পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও থেমে থেমে চলছে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় পদ্মা নদীতে যানবাহনসহ ডুবে যাওয়া ফেরি রজনীগন্ধা উদ্ধার কাজ। এ ছাড়া এখনও সন্ধান মেলেনি নিখোঁজ ফেরির সহকাররী ইঞ্জিন মাস্টার হুমায়ন কবিরের।
গত দুদিনে উদ্ধারকারী তিনটি জাহাজ মিলে আরও একটি পণ্যবাহী ট্রাক উদ্ধার করেছে। এনিয়ে ডুবে যাওয়া ৯টি যানবাহনের মধ্যে ৪টি যানবাহন উদ্ধার করা হলো। কিন্তু হুমায়ন কোথায়, এ প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে ছোট-বড় ৯টি পণ্যবাহী যানবাহন (ট্রাক) নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে পাটুরিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে আসে ফেরি রজনীগন্ধা। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে পাটুরিয়া ৫ নম্বর ঘাটের অদূরে রাতে নোঙর করে রাখা হয় এই ফেরি।
এরপর বুধবার ভোর ৪টার দিকে ফেরিতে পানি উঠতে শুরু করে, সকাল ৮টার দিকে কাত হয়ে এবং ৯টি যানবাহন ও ২১জনকে নিয়ে ধীরে ধীরে ফেরিটি উল্টে যায়। ফেরিতে থাকা ২০জন ব্যক্তি পাড়ে ওঠতে পারলেও ফেরির সহকারী ইঞ্জিন মাস্টার হুমায়ন কবির নিখোঁজ হন।
বাংলাদেশ অভ্যান্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা যায়, যানবাহন নিয়ে ডুবে যাওয়া ফেরি রজনীগন্ধার স্বাভাবিক ওজন ছিল ২৫০ টন। কিন্তু ফেরিটি ডুবে যাওয়ার ফলে ওজন বেড়েছে এবং ফেরিতে প্রচুর বালি মাটি পড়েছে। এতে ফেরির ওজন প্রায় সাড়ে ৩০০ টনের মতো হয়ে গেছে। ফেরি যত বেশি ডুবে থাকবে তত বেশি ওজন বাড়বে। কিন্তু উদ্ধারকারী জাহাজ হামজার ওজন ৫০ টন, রুস্তমের ওজন ৬০ টন এবং উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ের ওজন ২৫০ টন।
বাংলাদেশ অভ্যান্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ জানান, ডুবে যাওয়া ৯টি যানবাহনের মধ্যে গত পাঁচদিনে ৪টি পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও দুটি ট্রাকের সন্ধান পাওয়া গেছে। ফেরি উদ্ধারের জন্য সবার আগে ডুবে যাওয়া যানবাহন উদ্ধার করা হচ্ছে। যানবাহন উদ্ধার করা হলে ফেরিটি উদ্ধার করা সহজ হবে।
তিনি বলেন, ডুবে যাওয়া যানবাহনের সন্ধান পেতে উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করতে ঝিনাই নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ এসে কাজ শুরু করেছে। কারণ নদীর পানি বেশি হওয়ায় ডুবে যাওয়া যানবাহনের সঠিক লোকেশন ট্র্যাক করা সম্ভব ছিল না। এ কারণে উদ্ধার কাজে সহায়তার জন্য ঝিনাই যোগ দিয়েছে। উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েই একটি ট্রাক উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে এবং আরও দুটি ট্রাকের সন্ধান পাওয়া গেছে। এরপর ফেরি উদ্ধার কাজ করা হবে।
খালেদ নেওয়াজ আরও বলেন, আমরা আশাবাদী, যানবাহন উদ্ধার শেষ হলে উদ্ধারকারী এসব জাহাজ ফেরিটিকে সোজা করবে। তারপর ফেরিটিকে পাড়ে নিয়ে আসা হবে। যদি ফেরিটির তলায় ফুটো বা তলা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে নদীতে ফেরি উল্টো করে, নদীতেই ফেরিটি মেরামত করা হবে। ফেরিটি যেহেতু নদীর পাড়ে ওঠাতে হবে না। এ কারণে আমাদের উদ্ধারকারী জাহাজগুলোই ফেরির জন্য যথেষ্ট।
বাংলাদেশ অভ্যান্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ-সংরক্ষণ পরিচালক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক এসএম আকবর আলী বলেন, উদ্ধার কাজে ঝিনাই যোগ হওয়ার পর আমাদের উদ্ধার কাজ সহজ হয়েছে। কারণ নদীতে পানি বেশি হওয়ায় ডুবুরি দল ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের যানবাহনের সন্ধান পেতে কষ্ট হয়েছে। ডুবে যাওয়া যানবাহন উদ্ধার করতে সময় বেশি লাগছে। তবে এখন উদ্ধার কাজে বেশি সময় লাগবে না। আশা করা যাচ্ছে, খুব তাড়াতাড়ি যানবাহন উদ্ধার করতে পারব এবং ডুবে যাওয়া ফেরিটিও নদীর পাড়ে ভাসাতে পারব।
এদিকে নৌবাহিনীর ডুবুরি দলের প্রধান লেফটেন্যান্ট শাহ পরান ইমন জানান, উদ্ধার কাজে নৌবাহিনীর ডুবুরি দলের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি ও বিআইডব্লিউটিএর অর্ধশতাধিক ডুবুরি সদস্য কাজ করছেন। ফেরি ও যানবাহন উদ্ধার করতে ফেরির একপাশে বড় বড় ওয়্যার রোপ দিয়ে উদ্ধারকারী প্রত্যয়ের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এখন ফেরিটি কাত করে আরেক পাশে ওয়্যার রোপ যুক্ত করতে পারলে ফেরিটি ভাসানো সম্ভব।
তিনি জানান, কিন্তু প্রচণ্ড শীতের কারণে ডুবুরিরা পানিতে বেশিক্ষণ থাকতে পারছেন না। ঝুঁকি নিয়ে এই প্রচণ্ড শীতের ডুবুরি সদস্যদের কাজ করতে হচ্ছে। এ ছাড়াও নিখোঁজ ফেরির সহকারী ইঞ্জিন মাস্টার হুমায়ন কবিরের সন্ধানেও কাজ চলছে।
জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার বলেন, ফেরি ডুবির ঘটনায় তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এখনো হাতে পাইনি। তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বললো এবং তদন্ত প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
একুশে সংবাদ/ন.ব.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :