নরসিংদীর রায়পুরায় ডাচ্ বাংলা ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার কার্যক্রম বন্ধ করে তালাবদ্ধ করে গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে উদ্যােক্তা উধাও হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ডাচ্ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড এর উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম লিটন উপর উঠছে এমন অভিযোগ। প্রায় ১০ কোটির বেশি টাকা নিয়ে তিনি এখন পলাতক রয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
জানা গেছে, এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার পরিচালক শহিদুল ইসলাম লিটন। তিনি উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি এ ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন।
সোমবার (২২ জানুয়ারী) উপজেলার মহেষপুর ইউনিয়নের আলগী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সততা এন্টারপ্রাইজ নামে এই ব্যাংকের কার্যালয় তালাবদ্ধ। তালাবদ্ধের খবর পেয়ে রোববার থেকেই ওই শাখার ভুক্তভোগীরা ভিড় করেন।
ভুক্তভোগীরা অন্য অন্য শাখায় অনলাইনে নিজের হিসাবে টাকা দেখতে না পেয়ে, কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। এসময় এজেন্ট ব্যাংকিং ইনচার্জ ও অন্যান্য কর্মচারীদের কাছে নিজেদের জমা রাখা টাকা দাবি করেন গ্রাহকেরা।
ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা জানান, ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের সুনাম থাকায় বিশ্বস্ত হিসেবে অনেকেই এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছিলেন। তাদেরকে শাখা থেকে জমা রশিদও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকের উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম লিটন হাজার হাজার গ্রাহকদের না জানিয়ে সুকৌশলে ওই টাকা মূল শাখায় জমা না দিয়ে নিজের একাউন্টে অন্তত ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে রোববার শাখাটি তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায়।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রতারক সেই উদ্যোক্তার নামে সাধারণ ডায়েরি ও আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এমনটাই জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
মহেষপুর ইউনিয়নের বেগমাবাদ হুগলাকান্দি গ্রামের লিপি বেগম নামের এক নারী গ্রাহক বলেন, ‘১৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা রেখেছিলাম ব্যাংকে। হঠাৎ শুনি ব্যাংকের লোকেরা টাকা নিয়ে পালিয়েছে। এখানে এসে ব্যাংক তালাবদ্ধ দেখছি। স্বামী বিদেশে কষ্ট করে পাঠানো জমানো টাকা রাখতাম। ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ মনে করে সর্বত্র টাকা জমা করেছিলাম। আমি এখন কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। টাকা ফেরত চাই।`
চাঁনপুর ইউনিয়নের মাঝেরচর এলাকার হিরন মিয়া নামের আরেক গ্রাহক বলেন, ‘৭লাখ টাকা ডিপোজিট করেছিলাম। চলতি হিসাবে ৫০ হাজারের মতো ছিল। এমন প্রতারণা মেনে নেওয়া যায়না। আমারসহ গ্রাহকের টাকা উদ্ধারে যথাযথ ব্যাবস্থা চাই।`
ভুক্তভোগী শংকর লাল দাস বলেন,`গরু বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা রেখেছিলাম`। `কোথায় গেলে আমার টাকা পাবো`? এই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন তিনি।
ভুক্তভোগী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, `এই ব্যাংকে ৪০ লাখ টাকা রেখে ছিলাম। এখন শুনি টাকা সহ সেই কর্মকর্তা লাপাত্তা। কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। তাকে গ্রেপ্তারসহ আমাদের টাকা ফেরত চাই।`
এ ব্যাপারে নরসিংদীর ভেলানগর ডাচ্ বাংলা ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপক মাকসুদ হাসান জানান,`এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম প্রধান অফিস নিয়ন্ত্রণ করে। ইতিমধ্যে প্রদান অফিস ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হয়েছে। আইনগত পদক্ষেপ চলমান আছে বলে শুনেছি।`
রায়পুরা থানার পরিদর্শক তদন্ত মীর মাহবুব বলেন, এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে ছায়া তদন্তে নেমেছে পুলিশ। প্রতারক চক্রটি বেশ বড় অংকের টাকা নিয়ে পালিয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোজলিন শহিদ চৌধুরী বলেন, `বিষয়টির কথা শুনেছি। ভুক্তভোগীদের সর্বাত্মক সহযোগিতায় আমাদের কাজ। অভিযোগ পেলে ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের লোকদের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করবো।`
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :