রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুরে সাড়ে ৩’শ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী জমিদারবাড়ী-মন্দির দখলের অপচেষ্টা এবং বাড়ীর মালিকসহ ৪ জনকে পিটিয়ে জখম, স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান কাগজপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার সময় রাজবাড়ী প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে রাজবাড়ী নাগরিক কমিটির আয়োজনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
রাজবাড়ী নাগরিক কমিটির সভাপতি কমরেড জ্যোতি শংকর ঝন্টুর সভাপতিত্বে মানববন্ধন চলাকালে বক্তৃতা করেন, রাজবাড়ী নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফকীর শাহাদাৎ হোসেন, সহ-সভাপতি মনিরুল হক মনির, সহ-সভাপতি আব্দুস সামাদ মিয়া, এ্যাড. মাহাবুব রহমান, অরুন কুমার সরকার, এজাজ আহমেদ, কবি নেহাল আহমেদ প্রমুখ।
এসময় বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বহরপুরের পুরনো ওই জমিদারবাড়ী সহ পুকুর ও মন্দির দখলের পায়তারা করতে থাকেন। এরই অংশ হিসেবে গত ১৩ অক্টোবর দুপুরে বহরপুর এলাকার মৃত আজিজ সেখের ছেলে মো. জিল্লু শেখ ও রামগোপাল সাহার স্ত্রী লক্ষী রানী সাহা অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জন সন্ত্রাসী নিয়ে ওই জমিদার বাড়ীতে হানা দেয়। এসময় হামলাকারীরা বাড়ীর সকলকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে এবং তাদের বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করলে প্রথমে জমিদারবাড়ীর মৃত অমরেন্দ্র সাহার পুত্র কৃষ্ণ কান্ত সাহাকে মারপিট করে। এরপর বাড়ীর অন্যান্য সদস্যরা ঠেকাইতে আসলে কৃষ্ণ কান্ত সাহার স্ত্রী সুমি সাহা ওরফে পোদ্দার, তার কাকা সতীনাথ সাহা ও পিসি বৃদ্ধা নীলিমা রাণী সাহাকে মারপিট ও গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। আহতদেরকে বালিয়াকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ও চিকিৎসা করানো হয়। হামলা ও মারপিটে জমিদার বাড়ীর অধিকাংশ সদস্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার সুযোগে ওইদিন (১৩অক্টোবর) রাত ৯ টার দিকে বহরপুর এলাকার মো. জিল্লু শেখের নেতৃত্বে ১০-১২ জন পুনরায় ওই বাড়ীতে হানা দিয়ে বাড়ীর পুত্রবধূ সুমি সাহাকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা ওই গৃহবধূর ঘরের স্টীলের বাক্সের তালা ভেঙ্গে ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা মূল্যের ৩ ভরি ওজনের একজোড়া বালা ও ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ১০ আনা ওজনের একজোড়া কানের দুল সহ জমিদারী আমলের জমি জায়গার মূল্যবান কাগজপত্র নিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, এ ঘটনায় জমিদারবাড়ী পরিবারের পক্ষ থেকে রাজবাড়ীর ৪ নং আমলী আদালতে ১৮ অক্টোবর জমিদার বাড়ীর পুত্রবধূ হীরা রাণী সাহা বাদী হয়ে বহরপুরের মৃত আজিজ শেখের পুত্র মো. জিল্লু শেখ ও মৃত রামগোপাল সাহার স্ত্রী লক্ষী রাণী সাহা সহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনকে আসামী করে একটি মামলা (সিআর-৩৭৯/২৩) দায়ের করে। আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মৌসুমী সাহা মামলাটি থানায় রেকর্ড করার জন্য বালিয়াকান্দি থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। মামলাটি থানায় রেকর্ড হয়।
জানা গেছে, পুরনো ওই জমিদার বাড়ী সহ সংলগ্ন এলাকায় বর্তমানে ১ একর ৮৫ শতাংশ জমি রয়েছে। এর মধ্যে উত্তরাধিকারী লক্ষী সাহা তার মালিকানাধীন ৪৬ শতাংশ জমির মধ্যে ৪০ শতাংশ জমি ২০০৬ সালে স্থানীয় বাসিন্ধা ঢাকার ব্যবসায়ী ফরিদ হোসেনের নিকট বিক্রি করেন। এতোদিন গোপন থাকলেও বেশ কিছুদিন ধরে জমি দখলকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলে আসছিল। বিষয়টি নিয়ে বালিয়াকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হান্নান মোল্যা, বহরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, ইসলামপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেন খান সহ অন্যান্যদের উপস্থিতিতে মাপঝেঁাক করে বাড়ীর অন্যান্য উত্তরাধিকারীদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরও ফরিদ হোসেন ও লক্ষী সাহার কেয়ার টেকার দাবী কারী জিল্লু শেখ তার লোকজন নিয়ে ওই বাড়ীর জমি, নাট মন্দির ও পুকুর দখলের জন্য বেড়া দিতে যায়। তাকে বাঁধা প্রদান করেন এবং ওই জমি যাতে কেউ বেদখল করতে না পারে সেজন্য জমিদার বাড়ীর মৃত অমরেন্দ্র সাহার পুত্র সুব্রত কুমার সাহা রাজবাড়ীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪/১৪৫ ধারায় একটি মামলা (মিসপি-২৮২/২০২৩) দায়ের করেন। এরপরও ওই বাড়ী সহ পুকুর ও নাট মন্দির দখলের পায়তারা ও বাড়ীর পুত্রবধূ সহ অন্যান্যদের মারপিট করে।
লক্ষী রানী সাহার ওয়ারিশি জমি ক্রয়কারী ফরিদ হোসেন বলেন, আমি জমি ক্রয় করেছিলাম তা বুঝে দিয়েছেন। এখন তো আর আমার সাথে ঝামেলা থাকার কথা নয়। তবে জিল্লুকে দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমার পরিবারের লোকজন বেড়া দিতে গেলে ঝামেলা হয়েছে শুনেছি।
অভিযুক্ত জিল্লু শেখ বলেন, আমি লক্ষী সাহার কেয়ার টেকার। আমি জমি দেখাশুনা করি। আমাকে আসামী করে মামলা দিয়েছে, আমি মারলে তো কেউ বেঁচে থাকতো না। তাদের সাথে আদালতেই বোঝাপড়া হবে। আমাকে মারধর করায় আমি আদালতে মামলা দায়ের করেছি ।
অভিযুক্ত লক্ষী সাহার দাবী করেন, তিনি ওই দিন ছিলেন না। যশোরে থাকেন। তার জমির দেখাশুনার জন্য জিল্লুকে কেয়ার টেকার রেখেছেন। তার সাথেই ঝামেলা হয়েছে।
রাজবাড়ীর ৪ নং আমলী আদালতে রাজবাড়ী জেলা বারের যুগ্ম সম্পাদক এ্যাড. খান মো. জহুরুল হক, এ্যাড. শাহরিয়ার জামান রাজীব ও এ্যাড. আব্দুল্লাহ আমান বাদী পক্ষে এ মামলা পরিচালনা করেন।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :