বর্তমানে শ্রীপুরের বাঁশ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রকৃতি—পরিবেশ ও প্রাণ রক্ষায় বিশেষ করে, দুর্যোগ মোকাবেলা, পাহাড় ধস, ভূমি ক্ষয়, নদী ভাঙ্গন রোধসহ জীব—বৈচিত্র্য রক্ষায় বাঁশের রয়েছে ব্যপক ভূমিকা। বাঁশ অন্যান্য গাছগাছালির চেয়ে বেশি অক্সিজেন উৎপাদন করে আর বেশি মাত্রায় কার্বন—ডাই—অক্সাইড গ্রহণ করে। ফলে বাতাস বিশুদ্ধ থাকে। বলা হয় বাঁশঝাড় আশেপাশের তাপমাত্রাকে ঠান্ডা রাখে। এছাড়া তীব্র রোদ থেকে লম্বা লম্বা বাঁশঝাড় ছায়াও দিয়ে রাখে।
গাজীপুরের শ্রীপুরের উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে সবচেয়ে বড় বাঁশের হাট বসে। এ হাটে বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাঁশ কিনতে আসেন। প্রতি মাসে এখান থেকে প্রায় দেড়—পৌনে দুই কোটি টাকার বাঁশ কেনা—বেচা হয়।
জানা গেছে, গাজীপুরের বিভিন্ন অঞ্চলের মাটি বাঁশ চাষের জন্য বেশ উপযোগী হওয়ায় এখানে দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন ধরনের বাঁশের চাষ হয়। বাঁশ লাগানো ও পরিচর্যায় তেমন কোনো খরচ নেই বললেই চলে। একবার বাঁশের চারা লাগালে চার থেকে পাঁচ বছর পর তা থেকে বাঁশ কাটা যায়। প্রতিটি মাঝারি ঝাড় থেকে বছরে ৫০/৭০টি বাঁশ পাওয়া যায়।
শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে প্রায় ১০ বিঘা জায়গায় বসে এই হাট। এছাড়াওর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের নান্দিয়া সাঙ্গুন শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে এখানে হাটবার ছাড়াও প্রতিদিনই চলে বাঁশ কেনা—বেচা। কেউ কিনতে ব্যস্ত, কেউ ট্রলারে সাজাতে ব্যস্ত, কেউবা আঁটি বেঁধে নদীতে ভাসাতে কাজ করছেন। প্রতিদিন ভোর থেকে উপজেলা বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের/জাতের বাঁশ। এছাড়া বাঁশ পরিবহনের সবচেয়ে জনপ্রিয় বাহন হলো নদীতে ভেলা বানিয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া। ঘর তৈরি, পানের বরজ, সবজি চাষের মাচা, মাছ ধরার সরঞ্জাম, বাঁশের তৈরি নানা ধরনের আসবাব থেকে শুরু করে আধুনিক ডেকোরেটরদের বিভিন্ন কাজে বাঁশের ব্যবহার হয়। ফলে, এসব অঞ্চলে খুবই জনপ্রিয় হওয়ায় ব্যাপারিরা এখান থেকে বাঁশ কিনে নিজেদের হাটে বিক্রি করে আবার ফিরে আসেন বাঁশ কিনতে। এখানে বাঁশের দাম নাগালের মধ্যে থাকায় ক্রেতারা খুশি।
উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের ও কাওরাইদ নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামের বেকারদের জন্য করে দিয়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। কাওরাইদ নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামে বাঁশের কাজ করতে আসা শ্রমিক মোফাজ্জল হোসেন বলেন,প্রতিদিন বাঁশের কাজ করে আয় করেন ৭শ থেকে ৮শ টাকা এই দিয়ে তার সংসার ভালো করেই চলতে পারে।
শ্রীপুর উপজেলার পাইকাড় গ্রামের ইসলাম উদ্দিন বলেন, আমি প্রায় ৩৫ বছর যাবত এই বাঁশের ব্যবসা করে আসছি। অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বাঁশের হাট। আকার ভেদে প্রতিটি বাঁশ দেড়শ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা পর্যন্ত পাইকারি বেচা—কেনা হয়। প্রতি মাসে এখান থেকে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকার বাঁশ বিক্রি হয়।
নরসিংদী থেকে আসা পাইকার আশরাফ আলী বলেন, গোসিংগা হাট থেকে প্রতি বুধবার ৫০ থেকে ১ লাখ টাকার বাঁশ কিনি। নরসিংদী নিজের আড়ৎ রয়েছে, সেখানে নিয়ে বিক্রি করি। প্রতি হাটে কমপক্ষে ২৫ লাখেরও বেশি টাকার বাঁশ কেনা—বেচা হয় এ হাটে। মাসে প্রায় ১ কোটি টাকার বাঁশ কেনা—বেচা হয় বলেও জানান তিনি।
একুশে সংবাদ/টি.আই.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :