দীর্ঘ সাড়ে ৯ মাস পর গত ১৫ ডিসেম্বর রাত থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ সার কারখানা চালু হলেও নির্ধারিত মাত্রায় গ্যাস না পাওয়ায় কাঙ্খিত মাত্রায় ইউরিয়া উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। উৎপাদনের মাঝপথেও কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে গ্যাসের চাপ কম থাকার কারণে। এতে বিভিন্ন মেশিনের কার্যক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার আশংকা রয়েছে। এসব বিষয় গ্যাস বিতরণকারি সংস্থা বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও সমাধান মিলছে না।
কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, এখন সারের পিক সিজন। সারা দেশে ইরি—বোরো উৎপাদনে সারের চাহিদা বেড়ে যাবে। তাই কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হলেও সার সারা দেশে কমান্ডভুক্ত ডিলারদের কাছে সার সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এদিকে গ্যাসের পাইপ লাইনে চাপ কিছুটা কম থাকায় এমনটি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন, গ্যাস বিতরণকারি বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, ওভারহোলিং ও গ্যাস সরবরাহ না থাকায় দীর্ঘ সাড়ে ৯ মাস (০১/০৩/২০২৩ থেকে ১৪/১২/২০২৩) বন্ধ ছিল আশুগঞ্জ সার কারখানা। গত ১৫ ডিসেম্বর রাত থেকে কারখানায় ইউরিয়া উৎপাদন শুরু হলেও গ্যাসের চাপ কম থাকায় কাঙ্খিত মাত্রায় ইউরিয়া উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারখানায় সার উৎপাদন এবং বিভিন্ন ইউনিট সঠিক ভাবে চালু করতে কমপক্ষে ৪০—৪২ বার চাপে (৫৮৮ থেকে ৬১৭ পিএসআই) দৈনিক ৪৮ থেকে ৫২ এমএমসিএফ গ্যাসের প্রয়োজন। সর্বনিম্ন ৩৮ বার হলে কোন রকমে সর্বনিম্ন লোডে কারখানা চালু ও ইউরিয়া উৎপাদন সম্ভব হয়। কিন্ত গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে এ চাপ সাড়ে ৩৬ বারের নিচে নেমে আসে। ফলে বার বার কারখানা বন্ধ হয়ে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
সূত্রমতে, ১৭ ডিসেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত কারখানায় গ্যাসের চাপের যে চিত্র পাওয়া গেছে তা হলো ১৭ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ ৪০ বার এবং সর্বনিম্ন ৩৭.২ বার, ১৮ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ ৩৯.৬ বার থেকে ৩৭.৫০ বার, ১৯ ডিসেম্বর ৩৯.৯ থেকে ৩৬.৫ ২০ বার, ২০ ডিসেম্বর ৩৮.৪০ থেকে ৩৬.৮০ বার, ২১ ডিসেম্বর ৪০ থেকে ৩৬.৫০ বার, ২২ ডিসেম্বর ৪৪.১০ থেকে ৪১বার, ২৩ ডিসেম্বর ৩৯.৫০ থেকে ৩৬.৫০ বার এবং ২৪ ডিসেম্বর ৪০ থেকে ৩৬.২০ বার। কারখানা সূত্রে জানায়, রাত ১০ টার পর থেকে গ্যাসের চাপ কিছুটা বাড়তে শুরু করে। তখন বার বার চেষ্টা করে কারখানা চালু করা হলেও আবার গ্যাসের চাপ কমতে শুরু করে এবং আবার কারখানা বন্ধ করতে হয়। এভাবে বার বার বন্ধ এবং চালু করায় একদিকে যেমন কারখানার উচ্চ ঘূর্ণায়মাণ মেশিনের কার্যক্ষমতা হ্রাস পাবার আশংকা রয়েছে , অন্যদিকে কাঙ্খিত মাত্রায় উৎপাদনও সম্ভব হচ্ছে না। কারখানা সূত্রের দাবি, স্বাভাবিক ভাবে কারখানা চালু থাকলে দৈনিক সর্বনিম্ন ১ হাজার থেকে সাড়ে ১১শ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন সম্ভব। ফলে গত ৯ দিনে কমপক্ষে ৯—১০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন হওয়ার কথা থাকলেও উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১৯৩১ মেটিক টন ইউরিয়া। কারখানা সূত্রের দাবি, সামনে ইরি—বোরো সিজন। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় সারের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। এভাবে কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হলে কারখানার কমান্ডভুক্ত ডিলারদের মাঝে সার সরবরাহে ব্যাঘাত তৈরি হবে। এসব বিষয় গ্যাস বিতরণকারি কর্তৃপক্ষ অবহিত করে গ্যাস চাপ বৃদ্ধির জন্য বলা হলেও কোন সমাধান হচ্ছে না। তবে বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণকারি কর্তৃপক্ষের দাবি, দেশে গ্যাসের উৎপাদন ও আমদানিকৃত এলএনজি কিছুটা কম থাকায় পাইপ লাইনে গ্যাসের চাপ কিছুটা কম। গ্যাস লাইনে চাপ বৃদ্ধি পেলে তা সমাধান হয়ে যাবে।
কারখানার সিবিএ এর সাধারণ সম্পাদক মো. কবীর হোসেন বলেন, কারখানা সঠিক নিয়মে চালু থাকলে দৈনিক ১ হাজার থেকে সাড়ে ১১শ’ টন ইউরিয়া উৎপাদন হয়। গ্যাসের চাপ কম থাকায় কাংখিত মাত্রায় উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া চাপ কম থাকায় চালুকৃত কারখানা মাঝে মধ্যে বন্ধ করতে হচ্ছে। এতে মেশিনের কার্যক্ষমতা হ্রাস পাবার আশংকা রয়েছে। তিনি সারের পিক সিজনে কারখানায় গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার দাবি জানান।
কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সুনীল চন্দ্র দাস জানান, গ্যাসের চাপ কম থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং বিষয়টি বিতরণকারি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে । বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন লি. লিমিটেডের ডিজিএম (সঞ্চালন) প্রকৌশলী মো. জাহিদুর রেজা বলেন, গ্যাসের জাতীয় গ্রীডে বা পাইপ লাইনে গ্যাসের সরবরাহ কিছুটা কম, ফলে গ্যাসের চাপও কম।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :