কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে পণ্য পরিবহনে একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠেছে ঘোড়ার গাড়ি। এতে একদিকে সুবিধা পাচ্ছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা, অন্যদিকে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো মানুষের। এ অঞ্চলে জীবিকা ও জীবনযাত্রায় ঘোড়া হয়েছে উঠেছে অনুসঙ্গী। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ঘোড়ার সংখ্যা।
সরেজমিন দেখা যায়, চরের ধু-ধু বালুপথে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে একের পর এক ছুটে চলেছে ঘোড়ার গাড়ি। কোনো কোনো গাড়িতে ওঠানো হয়েছে ১০ থেকে ১৫ মণ পর্যন্ত পাট, ধান, খড়সহ অন্যান্য পণ্য। এসব গাড়ির গন্তব্য চরাঞ্চলের গ্রাম থেকে নদীর ঘাট আবার নদীর ঘাট থেকে বাজার। এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর হাট থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের ঘাট পর্যন্ত।
কিছুদিন আগেও চরাঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য মাথায় বা ঘাড়ে করে বহন করতে হতো কৃষকদের। কিন্তু এখন ঘোড়ার গাড়িতে পণ্য পরিবহনের সুবিধা পাচ্ছেন তারা। আর এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে চরাঞ্চল থেকে কৃষিপণ্য কিনে আনছেন ব্যবসায়ীরাও।
সদরের যাত্রাপুর হাট ও ঘাটের পাট ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন বলেন, ‘আগে ঘাটে পাট কিনে মানুষের মাথায় করে নিয়ে আসা হতো। কিন্তু এখন ঘোড়ার গাড়িতে বহন করতে পারছি। আমাদের ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুবিধা হয়েছে।’
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের পেড়ার চরের বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা চরের বাসিন্দারা আমাদের উৎপাদিত পণ্য প্রথমে চর থেকে ঘোড়ার গাড়িতে করে নৌকা ঘাট পর্যন্ত নিয়ে এসে নৌকায় পার করে আবার ঘোড়ার গাড়িতে করে বাজারে বিক্রি করি। ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হয় না।’
অন্যান্য পেশার চেয়ে ঘোড়ার গাড়ি চালানো লাভজনক বেশি হওয়ায় বেড়েই চলেছে এর সংখ্যাও।
ঘোড়ার গাড়ির চালক মোহাম্মদ আলী জানান, ঘোড়াসহ একেকটি গাড়িতে খরচ পড়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এই গাড়ি চালিয়ে প্রতিদিন ৫০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও অধ্যক্ষ মীর্জা নাসির উদ্দিন বলেন, যান্ত্রিক যানবাহনের বিকল্প হিসেবে ঘোড়ার গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি করা গেলে প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোনাক্কা আলী বলেন, ‘জেলায় ঘোড়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা ঘোড়ার চিকিৎসাসহ মালিকদের নানা সুবিধা দিয়ে আসছি।’
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :