শিক্ষা অফিসারকে শোকজ, অফিসে দুদকের অভিযানের পরেও রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের বন্ধ হয়নি অনিয়ম, দুর্নীতি। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দুলাল আলম ও অফিস সহকারি আনোয়ার হোসেনের ঘুষবাণিজ্য অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে গোদাগাড়ীর শিক্ষক সমাজ। তাদের ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন কেউ। শুধু তার অফিসে নয়, শিক্ষাভবনের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি করারও অভিযোগ রয়েছে এ শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
এবছর জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে শিক্ষা কর্মকতা দুলাল আলম দুর্নীতিবাজ হয়েও জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপপরিচালক রাজশাহী অঞ্চলিক অফিস ম্যানেজ করে রাজশাহী জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার নির্বাচিত হয়েছেন। অথচ জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহের অর্থ লুটপাট করায় এ শিক্ষা কর্মকর্তা এখনও ২৫ টি ইভেন্টে ক্রেস্ট দেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানে আলম, সঞ্জয় কুমার মাহাত নাখোশ ছিলেন।
শীতকালীন খেলাধুলার জন্য শতাধিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা হতে ১ হাজার টাকা করে লক্ষাধিক টাকা ক্রীড়া ফি আদায় করেছেন অফিস সহকারী আনোয়ার হোসেন। তিনি নিন্মমানের প্রাইজ কিনে নামমাত্র স্ট্রেজ তৈরী করে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান করে যেনতেনভাবে শেষ করেছেন। ব্যাপকহারে টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।
সরকারি নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নতুন শিক্ষা কারিকুলামের প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষনার্থীদের প্রাপ্য সম্মানী ও ভাতা ব্যাংক হিসেব নম্বরে না দিয়ে উপজেলার আফজি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সকল শিক্ষকদের ডেকে নগদ প্রদান করেছেন এবং ৪৫০ টাকা জোর করে কর্তন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এজন্য তাকে শোকজ করেন জেলা শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দীন।
গত ০৮/০৭/২০১৯ ইং সালে গোদাগাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগদান করেছেন মো. দুলাল আলম। গোদাগাড়ীতে সরকারী নিয়মনীতি ভঙ্গ করে, আওয়ামীলীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সুসম্পর্ক রেখে বীরদাপটে চালিয়ে যাচ্ছে নিয়োগে ঘুষ বানিজ্য। সরকারি বিধিমোতাবেক এক উপজেলায় ৩ বছরের বেশী সময় ধরে কোন কর্মকর্তা, কর্মচারী থাকার নিয়ম না থাকলেও দুলাল আলমের ক্ষেত্রে রহস্যজনকভাবে সেটা মানা হচ্ছে না।
তার অনিয়ম দুর্নীতির খবর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও সাংবাদিকদের কটাক্ষ করে বলে এসব সাংবাদিক আমার বিরুদ্ধে লিখে কিছুই করতে পারবে না। শিক্ষা ভবন আমার কেনা আছে।
শিক্ষা অফিসারের বিশ্বস্ত আনোয়ার হোসেন এখনও শূন্য পদে প্রত্যয়নের জন্য ৫ হাজার টাকা, টিউশনফির প্রত্যয়নের জন্য ২-৪ হাজার টাকা, শিক্ষক কর্মচারীদের মাসিক বিলে কথিত স্বাক্ষর করার জন্য ২০০-৩০০ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
শিক্ষা অফিসার দুলাল আলম ও অফিস সহকারি আনোয়ার নিয়মিত অফিসে না আসা, জাতীয় দিবস পালনে উপস্থিত না থাকা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও শিক্ষকরা অফিসে না পেয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ আছে শিক্ষা কর্মকর্তা ও অফিস সহকারির বিরুদ্ধে।
নতুনপাঠ্য বইয়ের পরিবহন খরচ বাবদ লক্ষাধিক টাকা আসলেও কোন স্কুলকে টাকা না দিয়ে স্বাক্ষর করে নিচ্ছেন, কেউ স্বাক্ষর দিতে অস্বীকার করলেও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দুলাল আলমের নাম করে হুমর্কী দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
অফিসের এমএলএস আবুল হোসেনের নামে নতুন বই প্রদানের জন্য ১৫ হাজার টাকা বরাদ্ধ আসলেও তাকে নাম মাত্র ৩ হাজার টাকা দিয়ে বাকী টাকা আনোয়ার আত্নসাৎ করেছেন।
রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলীম রেজা বলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দুলাম আলম আমার নাম্বারে মোবাইল করে শিক্ষা ভবনের সহকারী পরিচালক কলেজ- ৩ তপন কুমার নাম করে একটি মোবাইল (০১৯৭২০২৩৩৪৫) নম্বর দিয়ে কথা বলতে বলেন, কলেজের সমস্যার সমাধানের জন্য জরুরীভাবে কথা বলতে হবে। তিনি কথা বললে ৫ জন অধ্যাপক কে ওই নম্বরে দ্রুত কথা বলতে বলা হয়। অধ্যক্ষ সেলীম রেজা তাদেরকে ম্যাসেজ দেন এই ভাবে মো: সাদিকুল ইসলাম, (আরবী ) আপনি সহকারী পরিচালক কলেজ- ৩ শিক্ষা ভবন, তপন কুমার দাস, স্যারের সাথে জরুরী ভিত্তিতে কথা বলেন, মোবাইল নাম্বার :০১৯৭২০২৩৩৪৫ অধ্যক্ষ, সাহেব মো: শাহিন আক্তার, প্রভাষক সংগীত, এস এম নাজমুস সাদাত, ইন্সপেক্টর, প্রকৌশল অঙ্কন ও ওয়ার্কশপ প্রাকটিস আহাদুজ্জামান নাজিম, প্রভাষক উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন, মো: সেরাজুল ইসলাম জ্যেষ্ঠ প্রভাষক, পদার্থবিজ্ঞান তারা কথা বললে প্রত্যেকের নিকট নগদ নাম্বরে চাকুরী বাঁচাতে ৫ জনের ৫০ হাজার করে টাকা পাঠাতে বলেন এবং অধ্যক্ষকে ৩০ হাজার করে টাকা পাঠাতে বলেন তপন কুমার দাস সেজে। অধ্যক্ষ বলেন, এখন টাকা নেই, ২ দিন পর অফিসে গিয়ে দিব।
এভাবে শিক্ষা অফিসার দুলাল আলম শিক্ষা ভবন পর্যন্ত শিক্ষকদের সাথে প্রতারণার জাল বপন করেছেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দুলাল আলমের সাথে মোবাইল ফোনে বারবার কলে করেও রিসিভ করেননি। এাছাড়াও হোয়াটসআ্যপ ও ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :