহ মাছ ধরার নানান উপকরণ। দুর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসছেন হাজার হাজার মানুষ।
শিশু থেকে বৃদ্ধ, বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে বিলপাড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ। এরপর হৈ হৈ রবে দল বেধে বিলের পানিতে নেমে মাছ শিকারের আনন্দে মাতেন সৌখিন মৎস শিকারীরা।
এ চিত্র চলনবিল বিস্তৃত পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার ‘রুহুল বিলের’। আঞ্চলিক ভাষায় দল বেধে মাছ শিকারের এই আয়োজনের নাম ‘বাউত উৎসব’। সে উৎসবে অংশ নিয়েছে চলনবিল অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ।
প্রতি বছরের অগ্রহায়ন মাসের মাঝামাঝি সপ্তাহে দুই দিন শনিবার ও মঙ্গলবার চলে এই মাছ শিকার। এই উৎসবে স্থানীয়রা ছাড়াও জেলার বাইরে থেকে সৌখিন মাছ শিকারিরা মাছ ধরার জন্য অংশ নেয়।
সিরাজগঞ্জ, নাটোর, টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, পাবনা জেলার সদর, আটঘরিয়া, ঈশ্বরদী, ফরিদপুর, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়াসহ বিল পারের কয়েক হাজার মানুষ মেতে উঠে মাছ ধরা উৎসবে। ভোর থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে যানবহন যোগে আসে মাছ শিকারিরা। মাছ যাই মিলুক, সবাই মিলে মাছ ধরার আনন্দটাই সবার কাছে মুখ্য বলে জানান মাছ শিকারীরা।
পাবনা জেলার আটঘরিয়া উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামের পলাশ মোল্লা বলেন, ‘আমি ছোট বেলা থেকেই রুহুলবিলে পলো দিয়ে মাছ ধরতে আসি। আমার ভাগ্য ভালো। খালি হাতে কখনো ফেরত যাইনি। পাঁচ থেকে ছয় কেজির গজার মাছও পেয়েছি এই বিলে।’
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা থেকে আগত শিকারী ইনসান আলী বলেন, ‘মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বাউতদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রতি বছর এই দিনে রুহুলবিলে মাছ শিকার করতে আসি। মাছ পাই বা না পাই এটি আমার শখ।’
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান মাছ ধরার এই উৎসব বিষয়ে একুশে সংবাদ. কমকে বলেন, ‘পাবনার ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর উপজেলার বেশ কিছু অংশ নিয়ে ঐতিহ্যবাহী রুহুল বিলের অবস্থান। প্রতিবছর এই উৎসব হয়। হাজারো সৌখিন মাছ শিকারি শীতের এই সময়ে এ উৎসব পালন করে। এই অঞ্চলের মানুষের এটি একটি অতি পুরোনো উৎসব। বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ মিলিত হয়ে মাছ শিকারের এই উৎসব আজও টিকিয়ে রেখেছেন এই অঞ্চলের মানুষ।’
ইউএনও আরও বলেন, ‘এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব যেন বিলুপ্ত না হয়ে যায়, সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মাছের অভয়ারণ্য হিসেবে এই বিলের যে অংশ সংরক্ষণ করা আছে সেখানে যেন কেউ মাছ না ধরে। এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হওয়া দরকার। দেশীয় মাছ রক্ষার্থে বর্তমান সরকার বিভিন্ন কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :