উত্তরের জেলা লালমনিরহাটে হঠাৎ করে শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় নবজাতক ও শিশুরা ঠান্ডাজনিত নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসাপাতালের আউটডোরে চিকিসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা পূর্বের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এদের অধিকাংশরাই শিশু। শুধু আউটডোরেই নয় শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে প্রায় তিনগুণ।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডটি ১০ শয্যার হলেও বর্তমানে ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৬ জন শিশু রোগী। আর হঠাৎ ঠান্ডার প্রকোপ বাড়ায় একদিনেই ভর্তি হয়েছে ১১ জন শিশু রোগী। রবিবার(৩১ ডিসেম্বর) লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ও আউটডোর ঘুরে দেখা গেছে এমন পরিস্থিতি।হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক নবজাতক ও শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে। এসব শিশুর মধ্যে কেউ কেউ সর্দি কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর অনেকে সুস্থ হয়ে উঠলেও অনেক নবজাতকের গুরুতর অবস্থাও দেখা গেছে।
লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী সারপুুকুরের বাসিন্দা জেসমিন আক্তার তার ছেলে জুনায়েদকে ঠান্ডা জনিত রোগের কারণে ভর্তি করিয়েছেন। তিনি বলেন, ঠান্ডা তেমন হয়নি এবার। গত পরশু রাত থেকে ঠান্ডার প্রকোপ বেড়েছে। ঠান্ডা জনিত রোগের চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি করেয়েছি। কিন্তু হাসপাতালে রোগী বেশি থাকায় ছেলের জন্য বেড মেলেনি তাই মেঝেতেই বিছানা পেতে আছি। লালমনিরহাট শহরের পার্শ্ববর্তী সাকোয়ার বাসিন্দা পল্লবী রানী ছেলে পরম রায়কে নিয়ে বিছানা পেতেছেন হাসপাতালের মেঝেতে। তিনি বলেন, সকালে ছেলেকে নিয়ে এসেছি।কাঁপুনি দিয়ে উঠছে ছেলে। ভর্তির পরপরই একবার ডাক্তার এসে দেখে গেছে। বর্তমান শিশুটি একটু সুস্থ আছেন। শিশু ওয়ার্ডের বেডে শুয়ে থাকা ঠান্ডা জনিত রোগে ভর্তি হওয়া অন্যান্য শিশুর স্বজনরা জানান, সকাল থেকে বেশ কয়েকজন শিশু রোগী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে অনেকেই মেঝেতে বিছানা পেতেছেন। কুয়াশা কম থাকলে রাতের ঠান্ডার প্রকোপ বেড়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহেও ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা কম ছিলো। সময়ের সাথে সাথে রোগীর চাপ আউটডোর ও শিশু ওয়ার্ডে বাড়ছে।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার ডাঃ রেজওয়ানা হাফিজ বলেন, হঠাৎ করে শীত বেড়ে যাওয়ায় নবজাতক ও শিশুদের নানা ধরনের রোগ বেড়ে গেছে। আগের চেয়ে আউটডোরে রোগীর চাপ বাড়ছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ রোগী শিশু। অনেক শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হচ্ছে। তিনি বলেন, শীত বেড়ে যাওয়ায় শিশুদের সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, নিউমোনিয়া, রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া দেখা দিচ্ছে।
পরামর্শ হিসেবে এই চিকিৎসক বলেন, এই সময় নবজাতক ও শিশুদের মায়ের কাছাকাছি রাখতে হবে। ঘরের মেঝে স্যাঁতসেঁতে অবস্থায় রাখা যাবে না। শীতে তাদের কুসুম গরম পানি খাওয়াতে হবে। সুষম খাবারের পাশাপাশি তাদের ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। শিশুর ডায়রিয়া হলে ওরস্যালাইন খাওয়াতে হবে, স্যালাইনের পানি গরম করার পর ঠান্ডা করে খাওয়াতে হবে। শিশুদের
ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। এছাড়া শীতে শিশুদের বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। এতে তাদের নানা ধরনের রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :