নড়াইলের বারইপাড়া সেতুর নকশা পরিবর্তন ব্যয় বেড়েছে ৫৪ কোটি টাকা। নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নড়াইলের কালিয়ায় নবগঙ্গা নদীর ওপর ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৫১ দশমিক ৮৩ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রস্থের বারইপাড়া সেতু নির্মাণকাজ ২০১৭ সালে শুরু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তবে তিনবার মেয়াদ বাড়িয়েও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সেতুটি নির্মাণ করছেন যশোরের ঠিকাদার মো. মইনুদ্দীন বাসী ও মো. জামিল ইকবাল। শেষ সময়ে অর্থাৎ চতুর্থবার মেয়াদ বৃদ্ধির সময় বাঁধে নকশা জটিলতা। সেতুর কিছু অংশ নির্মাণ শেষে দেখা যায়, নিচ দিয়ে নৌযান চলাচল করতে পারছে না। পরে নতুন নকশা অনুমোদন দেয়া হয়। এতে ব্যয় বাড়ে ৫৪ কোটি টাকা। প্রকল্পটি একনেক সভায় উঠলে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং সেতুর নকশা করার সময় নৌযান চলাচলে যাতে বিঘ্ন না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখার নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে সেতু নির্মাণে বিলম্ব হয়েছে। প্রথমে যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল, সে অনুযায়ী কাজ ২০২২ সালের জুনে ঠিকাদার শেষ করেছেন। নতুন করে নকশা পরিবর্তন হওয়ায় আবারো দরপত্র আহ্বান করা হবে।’ দ্রুত সময়ের মধ্যে দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়া এবং কাজটি শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা, এ প্রতিবেদক উজ্জ্বল রায়কে জানান, নবগঙ্গা নদীটি নড়াইল সদর এবং কালিয়া উপজেলাকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। সেতুর দুই পাড়ের বাসিন্দাদের পারাপারে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। নদীর একপাশে রয়েছে আটটি অন্যপাশে ছয়টি ইউনিয়ন। জেলা সদরের সঙ্গে কালিয়া উপজেলার সরাসরি যোগাযোগের কোনো মাধ্যম নেই। সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে কালিয়ার বারইপাড়া ঘাটে সেতু নির্মাণ তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। পাঁচ বছর আগে সামান্য কয়েকজন শ্রমিক দিয়ে প্রকল্প এলাকায় কাজ করানো হয়। নকশা জটিলতায় শুরুর দিকে বেশ কিছুদিন কাজ বন্ধ ছিল। সেতুর কিছু অংশে ঢালাই দেয়ার পর দেখা যায় নিচ দিয়ে নৌযান চলাচল করতে পারছে না। এরপর দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে ভোগান্তি নিরসনে দ্রুত কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
লতিফ মিয়া জানান, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বারইপাড়া ঘাট দিয়ে নদী পার হয়ে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে যাতায়াত করছে। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় এখানে গড়ে ওঠেনি কোনো শিল্প-কারখানা।
কালিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র মুশফিকুর রহমান লিটন জানান, জরুরি প্রয়োজনে থানা থেকে পুলিশ ঠিক সময়ে আসতে পারে না। আগুন লাগলে দ্রুত পৌঁছাতে পারে না ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও জরুরি রোগী পরিবহনে অ্যাম্বুলেন্স। ঘাটে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় নদী পার হওয়ার জন্য। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান, সরজমিন দেখা গেছে, নির্মাণাধীন সেতুর পাশে খেয়াঘাট দিয়ে অসংখ্য মানুষ প্রতিনিয়ত পারাপার হচ্ছে। একটি মোটরসাইকেল নৌকায় তুলছেন তিন-চারজনের সহযোগিতায়। মূল সেতুর দুই পাশের কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর মাঝের অংশের কাজ বাকি। নদীর মাঝখানে কয়েকটি পিলার দাঁড়িয়ে আছে। সেতুর দুই পাশে ঢালাইয়ের কাজ শেষ হলেও মাঝে ঢালাইয়ের কাজ এখনো শেষ হয়নি। দুই পাশে সংযোগ সড়কের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা জানান, শুরুর দিকে সেতুর নকশা জটিলতার কারণে নির্মাণকাজ দুই-তিন মাস বিলম্ব হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আবারো নকশা জটিলতার জন্য কাজ বন্ধ রয়েছে। নতুন করে টেন্ডার হবে। যারা কাজ পাবে তারা বাকিটা শেষ করবে। দুবার নকশা পরিবর্তন এবং কভিডের সময়ে কাজ বন্ধ থাকায় প্রকল্পে ধীর গতি ছিল।
এ প্রসঙ্গে নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে কাজ শেষ হয়নি। নতুন করে সেতুর নকশা করা হয়েছে। ব্যয় বেড়েছে ৫৪ কোটি টাকা। প্রকল্পটি একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু হবে।
একুশে সংবাদ/উ.র.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :