বরগুনার আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের চুনাখালী প্রবাহমান খেজুরতলা খালটিতে বাঁধ দিয়ে ইটভাটায় যাতায়াতের রাস্তা করায় পানি নিঃস্কাশন ও পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় কৃষকদের জমি আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। ভূক্তভোগী কৃষকরা দ্রুত বাঁধটি অপসারণ করে খালটি উম্মুক্ত করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
স্থানীয় ও আবেদন সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ বছর পূর্বে উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের চুনাখালী ও চরখালী গ্রামের কৃষকদের চাষাবাদে ও পানি নিঃস্কাশনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) খেজুরতলা খালের সম্মুখভাগে চুনাখালী নদীর সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি কালভার্ট নির্মাণ করেন। ওই কালভার্ট দিয়ে শুকনো মৌসুমে নদী থেকে পানি উঠানো ও বর্ষা মৌসুমে পানি নিঃস্কাশন করা হতো।
গত এক বছর পূর্বে চুনাখালী গ্রামের কেনান মাতুব্বর ও ইউসুফ খন্দকার নামে দুই ব্যক্তি ওই খালের মাঝ বরাবর একটি অংশে মাটি দিয়ে ভরাট করে বাঁধ দিয়ে কেআরএম নামের একটি ইটভাটায় যাতায়াতের পথ নির্মাণ করে। এতে ওই খালের একটি অংশে জোয়ার ভাটার পানি উঠানামা বন্ধ হয়ে যায়। বাঁধের কারনে পানি নিঃস্কাশন না হওয়ায় গত বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে ওই এলাকার শতাধিক কৃষকদের রোপা আমন ধান পঁচে নষ্ট হয়ে যায়। শুকনো মৌসুমে রবি শস্য আবাদে পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় ওই দুই গ্রামের বিশাল জনগোষ্ঠী ও কৃষকদের চরম ভোগান্তিতে পোহাতে হচ্ছে।
ভূক্তভোগী আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদারসহ শতাধিক কৃষকরা দ্রুত খালের মধ্যের বাঁধটি অপসারন করে পানি নিঃস্কাসনের ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন বলে জানিয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গত এক বছর পূর্বে উপজেলার চুনাখালী ও চরখালী গ্রামের উপড় দিয়ে বয়ে যাওয়া খেজুরতলা খালটির মাঝামাঝি একটি অংশে বাঁধ দিয়ে স্থাণীয় কেনান মাতুব্বর তার মালিকানাধীন কেআরএম নামের একটি ইটভাটায় যাতায়াতের পথ নির্মাণ করে। নির্মাণের সময় ওই বাঁধে সিমেন্টের তৈরী দুটি চিকন রিং দেওয়া হলেও ওই রিং দিয়ে পর্যাপ্ত পানি উঠা নামা করতে পারে না। ফলে বর্ষা মৌসুমে জমিতে জলাবদ্বতার সৃষ্টি হয় এবং শুকনো মৌসুমে কৃষকরা চাষাবাদের জন্য পর্যাপ্ত পানি পায় না। এতে উভয় মৌসুমে স্থানীয় কৃষকদের জমি চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে।
ভূক্তভোগী কৃষক আঃ বারেক, নাসির উদ্দিন, মতলেব ও আমিন উদ্দিনসহ একাধিক কৃষকরা জানান, ওই খালে বাঁধ দেওয়ায় পর্যাপ্ত পানি নিঃস্কাশন না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে জমিতে জলাবদ্বতার সৃষ্টি হয়ে রোপা আমন ধান তলিয়ে নষ্ঠ হয়ে যায়। আবার শুকনো মৌসুমে খাল শুকিয়ে থাকায় পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় রবি শস্যের আবাদ করতে পারেন না। তারা দ্রুত বাঁধটি অপসারনের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবী জানান।
কেআরএম ইটভাটার মালিক কেনান মাতুব্বর ওই খালে বাঁধ দিয়ে ভাটায় যাতায়াতের পথ নির্মাণ করার কথা স্বীকার করে বলেন, বাঁধ নির্মাণ করার সময় দুটি সিমেন্টের রিং দিয়েছি। যাতে খালের পানি নিঃস্কাসন হতে পারে। এছাড়া খালটির একটি অংশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় কৃষকদের চাষাবাদে সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত খালটি খনন করা দরকার।
কুকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ বোরহান উদ্দিন আহমেদ মাসুম তালুকদার বলেন, ইট ভাটার মালিক খালের পানি প্রবাহ চলমান রাখতে খালের উপড় নির্মিত বাঁধটি অপসারণ করে ইটভাটায় যাতায়াতের জন্য একটি কালভার্ট নির্মাণ করবেন বলে জানিয়েছেন।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ভূক্তভোগী কৃষকদের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সরেজমিনে তদন্ত করে খালের বাঁধটি অপসারনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একশে সংবাদ/স.খ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :